বাংলাদেশের ৩৭৭ ধারা ও সমকামিতার শাস্তি

সমকামিতাকে বাংলাদেশ কোন দিনও বৈধতা দেবেনা। যে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম অনুসারী মানুষ মুসলিম এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেখানে কোনদিনও সমকামিতাকে বৈধতা দেবে না রাষ্ট্র। আমি জানতাম মানুষের ধর্ম হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের আবার ধর্ম হয়? আমার মতো মানুষদের জন্য বাংলাদেশের কিচ্ছু যায় আসে না। বাংলাদেশের মতে আমার মতো মানুষদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আর বাচতে চাইলে বাংলাদেশে থাকার সুযোগ দেবে না। হয় মারবে না হয় জেল হবে। বিনা অপরাধে শাস্তি দেবে।

বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশই সমকামিতাকে বৈধতা দিলেও বাংলাদেশে এটি অপরাধ। বাংলাদেশের আইনে সমকামিতাকে প্রকৃতি বিরুদ্ধ মনে করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তি প্রদান করা হয়। কেননা এটি আমাদের ধর্মীয় ও আইনের পরিপন্থী এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির বিকৃত বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

সমকামিতা (ইংরেজি: Homosexuality, হোমোসেক্সুয়ালিটি) বলতে সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি “রোমান্টিক আকর্ষণ, যৌন আকর্ষণ অথবা যৌন আচরণ”কে বোঝায়। যৌন অভিমুখীতা হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি “স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের যৌন প্রবণতা”। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কোনো সম্প্রদায়কেও এই শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়।

অবশ্যই ইসলামে homosexuality সম্পূর্ণ হারাম। এবং স্বাভাবিক ব্যভিচারের চেয়েও খারাপ। 
লুত (আ) এর কওমকে (Sodom আর Gomorrah নগরী) আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যেসব কারণে এর মধ্যে সমকামিতা ছিল একটি। 

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সমকামিতাকে ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনা করে এ-সম্পর্কিত আইনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।
দিল্লি হাইকোর্ট এর আগে ২০০৯ সালে সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছিলেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন।


বাংলাদেশের আইনে সমকামিতা অপরাধ –
বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সাথে প্রকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দন্ডিত হবেন। এ ধারায় বর্ণিত অপরাধীরূপে গণ্য হবার জন্য যৌন সহবাসের নিমিত্তে অনুপ্রবেশই যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
[Section 377. Unnatural offences– Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with imprisonment for life, or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine. Explanation– Penetration is sufficient to constitute the carnal intercourse necessary to the offence described in this section.]

এখন প্রশ্ন আসতে পারে প্রকৃতি বিরুদ্ধ বলতে কি বুঝানো হয়েছে? 
এই আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে – “The unnatural offenses are two:
a) Sodomy and 
b) bestiality. 
Sodomy consists of penetration per anus with another person. 
Bestiality can be committed either by a male or female human being with an animal.” 

মূলত এই ধারার অধীনে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মামলাতে পায়ুকাম এবং পশ্বাচারকেই (পশুর সাথে যৌনসঙ্গম) অস্বাভাবিক অপরাধ অর্থাৎ “অর্ডার অব ন্যাচার” পরিপন্থি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

২০০১ সালে নেদারল্যান্ড প্রথম সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনগত বৈধতা দেওয়ার পর তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু স্টেটসহ পৃথিবীর প্রায় ৭০টি দেশ। ২০১১ সালে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলও সমকামিতার পক্ষে একটি সনদ পাশ করে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর সেরা মুসলিম দেশগুলোর কোনটিতেই সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হয়নি।

কার কাছে ছাইব বিচার? আন্দোলন করবো? আন্দোলন করতে দেবে না। জুলহাজ তনয় এর মতো টুকরো টুকরো করে মেরে পুঁতে ফেলবে। আমরা নাকি কাফের, মুরতাদ। আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখলে , ইসলাম কে অবমাননা করা হয়। ইসলামে আমাদেরকে মেরে ফেলার হুকুম দেয়া আছে। আমরা বাছতে চাইলেও আমাদের বাঁচার অধিকার নেই। হয় মুখ বুঝে সহ্য করো না হয় পালিয়ে পালিয়ে বেঁচে থাক। নিজের দেশে , পরিবারের মাঝে, বন্ধুদের মাঝে ফিরে যাবার পথ খোলা নেই। বাঁচাটাই যেন এক অভিশাপ। আমার জন্মটাই নাকি একতা অভিশাপ।