নারীর বুকের দুধের মিল্কব্যাংক

বিজ্ঞানের শত্রু ধর্ম, দুজন দুজনের সাথে আস্থে পৃষ্ঠে জরিয়ে আছে। এইটা বাঙ্গালি জাতি খুব ভালকরেই বোঝে। প্রগতিশীলতার নামে অনেক কিছুই করতে চায় তারা কিন্তু যখনই তাঁদের কোন কিছু পছন্দ হয় না সেখানেই ধর্মের একটা বাহানা বানাইয়া তার ওপর চলে সাঁড়াশি অভিযান। তখন সকলেই ধর্মের বিরাট বিরাট আলেম হইয়া বয়ান ছাড়া শুরু করে। কোন কোথা হেন তেন কত অজুহাত। এর কারণ কি ? বিষয়টা তার পছন্দসই হয় নাই তাই।

বেশ কয়েকদিন হলো একটা নিউজ খুব চোখে পড়ছে, তাহলো হিউম্যান ব্রেস্ট মিল্ক ব্যাংক। এই ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হলো যেসকল নবজাতক শিশু জন্মের পর তার মায়ের বুকের দুধ খেতে না পারে তাদের জন্য এই বিকল্প উদ্যোগ নেয়া। কোনো নবজাতক যেনো জন্মের পরপরই বিশেষ করে ছয় মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং পিরিয়ডে কোনভাবেই বাজারে প্রাপ্য এন্টিবায়োটিকযুক্ত দুধ বা অন্য কোনো খাবার না খায় মূলত তার জন্যই এই উদ্যোগ।

যেসকল শিশুর মা জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান, কিংবা যাদের বাবা-মা নেই, বা মা কোনো কারণে বুকের দুধ খাওয়াতে অক্ষম সেই সকল শিশুর জন্য মিল্ক ব্যাংক খুব মহতী উদ্যোগ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগোপযোগী।

একজন শিশুর জন্য টানা ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ পান করা খুব জরুরি। এতে শিশুর বুদ্ধিমত্তার যে বিকাশ হয় তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শিশুর শারীরিক বিকাশ, স্বাস্থ্যগত বিকাশ, রোগবালাই সব থেকেই দূরে রাখে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ। একজন শিশুকে রোগ-প্রতিরোধী হিসেবে গড়ে তোলে মায়ের বুকের দুধ।

মায়ের বুকের দুধ পান করেনি এমন শিশু আর মায়ের দুধ খায় এমন শিশুর বুদ্ধিগত বিকাশ থেকে শুরু করে, শারীরিক, স্বাস্থ্যগত সবকিছুই আকাশপাতাল ব্যবধান। যা শিশু যখন বড় হতে শুরু করে তখন বোঝা যায়।

তাছাড়া তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিশুমৃত্যু এবং অপুষ্টি থেকে রক্ষার জন্য মূলত এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তৃতীয় বিশ্বের দেশে মাতৃমৃত্যু হার বেশি ফলে শিশু মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই সকল বিষয়কে মাথায় রেখে হিউম্যান ব্রেস্ট মিল্ক ব্যাংক একটা অসাধারণ এবং খুব শিশুবান্ধব একটা উদ্যোগ। যা এসডিজি এর লক্ষ্য পূরণেও সহায়তা করবে।

কিন্তু একশ্রেণীর জনগোষ্ঠী ধর্মের দোহাই দিয়ে এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাইকোর্টে রিটও করেছে।

আমি খুব ছোট এবং স্বল্প জানাশোনার মানুষ। আমি শুধু জানি মানুষের জীবন আগে তারপর ধর্মকর্মসহ যা কিছু সব। আমি বিশ্বাস করি সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। আর তাই একজন শিশুর জীবন সবার আগে। তার বেঁচে থাকা এবং সুস্থভাবে বেটে উঠাটাই সবার আগে।

ছোটবেলায় দেখতাম মায়ের বুকের দুধ না পেলে খালার বুকের দুধ পান করানো হতো শিশুকে। তাহলে কেন শিশুরা অন্য কোনো মায়ের দুধ খেতে পারবে না। নিউজে দেখলাম, তারা এমন কারো দুধ যদি পান করে পরবর্তীতে তাদের সম্পর্কিত কারো সাথে যদি বিয়ে হয় কিংবা সেক্স হয় তাহলে সেটা অবৈধ হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো একজন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, তার মা মারা গেছে কিংবা মা আইসিইউতে খুব অসুস্থ, ঐ শিশুকে দুধ খাওয়াতে হবে, খাওয়ানো সম্ভব না হলে সে মারা যাবে, তখন কি আপনি ভাববেন এইটা কোন মায়ের দুধ, শিশুটি বড় হয়ে ঐ মায়ের মেয়ে/ছেলেকে বিয়ে করবে কিনা ব্লা ব্লা? নাকি তার মুখে দু’ফোঁটা দুধ দিয়ে তার জীবন বাঁচাবেন?

আমি ভাই জীবন বাঁচাবো, কারণ জীবন বাঁচানো ফরয।

আমি অবশ্যই ভাববো না বড় হয়ে আমার ছেলে বা মেয়ে কাকে বিয়ে করতে পারবে কি পারবে না, তা বৈধ নাকি অবৈধ!

আরে আবাল জাতি এতো যদি ভাবেন তাহলে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় কেন নিউজ পাই যে বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, মাদ্রাসার শিক্ষক তার ছাত্রকে বলাতকার করেছে, ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে! এগুলো বুঝি জায়েজ! এতে আপনাদের ঈমান যায় না!

আপনারা তো এগুলো নিয়া আন্দোলন করেন না! এগুলো বন্ধে হাইকোর্টে রিট করেন না!

কিন্তু সদ্যভূমিষ্ট নবজাতক শিশু যার পৃথিবীর কোন জ্ঞান নাই, সে জানে না এই পৃথিবীর হানাহানি, শ্রেণিভেদ, ধর্ম, তারেই আপনারা আপনাদের লালসার বলি দিয়ে সুন্দর পথ চলায় বাধা সৃষ্টি করে দিলেন। জানিয়ে দিলেন আমরা জাতি হিসেবে কত নিকৃষ্ট! কত অমানবিক!

সাবাশ আপনাদের! আপনারা পারেনও বটে!

তাইলে বলেন যারা এইসকল বিষয় নিয়া এত তোরজোড় শুরু করলেন, আপনাদের জীবন বাঁচানো জরুরি মনে হয় না। কিন্তু যদি বিয়ে হয়ে যায় মানে বিয়া আপ্নাদেরজন্ন এতটাই জরুরি জীবন বাছান থাইকা? কয়ে কবে কাড়ে বিয়ে করলো কার সাথে কার কি সম্পর্ক দাঁড়াইল এইসঘব আজাইরা কোথাই মুল কোথা হইয়া দ্বারায়। কারণ ধর্মই আমাগো কইছে এই সকল অনৈতিক কাজ কারবার থাইকা বিরত থাকতে। জীবন বাছানর থাইকা ধর্ম রক্ষার মান তখন সবচেয়ে জরুরি হইয়া পরে।