শূদ্রদের উপর ধর্মের নামে যে অন্যায় করা হয়েছে সাত ধরনের দাস
যুদ্ধজয়ী দাস: যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দাস বনে যাওয়া ব্যক্তি,
আহারপ্রেরিত দাস: খাদ্যের প্রলোভনে দাসত্ব গ্রহণ করা ব্যক্তি,
জন্মগত দাস: দাসীর সন্তান যে জন্মগতভাবে দাস,
ক্রয়কৃত দাস: ক্রয় করে দাস বানানো ব্যক্তি,
দানপ্রাপ্ত দাস: অন্য কারো দ্বারা দান করা দাস,
পৈতৃক দাস: পিতৃপরম্পরায় দাসত্ব অনুসরণ করে এমন ব্যক্তি,
শাস্তিমূলক দাস: শাস্তি হিসেবে দাসত্বে নিযুক্ত করা ব্যক্তি। মনুসংহিতা ৮/৪১৫
শিক্ষা ও ধর্মাচারে শূদ্রের অধিকারহীনতা
শূদ্রের কোনো উপনয়ন সংস্কার নেই, যজ্ঞের অধিকার নেই। মনুসংহিতা (১০/৪ ; ১০/১২৬-১২৭)
শূদ্রকে শিক্ষা দেওয়া বা যজন অধ্যাপন করা অত্যন্ত পাপজনক, এবং তার প্রায়শ্চিত্ত হল জপ ও হোমের মাধ্যমে। (মনুসংহিতা ১০/১১১)
ব্রাহ্মণদের শূদ্রের কাছে বেদ পাঠ না করার নির্দেশ।
মনুসংহিতা ৪/৯৯ শূদ্রকে ধর্মোপদেশ না দেওয়া, ভৃত্য ব্যতীত অন্য শূদ্রকে উচ্ছিষ্ট না দেওয়া, হবিষ্কৃত অংশ না দেওয়া। মনুসংহিতা ৪/৮০
শূদ্রকে উপদেশ দেওয়া হলে, উপদেশদাতা ব্রাহ্মণ সেই শূদ্রের সাথে অসংবৃত নরকে যাবেন। মনুসংহিতা ৪/৮১
বিচারকালে বর্ণভেদানুযায়ী সম্বোধন ও শপথের বিধান
ব্রাহ্মণকে ‘তুমি বলো’, ক্ষত্রিয়কে ‘সত্য বল’, বৈশ্যকে সম্পদের শপথ করতে বলা হয়, আর শূদ্রকে বলা হয় মিথ্যা বললে সব পাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে। মনুসংহিতা ৮/৮৮
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রের শপথের ভিন্ন ভিন্ন বিধান। অগ্নিপরীক্ষা, জলপরীক্ষা এবং স্ত্রী-পুত্রের মাথা স্পর্শ করে শপথ করানোর বিধি শূদ্রের জন্য। মনুসংহিতা ৮/১১৩-১১৪
যদি ক্ষত্রিয় বা বৈশ্য অরক্ষিত ব্রাহ্মণীর সঙ্গে মিলন করে, তবে বৈশ্যকে পাঁচ পণ এবং ক্ষত্রিয়কে এক হাজার পণ জরিমানা হবে। যদি তারা সংরক্ষিত এবং গুণবান ব্রাহ্মণীর সঙ্গে সংসর্গ করে, তাহলে তাদের শাস্তি শূদ্রের মতো হবে, অথবা তাদের দর্ভ বা শর দিয়ে ঢেকে আগুনে পোড়ানো হবে। যদি একজন ব্রাহ্মণ সংরক্ষিত ব্রাহ্মণীর সঙ্গে বলপূর্বক মিলিত হয়, তার জরিমানা হবে এক হাজার পণ এবং সম্মতি সহকারে মিলনের জন্য পাঁচশো পণ। বিভিন্ন বর্ণের ব্যক্তিদের প্রতি ব্যভিচারের শাস্তি ভিন্ন হয়। বৈশ্য ও ক্ষত্রিয় যদি অরক্ষিত ব্রাহ্মণীর সঙ্গে সংসর্গ করে, তাদের অর্থদণ্ড নির্ধারিত হয়, যখন শূদ্র একই অপরাধে অধিক কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হয়। মনুসংহিতা ৮/৩৭৬-৩৭৮
যদি একজন ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণের প্রতি অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করে, তার দণ্ড হবে একশ পণ। একজন বৈশ্যের জন্য দণ্ড হবে দেড়শ থেকে দুইশ পণ। একজন শূদ্র শারীরিক শাস্তি পাবে। তবে, যদি ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়কে অশালীন ভাষায় অপমান করে, ব্রাহ্মণের দণ্ড হবে পঞ্চাশ পণ, বৈশ্যকে গালি দিলে পঁচিশ পণ, এবং শূদ্রকে গালি দিলে বারো পণ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রের মধ্যে গালিগালাজ করার শাস্তি ভিন্ন। ব্রাহ্মণের প্রতি অসম্মান করলে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের বিভিন্ন মাত্রার দণ্ড নির্ধারিত হয়, যেখানে শূদ্রের শাস্তি অধিক কঠোর। মনুসংহিতা ৮/২৬৭-২৬৮