অনারকিলিংঃ যখন ধর্ম রক্ষার নামে সমকামীদের খুন করা হয়

বাংলাদেশের সমাজে সমকামিতার পুরো ধারণা কতটা নিম্নগামী, তা নিজে মুখ না দেখলে বোঝা যাবে না। এক অপূর্ব মিলন মেলায় ধার্মিক ও ভন্ডদের স্রোত, একদিকে যেমন অন্ধকার, অন্যদিকে তেমনি দুর্বল।

সমকামীদের জন্য  বাংলাদেশ আমার কাছে এক ভয়ংকর জায়গা। এই যৌন অবস্থা বলতে এখানে পাপ হিসেবে দেখা হয়। আর এই পাপের দৃষ্টিভঙ্গির মূল উৎস হল ধর্ম। এই ক্ষেত্রে খুব নির্দিষ্ট করে বলবো, বাংলাদেশের  ধর্ম ইসলাম। এই বাংলাদেশ আমার সমকামী বন্ধুকে পাশবিক ভাবে হত্যা করে। কি ভুল ছিল আমার বন্ধুর? অর মতো নিরীহ, পরোপকারী মানুষ আমি আর কাউকে পাইনি। আমার বন্ধুর সমকামিতা ধরা পরার পর, অ নিজের বাবা আর আত্মীয়রা এমন মার মারে , মারার এক পর্যায়ে বুকে সজোরে লাথি মেরে অর পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে দেয়। বাঁচানো যায়নি আমার বন্ধুকে। হাসপাতাল তাকে মৃত ঘোষণা করলে পরে এই মৃত্যুকে ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। টাকা  থাকলে সবাইকে কি আসলেই কেনা যায়?  এটা তো আত্মহত্যা না। এটা খুন। ধর্মের নামে সম্মান বাঁচানোর নামে ভয়াবহ এক অনার কিলিং। হায়রে ধর্ম। যার অস্তিত্ব কেউ আদৌ কখনো বোঝেনি, সেই ধর্মকে বাঁচাতে জলজ্যান্ত এক নিরীহ পরোপকারী মানুষকে মেরে ফেলল এই ধার্মিক মানের নরপশুরা।

বাংলাদেশের যেকোনো কাজে ধর্ম সবসময়ই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এটা হয় সামাজিকভাবে, চিন্তায়, শিক্ষায়, সামরিক ক্ষেত্রে বা এমনকি যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতেও হতে পারে। ফলে বহু বছর ধরেই ধর্ম চালকের ভূমিকায় রয়েছে। আর এই বলির পাঠা হচ্ছে বুদ্ধিজীবী, ফ্রীথিংকার, নারীবাদী, ব্লগার এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অসহায় মানুষগুলো।

যখন সমাজে ধর্মের এত প্রভাব থাকে এবং এটি সমস্ত চিন্তা ও চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তখন বুঝতে হবে যে সমাজ হয় বিবেকহীন নয়তো বিবেকহীন বোকা।

যদি আমাকে সমকামিতার মতামত প্রচারে ইসলামিক বাধা সম্পর্কে বিশেষভাবে বলতে হয়, তাহলে আসুন কুরআনে লেখা এই দৃষ্টিভঙ্গির কিছু দেখি। কুরআনে লেখা আছে-

“তোমরা জেনা ও ব্যভিচারের ধারে কাছে এসো না। প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি পাপ কাজ এবং একটি খারাপ পথ। “(সূরা বনি-ইসরাঈল: 32)”

আবার এই কুরআনে বলা হয়েছে- আর লূতের কথা স্মরণ করুন, যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেনঃ তোমরা এমন লজ্জাজনক কাজ করছ, যা তোমরা ছাড়া আর কেউ ইতিপূর্বে দুনিয়াতে করনি। আপনি কি একজন পুরুষের সাথে সেক্স করেন এবং রাস্তায় ডাকাতি করেন এবং আপনি মিটিংয়ে অবৈধ কাজও করেন। (সূরা আনকাবুত : ২৮,২৯)

দেখা যাচ্ছে, সমকামিতাকে ব্যভিচার, মন্দ বা খারাপ হিসেবে প্রকাশ করার পুরো বিষয়টিই কুরআন বলেছে। আর যে দ্বীনের কিতাব কুরআন, সেটাই ইসলাম।

সমকামিতার পুরো বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, আবেদন আছে, স্নেহ আছে, ভালোবাসা আছে, ধর্মে তা ঘৃণ্য। ধর্ম শুধু দেখে যে মোহাম্মদ নামের একটি অদ্ভুত প্রাণী তার কাল্পনিক লেখায় কী বলেছে বা কী বলেছে না। আর তার উপর ভিত্তি করেই জনগণ, একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত হয়।

ফলে বাংলাদেশের মতো অনগ্রসর সমাজে সমকামিতার দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মই যে সবচেয়ে বড় বাধা তা বলতে দ্বিধা নেই। বিশেষ করে ইসলাম। আফসোস আমার বন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না। এই ধর্মই অর মৃত্যুর কারন হল। আমি আজও অই বীভৎস খুনকে মেনে নিতে পারি না। আজও আমার বন্ধুর কথা মনে হলে আমার চোখে জল চলে আসে, যেমন এখন চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।