আজ পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশ বা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জনসত্তাকেই সাম্প্রদায়িক রঙে রাঙানোর চেষ্টা প্রবল আকার নিয়েছে। ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মধ্যযুগীয় বর্বরতা দিয়ে মুছে দেবার চেষ্টা হচ্ছে বহু শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা অসাম্প্রদায়িক সামাজিক সত্তার বুনিয়াদ। মানুষের পেটে ভাত নেই, জামাকাপড় নেই, অন্ধকারে মরা ছাড়া তাঁর সামনে অন্য কোন ভবিতব্য নেই। সেই সমস্যা সমাধানের কথা না বলে তাদের শেখানো হচ্ছে ধর্মই তোমার একমাত্র অবলম্বন। ধর্মের তথাকথিত মর্যাদারক্ষার নামে উশকানি দেওয়া হচ্ছে অন্য ধর্মের বা সম্প্রদায়ের মানুষদের উপরে আক্রমণ চালানোর।
কেউ হয়তো কোনো তাৎক্ষণিক প্ররোচনাকে দায়ী করতে পারেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক প্ররোচনাতে একজন দুম করে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে, কিংবা কাউকে খুন করতে পারে। কিন্তু আকস্মিক প্ররোচনায় হাজার হাজার মানুষ পশুতে পরিণত হতে পারে না, যদি না জমি প্রস্তুত থাকে। এই জমি প্রস্তুত করার কাজে হাত পাকিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহল। সাম্প্রদায়িক উশকানি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এবং সেখানে কোন ধর্মীয় বিভাজন নেই। যে গ্রামে পাশ করা ডাক্তার নেই, হাই স্কুল নেই, বর্ষায় প্যাচপ্যাচে কাদা না পেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই, সেখানেও রমরমা আকাশচুম্বি মসজিদ আর হরিসভার। কোত্থেকে আসছে এত টাকা? কারা যোগাচ্ছে? তাদের উদ্দেশ্য যে নিছক জনসেবা নয়, সেটা ধরে নেওয়াই যায়। তাহলে তারা কীর্তন বা জুলুসে টাকা না ঢেলে দাতব্য চিকিৎসালয় বানাতো।
আগুন জ্বললে ক্ষয়ক্ষতি হবেই। আজ হয়তো সে আগুন আমাকে পোড়াচ্ছে; কাল পোড়াবে আপনাকে। আজ আমাকে পুড়তে দেখে আপনি যদি হাততালি দেন, কাল আমিও দেব। তাতে উশকানিদাতাদের স্বার্থ চরিতার্থ হবে; শেষ হয়ে যাব আমি-আপনি, আমাদের উত্তর-প্রজন্ম। আগুন সাময়িক দাবানলের পর আবার নিভেও যাবে। কিন্তু উস্কানিদাতারা মাটির তলায় গিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে, যাতে অন্য কোন সময়, অন্য কোনখানে আবার আগুন জ্বালানো যায়। তাই সচেতন নাগরিক হিসাবে আমার-আপনার দায় হল এদের বিরুদ্ধে মানব-শৃঙ্খল তৈরি করা।
আসুন, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সমস্তরকমের সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে একজোট হই। আমরা জানি, সাধারণ মানুষ দাঙ্গাবাজ নন। তাদের প্ররোচিত করে কুকর্ম সারে কিছু বদমায়েশ। সময় এসেছে ধর্মনিরপেক্ষভাবেই তাদের চিহ্নিত করার। এইদেশ রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের, এই মাটি লালন শাহ-অতুলপ্রসাদের। যে কোন মূল্যেই আমরা তার মর্যাদা রক্ষা করব।
—