কোরানে নারীদের নিয়ে জেধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, সেগুলো অনেক ভাবে আমাদের মাঝে উঠে আসলেও, এখন নারীরা নিজেদেরকে প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে শিখছে না যা অত্যন্ত দুখ জনক। মানুষ না না ভাবে নারীদের অপমান করছে, সেগুলো সহ্য করে নারীরা এখন এই পুরুষতান্ত্রিক ধর্মকে মেনে নিয়েই, নিজেদের ব্যাক্তিত্তের এবং আত্মমর্যাদার বিসর্জন দিয়েছেন বহু আগে। আমার দুখ হয়। এখন নারীরা আমাদের দেশে নিজেদের অধিকারটুকু আদায় করতে শিকল না। কেন শখল না বা কেন পারল না সেঁতা আমাদের শমাঝের পুরুষদের জন্যই। পুরুষরা কখনও অধিকার ছাড়তে শেখেনই। আর নারীরা শেখেনই নিতে।
সূরা ৪ নিসা আয়াত ১২৯:
“তোমরা কখনও স্ত্রীগণের মধ্যে সুবিচার করতে পারবেনা যদিও তোমরা তা কামনা কর, সুতরাং তোমরা কোন একজনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুকে পড়োনা ও অপরজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখোনা এবং যদি তোমরা পরস্পর সমঝতায় আসো ও সংযমী হও তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।”
ক্রীতদাসী বা যুদ্ধবন্দিনীর সাথে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক- কী ভয়ঙ্কর কথা! আল্লাহর এমন অমানবিক, অপমানকর, অসৌজন্যমূলক নিয়ম নারীদের জন্য! মনে হচ্ছে কি এটা আল্লাহ তথা সৃষ্টিকর্তার বিধান? প্রত্যেকটি সৃষ্টিই সৃষ্টিকর্তার কাছে সমান আদরের, সমান প্রিয় হওয়ার কথা। এতো দেখি পক্ষপাতিত্ব। এখন কি মনে হচ্ছে নারীদের জন্য ধর্ম আছে?
সূরা ৪ নিসা (নারী)
আয়াত নং ৪:
“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্ট চিত্তে মোহর দাও, অত: পর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তি সহকারে খাও।”
এখনেও ‘তোমরা’ বলতে মুমিনদের তথা পুরুষদের বুঝিয়েছে। যদি নারীপুরুষ সবার জন্য কোরান নাযিল হত তাহলে আয়াতটি এমন হত, “স্বামীরা স্ত্রীদের মোহর দিবে, স্ত্রীরা চাইলে ছাড় দিতে পারে, পরস্পর আনন্দে একসাথে বসবাস করার জন্য।”
সূরা ৪ নিসা (নারী)
আয়াত নং ১৫:
“আর তোমাদের নারীদের মধ্য থেকে যারা ব্যভিচার করে, তোমরা তাদের উপর তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত কর। অত:পর তারা যদি সাক্ষ্য দেয় তবে তোমরা তাদেরকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রাখ যতক্ষণ না মৃত্যু তাদের জীবন শেষ করে দেয়। অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোন পথ তৈরি করে দেন।”
এখানে লক্ষ করুন ‘তোমাদের নারীদের’। এখানেও তোমাদের বলতে মুমিন পুরুষদের বুঝিয়েছে। আর সেই পুরুষদের নারী। নারী কোন স্বাধীন সত্বা নয়। ব্যভিচার কি শুধু নারীরা করে? ব্যভিচার করতে একজন নারী এবং একজন পুরুষের দরকার হয়। যদি নারী পুরুষ সবার জন্য কোরান নাযিল হত তা হলে আয়াতটি হত নিম্নরূপ –
আর যদি কোন নারী ও পুরুষ ব্যভিচার করে তাদের জন্য সাক্ষী ও প্রমাণের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি সাক্ষ্য প্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় তবে তাদের উভয়কে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে হবে যতক্ষণ না মৃত্যু তাদের জীবন শেষ করে দেয়।
অথবা এমনও বলা যেত, “তোমাদের নারীপুরুষের মধ্য থেকে”। কিন্তু তা বলা হয়নি।
সূরা ৪ নিসা (নারী)
আয়াত নং১৯:
“হে মুমিন গণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ হবে। আর তোমারা তদের আবদ্ধ করে রেখো না, তাদের যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্য, তবে যদি তারা অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদের অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছু অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যান রাখবেন।”
