‘মুরতাদ, কাফির’ – ধর্মীয় ঘৃণা আর সমাজের আত্মবিস্মৃতির খেলা

কেউ যদি ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেন, নারী বা সমকামিতার পক্ষে দাঁড়ান, বিজ্ঞানের পক্ষে কথা বলেন, এলজিবিটি, সংখ্যালঘু, নারী, নবীন, বৃদ্ধ সবাই যে মুহূর্তেই মূলধারার ধর্মীয় ব্যাখ্যার বাইরে যান, তাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার, সামাজিক মৃত্যু ঘোষণার, আইন প্রয়োগের হুমকি দেয়া হয়।

‘তুমি মুরতাদ, তুমি কাফির তোমার কোন অস্তিত্ব নেই’ এই আপ্তবাক্য সাধারণ মানুষের মনে, পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাঙ্গনে ছড়িয়ে দেয়া হয়, যেন বিতর্ক, চিন্তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানব অধিকার, প্রেম কিংবা স্বপ্ন কখনো মাথা তুলতে না পারে।

ধর্মীয় সমাজ ফতোয়া দিয়ে, সামাজিক চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, নিষ্ঠুর অপমান করে যে ঐতিহ্য রক্ষা করতে চায়, তা আসলে চরম ভণ্ডামি এবং গোড়ামি। ধর্মের নামে নিজেদের ব্যর্থতা চাপিয়ে দিয়ে তারা অন্যের জীবনের দুঃখ, নিপীড়ন, ব্যথা, আত্মহত্যার কারণ হয়ে ওঠে। পরিবারের অন্দরেও যদি কেউ প্রশ্ন তুলেন, ধর্মের বাইরে ভাবেন, তাকেও ‘কাফির’ বানিয়ে একঘরে করে ফেলা হয়।

কিন্তু বাস্তবতা হল, ধর্ম, কুসংস্কার, পুরাতন আইন, সমাজের ফাঁকা নিয়ম কাউকে অস্তিত্বহীন করে দিতে পারে না। মানুষের মানবতা, সত্য, ভালোবাসা, সাহস এই সবই প্রকৃত অস্তিত্বের ভিত্তি। ধর্মের ভাইরাস ছাড়িয়ে, ভণ্ড সমাজের বাইরে বেরিয়ে এ দেশ, সভ্যতা, মানুষ এগিয়ে যাবে বৈচিত্র্য, মমতা, ন্যায় আর সত্যের পথে।

‘মুরতাদ’, ‘কাফির’ শব্দের ঘৃণা দিয়ে কাউকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। ইতিহাস বলে, সাহসীরা, মুক্তমনা, ভিন্নস্বপ্নী ঠিকই বেঁচে থাকে, আলোয় ফিরে আসে। এই দেশ, এই সমাজ, এই মানবতা—ভাববার, প্রশ্ন করার, মুক্ত থাকার, নিজের মতো বাঁচার যোগ্যতা সবার আছে। ধর্মের কাপালের ট্যাগ নয়, মানুষের জীবনই শেষ কথা।