ফাইন্যান্সিয়ালি ইন্ডিপেনডেন্ট হওয়ার পথটা একেবারে সহজ না। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য এটা অনেক বেশি টাফ। যেখানে বাবা মা মেয়েদের বয়স ১৬ হবার আগেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন সেখানে কতোটা যুদ্ধ করে মেয়েদের বিয়ের ঝামেলা এড়িয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে হয় তা আর না বললেই নয়।
ছেলেদের যেখানে বাবা মায়েরা পড়াশুনা শেষ হবার আগে কোনভাবেই বিয়ের কথা ভাবেন না সেখানে মেয়েদের বয়স কুড়ি হবার আগেই বিয়ে নামক শেকলে পা ফেলতে বাধ্য করা হয়। মেয়েদের নিজেদের বাড়ি বলতে যেন কিছু নেই জন্মের পর বাপের বাড়ি আর বিয়ের পর জামাইয়ের বাড়ি। আর এর মাঝখানে? না কিছু নেই। আর তাই কিছু মেয়ে যখন নিজের পায়ে দাড়াতে চায়, সুশিক্ষিত হয়ে ক্যারিয়ারে কিছু করতে চায়, ফাইন্যান্সিয়ালি ইন্ডিপেন্ডেন্ট হতে চায় তখুনি হয় সমস্যা। আমাদের দেশে একটা মেয়ে সন্তান জন্ম নিলেই বাবা মায়ের মুখ কালো হয়ে যায়। এই মেয়েটা জন্মাবার পরই যা দেখে তা হলো তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই, নিজের রুম খুব কম মেয়েই পেয়ে থাকে। যেখানে ছেলেদের রুম বাবা মায়েরা খুব কম বয়সেই আলাদা করে দেয় সেখানে মেয়ের জন্য আলাদা রুম অনেকটা বিলাসিতা লাগে বাবা মায়ের কাছে। মেয়েদের নিজের রুম লাগবেই বা কেন? বিয়ের পর জামাইয়ের রুমই তো তার রুম তাই না? কোন প্রাইভেসি বলতে কিছু থাকা চলবে না এই মেয়েদের।
মেয়েদের আবার নিজস্ব চিন্তা , মতামত, আদর্শ , অনুভূতি থাকতে পারে এটা যেন ভাবাও পাপ। মেয়েদের হতে হবে ফরসা , সুন্দরি ,ছিপছিপে তবেই না বাজারে এর দাম মিলবে ভালো জামাই মিলবে। জামাই হোক না খাটো, মোটা, টাক কিংবা কোন খুত নিয়ে। মেয়ে হতে হবে একদম নিখুত। চাকুরিজীবি মেয়েদের নিয়েও সমস্যা। বিয়ের পর অনেক ছেলের পরিবারই চায় বা তাদের পুত্রবধু চাকরি করুক, টাকা কামাক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট হোক। আবার কিছু ছেলের পরিবার চায় চাকুরী করুক আর মাসের পুরো বেতনটা তাদের হাতে তুলে দিক। মানে ফাইন্যান্সিয়ালি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কখনই হতে দেয়া যাবে না মেয়েদের না হলে নষ্ট হয়ে যাবে না?
এছাড়া মেয়ে যদি হয় শিক্ষিত ও চাকুরিজীবি তাহলে তো তাকে ওভাবে শোষণও করা যাবে না। মেয়ে যে তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাকে তো তখন চুপ করিয়ে রাখা যাবে না। ডিভোর্স দিয়ে দেয় যদি? হাস্যকর হলেও বর্তমানে শিক্ষিত মেয়েরা ডিভোর্স এর সিদ্ধান্তে এলে তাদেরকে এটাই বলা হয় যে বেশি শিক্ষিত হয়ে গেছো না? চাকরী করে টাকার মুখ দেখছো না?
ফাইন্যান্সিয়ালি ইন্ডিপেনডেন্ট নারীরা মুখ বুঝে এবিউজিভ রিলেশনশিপে থাকতে চায় না কারন তারা জানে তাদের মুল্য ও তাদের অধিকার। আর এই নষ্ট সমাজে তাদের অধিকার তাদের নিজেরই আদায় করে নিতে হবে আর তাই তারা এখন আর আগের মতো অসুস্থ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায় না। তাই যারা চিন্তা করেন মেয়ে শিক্ষিত ও ফাইন্যান্সিয়ালি স্টেবল হলেই ডিভোর্স দিয়ে দিবে জামাইকে তারা ভুল। তারা কনফিডেন্ট আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয়।