নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে শহীদ ভাবার কুন্ঠা

নবাব সিরউ‌দ্দৌলা‌কে শ‌হিদ অাখ্যা দি‌তে নারাজ অ‌নেক জ্ঞানীগুনী ব্য‌ক্তি। ব্য‌ক্তি স্বাতন্ত্র‌বো‌ধে মত প্রকাশ যে কেউ কর‌তে পারেন। প্রথমটা আ‌মিও তাই ভে‌বে‌ছি। প‌রে জে‌নে‌ছি, ভার‌তের স্বাধীনতা অা‌ন্দোল‌নে ‌সিরাজ কীভা‌বে এ‌সে গে‌ছে নায়ক হি‌সে‌বে। ১৭৫৭ থে‌কে ১৮৫৭। একশ বছ‌রে দেশ যে ভা‌বে শো‌ষিত হ‌য়ে‌ছে তা‌তেই মানুষের ম‌নে স্বাধীনতা স্পৃহা জে‌গে‌ছে ক্র‌মে। স্বাধীনতা চে‌য়ে মানুষ যত সংগ‌ঠিত হ‌তে চে‌য়ে‌ছেন সিরাজ সেখা‌নে শ‌হিদী নায়ক হি‌সে‌বে স্থান ক‌রে নি‌য়ে‌ছেন।

পলাশী পরব‌র্তি‌তে বীরভূম, বর্ধমা‌নের রাজা যেমন বাংলার স্বাধীনতা‌কে ফি‌রি‌য়ে আনার চেষ্টা ক‌রে‌ছেন, ঠিক তেমন কৃষ্ণনগর ও হাওড়ার রাজারা বি‌রো‌ধিতা ক‌রে ইং‌রেজ‌দের পক্ষ নি‌য়ে‌ছেন। পলাশীর যু‌দ্ধে কৃষ্ণনগ‌রের রাজার প্রত্যক্ষ সমর্থন তো আমা‌দের জানা। ১৭৬৫তে ক্লাইভ‌কে কৃষ্ণনগ‌রে এ‌নে গণসংবর্ধনা দেবার কথাও আমরা জা‌নি। অ‌নে‌কে ব‌লেন, সেই সংবর্ধনার খু‌শি‌তেই নাকী কৃষ্ণনগ‌রে জগদ্ধাত্রী পু‌জোর প্রচলন হয়।

সিরাজ‌কে নি‌য়ে আমরা যাই ভা‌বি, ইং‌রেজরা ভাবত সে স্বাধীনতা সংগ্রামীর মর্যাদা প‌বেন এক‌দিন। দূরদ‌র্শি ইং‌রেজরা তাই সিরা‌জের ওপর কা‌লিমা লেপন ক‌রে‌ছে বা‌রে বা‌রে। যা‌তে সিরাজ নায়ক হি‌সে‌বে সম্মান না পায়। ইং‌রেজ‌দের অর্থানু‌ল্যে অ‌নেক গ্রন্থ র‌চিত হয়। যেখা‌নে সিরাজ একজন কল‌ঙ্কিত নায়ক।

আমা‌দের বাংলায় অক্ষয়কুমার মৈত্র ছাড়া বা‌কি সক‌ল লেখক সিরাজ‌কে অদক্ষ শাসক, নারী লোলুপ ও প্রজা পীড়ক হি‌সে‌বে দে‌খি‌য়ে‌ছেন। এ ‌লেখা সবই ইং‌রেজ‌দের মতদপুষ্ট হ‌য়ে। এখন জানা যা‌চ্ছে নতুন অ‌নেক কথা। মাত্র দুবছ‌রের শাস‌নে সিরাজ প্রশাস‌নিক যে সব কাজ ক‌রে‌ছি‌লেন তা গ্রহন‌যোগ্য। তার প্রধান এক‌টি হল, প্রজা পীড়ন বন্ধ করা। তাঁর সব‌চে‌য়ে বড় কাজ তি‌নি ম‌নে প্রা‌ণে সহাবস্থান চাই‌তে‌ন। চাই‌তেন সম্প্রী‌তির বাতাবরন। সে জন্য তি‌নি সেনাবা‌হিনী‌তে যেমন ইরাকী মুসলমান মীর মর্দান‌কে রা‌খেন তেমন রা‌খেন কাশ্মী‌রি ব্রাহ্মণ মোহনলাল‌কে। যারা বল‌ছেন, সিরাজ বাঙা‌লি‌দের স্থান ও কোনও গুরুত্ব দেন‌নি তাঁরা ভ‌ুলে গে‌লেন কি ক‌রে অা‌লি নকী খা‌নের কথা? কলকাতার যু‌দ্ধে অা‌লি নকী খানের নেতৃ‌ত্বেই তো ক্লাইভ বিতা‌ড়িত হয়। সিরাজ সেনা প্রধান ব্য‌ক্তি‌দের সম্মান দি‌তেন। যু‌দ্ধে জ‌য়ের পর অা‌লি খা‌নের না‌মে কলকাতার নামকরন ক‌রেন ‘অা‌লিনগর’ না‌মে। আ‌লি নকী খান ছি‌লেন বীরভূ‌মের মানুষ।

আমা‌দের একমুখী ই‌তিহাস অধ্যয়ণ এবং তা‌কে নি‌য়ে চর্চার ফ‌লে এই বিড়ম্বনা। আমার ম‌নে হয় ই‌তিহাস অনুসন্ধান থে‌মে থাকার জি‌নিস নয়। অনুসন্ধান স্পৃহা না থাক‌লে ই‌তিহাস খুঁ‌ড়ে ই‌তিহাস উদ্ধার অধরাই থা‌কে। এ কথায় কেউ দু:খ পে‌লে আ‌মি ক্ষমাপ্রার্থী।

ছ‌বি‌তে সিরা‌জের কব‌রে মালা দি‌চ্ছেন বাংলা‌দে‌শের ক‌বি নুহুল আলম লে‌নিন।