সমকামিতাও স্বাভাবিক যৌনমিলন

আমরা সমকামিতাকে অগ্রহণযোগ্য এবং একে  মানসিক রোগের সাথে তুলনা করি। শুধুমাত্র নারী পুরুষের যৌনমিলনকেই একমাত্র বৈধতা দেই। পুরুষে পুরুষে, নারীতে নারীতে, বা নারী পুরুষ উভয়ের সাথে যৌনমিলনকে পাপ বল্যে গণ্য করি। কারণ সমাজ বা প্রথা এর স্বীকৃতি দেয় না। সকল ধর্মেই কমবেশি এই সমকামিতাকে অপরাধের চোখে দেখে এসছে যুগ যুগ ধরে।একটি সুস্থ স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক নিয়মকে আমরা অসুস্থতার নাম দিয়ে আমাদের মতো সমকামী মানুষদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছি দিনের পর দিন। 

একসময় সনাতনী প্রথা অনুযায়ী সমকামিতা কে মানসিক ব্যাধি বলা হতো, এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও পড়ানো হতো সমকামিতা একটি মানসিক রোগ । ফরেনসিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এ SEXUAL PERVERTION অধ্যায় এ হস্ত মৈথুন কেও PERVERSION বলা হতো । সে অনুযায়ী পৃথিবীর বলতে গেলে অধিকাংশ পুরুষই মানসিক ব্যাধি তে আক্রান্ত । কিন্তু এখন মডার্ন PSYCHIATRY , MEDICINE , PSYCHOLOGY তে সমকামিতা কোণো মানসিক ব্যাধি না। মানসিক ব্যাধির সংজ্ঞায় আছে ” A mental illness is something that disrupts a persons ability to reason and perform everyday activities .” যেমন সিজোফ্রেনিয়া , মুড ডিসঅর্ডার ইত্যাদি । এসব অসুখে আক্রান্ত মানুষ স্বাভাবিক কাজ কর্ম সঠিকভাবে করতেপারে না । আবার সমকামিতা necrophilia ( যারা মৃতদের সাথে sex করে মানসিক শান্তি পায় ) নয়। সমকামী মানুষ কিন্তু সমাজের বাকি ১০ তা মানুষের মতই স্বাভাবিক। একজন স্বাভাবিক ( heterosexual ) মানুষ এর মত সমকামি মানুষও অফিস করছে, গাড়ী চালাচ্ছে, সেনাবাহিনীতে যাচ্ছে, চিকিৎসক -প্রকৌশলী -শিক্ষক -বিজ্ঞানী হচ্ছে , গান শুনছে , সিনেমা দেখছে, কেউ মারা গেলে দুঃখ পাচ্ছে, অর্থাৎ আনন্দ, অনুভুতি, সুখ, দুঃখ, বেদনা সব ব্যাপারগুলোই তার মাঝে আছে। তাই এটা কোন মানসিক ব্যাধি না, এটা বলতে গেলে পৃথিবীতে যেমন ডান হাতি মানুষ আছে তেমনি বাম হাতি মানুষও আছে। আপনি ত বাম হাতি মানুশদের পাপি বা মানসিক রোগ এ আক্রান্ত বলেন না । ধর্মীয় আর সামাজিক বেড়াজাল আর সনাতনী পন্থা তাদের পাপী কিংবা মানসিক ব্যাধি গ্রস্ত বানিয়েছে । বাইবেল, কোরআন এবং তৌরাত এ উল্লেখ আছে সৃষ্টিকর্তা সমকামিতা নামক জঘন্য পাপ এর কারণে সদম এবং গোমরা শহর এবং তাদের অধিবাসীদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল । ধর্মগ্রন্থে জঘন্য পাপ উল্লেখ এর কারনে সমাজ এবং মানুষে মাঝে ধিরে ধিরে এই এই বিষময় মতবাদ প্রতিশ্তিত হয়ে গেছে যে সমকামিতা অপ্রাকিতিক, পাপাচার এবং ঘৃণার বস্তু । তাই সমকামিদের স্বাভাবিক মানুষের দৃষ্টিতে থেকে দেখা্ হয় না । অবশ্যই সমকামিতা কোন সুবিধা বা advantage না। কিন্তু এটা কোন ব্যাধি কিংবা পাপ ও নয় এটা একধরনের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা ভেরিএসন যা তাদের মাঝে তৈরি হয়ে যায় । জতদুর জানি মাইকেল অ্যাঞ্জেলো , দা ভিঞ্চি , plato , এলটন জন এরা সমকামি ছিল । এরা সমাজের কি ক্ষতি করেছে? না পৃথিবীকে স্বাভাবিক মানুষদের মতই অনেক কিছু দিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে ? 

সমকামীদের মাঝে AIDS কিম্বা STD (Sexual transmitted disease ) হবার সম্ভাবনা বেশী কথাটা একদম ভুল । অবাধ মেলামেশা কিংবা যৌনাচার করলে সেটা বিষমকামীদের মাঝেও হতে পারে । সমকামীরা যদি তাদের মেলামেশা তার সঙ্গীর সাথে শুধুমাত্র করে , কিম্বা এ বাপার এ সচেতন থাকে তবে কিন্তু তার STD হবার সম্ভাবনা নেই । এ ব্যাপার এ contraceptive method , নেশা গ্রহণকারীদের ইনজেকশন এর অপব্যবহার রোধ , এবং সর্বোপরি সামাজিক সচেতনটা এবং নৈতিকতাবোধ বাপারগুলা থাকলে অনেকখানি সহজ হয়ে যায় । আর এ ব্যাপারগুলো বা সচেতনতা সমকামি বা বিষম কামি উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য । শুধু সমকামীদের দোষ দিচ্ছেন কেন? 

বাংলাদেশের বয়স্ক সমকামীদের জীবন দেখে আমার করুণা হয়। তারা বিয়ে করেছে, তাদের বাচ্চাকাচ্চাও আছে। তারা তাদের অফিসের কিংবা বাসার অবসরটুকু কাজে লাগায় পার্টনার হান্টে। কেউ যদি ইন্টারেস্টেড হয় তাহলে তারা কোন হোটেলে এক ঘণ্টার জন্য রুম ভাড়া করে, সেক্স করে, তারপর যে যার পথে চলে যায়। আমার কথা বিশ্বাস না হলে ইয়াহুর বাংলাদেশ রুমে একটা গে আইডি নিয়ে বসে থাকুন। ১০-১৫ মিনিট পর পরই আপনাকে কেউ না কেউ হিট করবে। তুলনামূলক সামর্থবানদের একটা ক্লাবও আছে ঢাকায়। সেখানে পার্টিও হয় মাঝে মাঝে। 


আমাদের বাংলাদেশে অগণিত সমকামি লোকের সংখ্যা অনেক।  কিন্তু এরা নিরবে নিভৃতে মানবেতর জীবন যাপন করে। ধরা পরার ভয়ে কাউকে বল্যতে পারে না। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকে মরে। জানাজানি হলেই তো হয় হাত পা বেঁধে গলা কেটে মেরে ফেলবে না হলে ৩৭৭ ধারায় ধরে নিয়ে শাস্তি দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেবে। বাকি জীবনটা কারাগারে বসে পচে মরতে হবে। একতা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন আমরা পাই না। আমাদেরকে কেউ বোঝে না। আমাদের না বলা কথা গুলো কেউ বলে না। আমাদের কথা কেউ আজকালশুনতে চায় না। সত্যগুলো শুধু গল্পই থেকে যায়।