নাস্তিকরা কি নৈতিক ভাবে অসৎ ?

একটি জরিপে ধর্মপ্রাণ দেশগুলোর নাগরিকদের জিজ্ঞেস করা হয়নি যে তাদের কি কোনো নাস্তিক বন্ধু আছে কিনা, বা তারা কি তাদেরকে অসৎ মনে করেন কিনা। বরং, তাদের একটি সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে একটি কাল্পনিক গল্প শুনানো হয়েছে এবং জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তারা কি মনে করেন সেই সিরিয়াল কিলারটি ধর্ম পালন করে কিনা। অধিকাংশের উত্তর ছিল, অবশ্যই না। এখানে উত্তরদাতাদের অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণের চেয়ে তাদের মানসিক ধারণা ও বিবেচনা বেশি কাজ করেছে। সব বোমাবাজির পর, এটি একজন সত্যিকারের মুসলমানের কাজ নয়, এই বিষয়ে মানুষ অনেকবার শুনেছেন, এমনকি কিছু দিন আগে সৌদি আরবের একজন মন্ত্রী বলেছেন, প্রতিটি সন্ত্রাসী একজন নাস্তিক। কিন্তু বাস্তবিক প্রশ্ন হচ্ছে, আইএস, বোকো হারাম, তালেবান বা বাংলা ভাই কি সত্যিই নাস্তিক? তাহলে ধর্মপ্রাণ দেশগুলোর নাগরিকেরা কেন নাস্তিকদের নৈতিকভাবে অসৎ মনে করেন, এর উত্তর কী হতে পারে? এটি হচ্ছে বিশ্বাসের ভাইরাসের ফল, যা তাদের মনে এই ধারণা গেঁথে দিয়েছে যে, যে ধর্ম তাদেরকে নৈতিকভাবে রক্ষা করতে পারে না, সেখানে একটি ধর্মহীন সমাজ কিভাবে তাদের বা তাদের দেশকে নিরাপত্তা দিতে পারে। অর্থাৎ, অধার্মিক মানেই খারাপ বা চারিত্রিকভাবে অসৎ। তবে, ধার্মিক দেশগুলোর নাস্তিকরাও কি মনে করেন যে নাস্তিকরা নৈতিকভাবে অসৎ? এ প্রশ্নের উত্তর জরিপে প্রকাশ পায়নি।

তবুও প্রশ্ন উঠে, সেক্যুলার রাষ্ট্রের নাস্তিকরা কেন মনে করে যে তারা অসৎ? এর উত্তর আরও সহজ। ধরুন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হল, ভারতের হিন্দুরা ভালো না বাংলাদেশের হিন্দুরা ভালো? বেশিরভাগ মানুষ বলবেন বাংলাদেশের হিন্দুরা ভালো। এই ভিন্নতা কেন? মূল কারণ হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে, ভারতের হিন্দুরা অবলা জীবকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করে না, যা বাংলাদেশে কখনো সম্ভব নয়। সেক্যুলার রাষ্ট্রগুলোতে ধার্মিকদের সংখ্যা কমছে, ফলে যদি কাউকে জেলে যেতে হয়, তারা সেই সংখ্যাগুরু নাস্তিকদের থেকেই যাবে। ধার্মিকরা সংখ্যালঘু হওয়ায়, তাদের পরিস্থিতি কিছুটা অস্বস্তিকর। পশ্চিমা দেশগুলোতে, ধর্মের প্রতি মন্তব্য করা সহজ হলেও, ধার্মিকদের আসল চেহারা প্রকাশ পায় না। এর ফলে, একজন নম্র ও ভদ্র ধার্মিককে সৎ মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে নাস্তিকেরা নৈতিকভাবে অসৎ এমন ধারণা সেক্যুলার রাষ্ট্রে তেমন একটা প্রবল নয়। যদি নাস্তিকেরা সত্যিই অসৎ হত, তাহলে নাস্তিক রাষ্ট্রগুলোতে (যেমন নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন) জেলখানা বন্ধ হয়ে যেত না।