৩৭৭ ধারাতে যা বলা হয়েছে তা একজন মানুষের জন্য চরম অপমানজনক। জন্মগত ভাবেই যারা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে পরে তাদেরকে আলাদা আইন করে শুধু মানবজাতির অপমান নয় মানুষ হিসেবে আপনারা যে কত খারাপ তার প্রমাণ দিচ্ছেন। আপনাদের এই অথর্ব সমাজ ব্যাবস্থার কারণে আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিত্যে হচ্ছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। সেই সকল বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। একজন এলজিবিটি অধিকার কর্মী এবং আমি নিজে একজন বাইসেক্সুয়াল হয়ে আজীবন এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক সমকামিতা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ৷ এজন্য দশ বছর থেকে আজীবন কারাদণ্ড, সাথে জরিমানার বিধান রয়েছে৷ ১৮৯৮ সালের আইন এটি, যার একই ধারা চালু ছিল ভারতেও৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সেটি বাতিল করে সমকামীতা কোন অপরাধ নয় বলে রায় দিয়েছে৷
এই ধারাটি বাংলাদেশের সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক৷ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়ে কারো অগোচরে যৌন সম্পর্ক করলে তা অপরাধ না৷ তাহলে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে কারো অগোচরে যদি সেক্সচুয়াল ইন্টারকোর্স করে, তাহলে কেন সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ সংবিধানের ২৭ ধারায় বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান৷ কিন্তু এখানে ঠিকই বৈষম্য হচ্ছে৷”
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের যে প্রস্তাব তুলেছে, তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে৷ ৪৭ সদস্যের ২৭ সদস্য মৃত্যুদণ্ড বিলোপের পক্ষে আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১৩ সদস্য৷
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের বিপক্ষে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র,ভারত, চীন, জাপান, বতসোয়ানা, বুরুন্ডি, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরাক, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও ভোট দিয়েছে৷
সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আইন রয়েছে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে৷ তবে দীর্ঘ দিন ধরেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলে আসছে, সমকামিতা কোনো অপরাধ নয়৷ সে দাবির প্রেক্ষিতেই সমকামীদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তুলে দেওয়া হোক– এই মর্মে একটি প্রস্তাব আনা হয় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে৷
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭ জন সদস্যের মধ্যে ২৭ সদস্য মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেয়৷ ১৩ জন সদস্য ভোট দেয়ার পাশাপাশি, সাতটি সদস্য রাষ্ট্র ভোট দানে বিরতও থাকে৷ তারপরও মৃত্যুদণ্ড তুলে দেয়ার প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে৷
বিশ্বের ছয়টি দেশে সমকামিতাকে মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ দেশগুলো হলো: সৌদি আরব, ইরান, সুদান, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া এবং সোমালিয়া৷
দেশে এই আইন বাতিলের সহসাই কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। রাজনৈতিক কারণে সরকার এই উদ্যোগ নেবে না৷ একমাত্র আদালতে রিটের মাধ্যমেই ধারাটি বাতিল করা যেতে পারে৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কারো পক্ষে এই উদ্যোগ নেয়া সম্ভব নয়৷ তবে সমকামীদের মতে, তাঁদের প্রতি সমাজের মনোভাব পরিবর্তনটাই বেশি জরুরি৷ অপরাধী কিংবা সমকামী হওয়ার জন্য নিজেরা দায়ী নন বলে মনে করেন তাঁরা৷ ‘‘মেরে ফেলার ভয় দেখানো থেকে শুরু করে আইনের ভয়, সামাজিক চাপ, সবকিছুর পরও যখন আমরা পরিবর্তিত হতে পারছি না, তখন এটা ধরেই নিতে হবে যে, আমরা জন্মগতভাবে এমন।
আমাদেরকে পরিবর্তন করতে কেন চাইছেন? বাংলাদেশের সমাজ আমাদেরকে গ্রহণ কেন করবে না, এই নিয়ে অনেক লেখা লেখি করেছি। অনেকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছেন আপনারা। জন্মগত ভাবেই আমরা এরকম। আপনি জন্মগত ভাবে সমাজে প্রচলিত নিয়মের মধ্যে যে যৌন সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে, হয়ত আপনি এমনটাই করে আসছেন। কিন্তু আমরা ত্ব আপনাদের মতো নই। আমরা আলাদা। কিন্তু আপনার মতোই সাধারণ মানুষ। আমাদের আলাদা করে দেখছেন কেন? আমাদেরকে সমাজচ্যুত করতে চাইছেন কেন?