বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ মুসলমান এবং এদের অধিকাংশ দারিদ্র সীমার নিচে হওয়ায় এদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা তথা আবাসিক মাদ্রাসার সংখ্যা দিন দিন লক্ষণীয় হারে বাড়ছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমান শ্রমবাজারে মূল্যহীন হলেও মানুষের বিশ্বাস, হুজুরদের প্রতি অগাদ শ্রদ্ধা ও ধর্মভয়ের উপর ভিত্তি করে দেশের আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে অসংখ্য মাদ্রাসা। আর এই বিশ্বাস আর শ্রদ্ধার আড়ালে প্রতিনিয়ত কিছু অনৈতিক কাজ ঘটে যাচ্ছে যা ‘মুসলিম’ সমাজ অদেখা করে যাচ্ছে। শিক্ষার আড়ালে মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর হুজুরদের যৌন নির্যাতন একইসাথে ভিন্নমতের ও সমকামী মানুষদের প্রতি হিংস্রতম হিংসার বীজ বপন করে যাচ্ছেন হুজুরেরা- অথচ সমাজ এ ব্যাপারে নীরব।
বাংলাদেশে অধিকাংশ মাদ্রাসা আবাসিক, যেগুলো আবার মানুষের দানের টাকায় পরিচালিত হয় এবং এর প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন পরিবারের সন্তান। মুলত ভরনপোষণ করতে না পারা পরিবার তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেয়, একই সাথে বিনা কিংবা অল্প খরচে সন্তানের ধর্ম শিক্ষা ও কাংখিত ‘জান্নাত’ নিশ্চিত করে ফেলা থাকে মা বাবার মূল উদ্দেশ্য। যার ফলে মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর তার পরিবারের তুলনায় মাদ্রাসার হুজুরদের কর্তৃত্ব থাকে বেশি। আর মাদ্রাসা ছাত্রদের এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে হুজুরেরা দীর্ঘদিন ধরে কোমলমতি ছাত্রদের উপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন চালিয়ে যায়। বয়স, বোধ এবং জ্ঞানের অজ্ঞতার জন্যে অনেকাংশে এসব নির্যাতন চলমান অবস্থায় নির্যাতিত ছাত্র নিজে তা বুঝতে পারে না তার সাথে কি হচ্ছে, যা একটি চলমান প্রকৃয়া। আর এসব নির্যাতনের অধিকাংশ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় সমাধান করে দেয়া হয় যেখানে নিয়ামক হিসাবে কাজ করে, প্রমাণের অভাব, ধর্মীয় গোঁড়ামি আর মাদ্রাসার কঠোর নিয়ন্ত্রণ। এর ফাঁকফোকরে খুব অল্প সং্খ্যক অভিযোগ সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ পেলেও তা ধর্মীয় সংগঠন আর স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির তোপের মুখে হারিয়ে যায়। ফলে মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতন কোন বিচারিক কার্যগতি দেখতে পায় না এবং হুজুরেরা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে তাদের যৌন আকাঙ্খা মিটিয়ে যায়।
আর যদিও কোন মাদ্রাসা ছাত্রের উপর যৌন নির্যাতনের খবর প্রকাশ্যে আসে তখন একযোগে সারাদেশে হুজুরদের ওয়াজের টপিক হয়ে যায় ভিন্নমতের মানুষেরা। তারা বিভিন্ন ভাবে অযথাই আলোচনায় নিয়ে আসবে নাস্তিক ও সমকামীদের বিষয়। তারা ওয়াজের মাইকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রচার করবে কিভাবে সমকামীতা আজকের সমাজ ধংসের কারণ এবং নাস্তিকরা যেহেতু তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এজন্যে তাদের ইসলামের শত্রু বলে প্রচার চালিয়ে যায়। আর এসব বক্তব্য অবধারিতভাবে প্রচার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। হুজুরেরা তাদের নিজেদের দোষ ঢাকতে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে নাস্তিক ও সমকামীদের। যেন সমকামিতা এক অপরাধ – অথচ সমাজে একজন ধার্মিকের যেমন ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে একইভাবে একজন নাস্তিকের রয়েছে ধর্ম না মানার সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা, রয়েছে একজন সমকামীর তার ভালোবাসার মানুষ খোঁজে নেয়ার স্বাধীনতা। কিন্তু হুজুরেরা এ সহজ সত্য মেনে নিতে নারাজ, একজন সমকামী ব্যক্তি তার স্বাভাবিক যৌন পরিচয় প্রাকাশ করতে গেলেই তার উপর হুজুরদের ভিন্ন অপবাদ নেমে আসে, প্রকাশ্যে তাদের জাহান্নামি ঘোষণা করে দেয়া হয় এবং তাদের হত্য করতে পর্যন্ত মানুষকে উৎসাহ দেয়া হয়।
বাংলাদেশে একজন সমকামী মাত্রই তার জীবন হবে অগোচরে, পরিবার-পরিজন, আর সমাজ থেকে তার পরিচয় লুকিয়ে রাখতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলেই তার জীবনে নেমে আসবে অভিশাপ, যেখানে প্রতিমুহূর্তে থাকবে মৃত্যুভয়। কারণ হুজুর বলেছেন সমকামী মাত্রই ‘জাহান্নামি’ ‘জাহান্নামি’ ‘জাহান্নামি’। আর এই মৃত্যুভয় অনেকসময় আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয় একজন সমকামী মানুষকে।