এখানেও হে মুমিনগণ মানে পুরুষদেরকে বলা হচ্ছে। নারীদের সাথে কি করতে হবে তার কথা বলা হচ্ছে। তবে এই অধম নারীজাতির উপর আল্লাহর অনেক দয়া প্রকাশ পেয়েছে এই আয়াতে।
সূরা ৪ নিসা (নারী)
আয়াত নং ২০:
“আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে তোমরা প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদ, তবে তোমরা তা থেকে কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ এবং প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে।”
উক্ত আয়াতের নায়কও সম্মানিত পুরুষগণ এবং পুরুষদের উদ্দেশ্যেই আর স্ত্রী হলো পণ্য। পছন্দ হল না সাথে সাথে বদলে ফেলা যাবে। তবে এত টুকু দয়া মহান আল্লাহতালা করেছেন তাদেরকে দেয়া জিনিস রাখা যাবে না। যদি নারীদের আল্লাহ, কোরাণ আর ধর্ম থাকতো তবে আয়াতটা হত এমন-
আর যদি স্বামীস্ত্রী পরস্পর পরস্পকে বদলাতে চায় বা তারা বিচ্ছেদ চায় তবে দাবীহীন শান্তিপূর্ণ ভাবে একে অপরকে ছেড়ে দিতে পারে। এতেই রয়েছে অসীম কল্যাণ।
সূরা ৪ নিসা (নারী)
আয়াত নং ২২:
“আর তোমরা বিবাহ করো না নারীদের মধ্য থেকে যাদেরকে বিবাহ করেছে তোমাদের পিতৃপুরুষগণ। তবে যা পুর্বে সংঘটিত হয়েছে (তা ক্ষমা করা হল)। নিশ্চয় তা হল অশ্লীলতা ও ঘৃণিত বিষয় এবং নিকৃষ্ট পথ।”
এখানেও পুরুষদের উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছে। যদি নারীপুরুষ সবার জন্য হত তবে আয়াতটা এমন হতে পারতো-
মাতাপিতা, পিতামহপিতামহী, মাতামহমাতামহী যাদের বিবাহ করেছে তাদের বিবাহ করা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হল।
এভাবেই পরমদয়ালু আল্লাহতালা ২৩, ২৪ ও ২৫ নং আয়াতেও বীরপুরুষদের উদ্দেশ্যে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছেন, তাদের বিয়ে করার জন্য কাদের হালাল করা হয়েছে আর কাদের হারাম করা হয়েছে।
সূরা ৪ নিসা (নারী)
আয়াত নং ৩৪:
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হেফাযতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযত করেছেন। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তদের সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদের ত্যাগ কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। এরপর যদি তারা আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করনা। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান।”
উক্ত আয়াতে নারীদের যে কি পরিমান ছোট করা হয়েছে তা বাদ দেওয়া যাক। একজন মদখোর, লুলা ল্যাংড়া, কানা, বোবা, পাগল পুরুষলোকও নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ আশীর্বাদে ধন্য পুরুষকুল! অনেক মুসলিম নারী এটা সানন্দে মেনে নেন। কিন্তু কোরান যে শুধু এবং শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য তা উক্ত আয়াতেও বুঝা যায়। “আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর।” তোমরাই হল মহান পুরুষজাতি আর যাদের হল স্ত্রীগণ। আল্লাহতালা কোরান অবতীর্ণ করেছেন পুরুষজাতির উপর, পুরুষজাতির মঙ্গলের জন্য। নারীদের জন্য নয়। আল্লাহ আর পুরুষরা হল নিকট আত্মীয় আর নারীরা হল থার্ড পারসন।
নারীরা আসলেই জীবনে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন। একটা গোতা সংসারের হাল ধরেন। পুর পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে নেন। তবু তার ইচ্ছার কোন দাম দেয়া হয় না। সে তার মতো করে বাঁচতে পারে না। তার কোন অধকার নেই নিজের মতো করে বাঁচার। সিদ্ধান্ত নেয়াড় সাহস করতে পারেন না। শুধু পারেন বিনা কারণে মার খেতে। ধুশু পারেন বিনা দোষে শাস্তি মাথা পেতে নিতে। শুধু প্রতিবাদ করতে শেখেন নি। শুধু নিজের প্রাপ্য সম্মানটুকু অর্জন করতে শেখেন নি। পুরুষরা একটা চড় মারলে অন্য হাত দিয়ে সেই পুরুষের গালে চড় পারতে শেখেন নি। নির্যাতিত হয়েছেন তবু মুখ বুঝে থেকেছেন। শিখেছেন সহ্য করতে আর খম্বা করতে।