বাংলাদেশে যারা সমলিঙ্গের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী তাদের আইনগত দিক থেকেবৈষম্যের শিকার।তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও একবারে নেই। বাংলাদেশ এ রকমগুটিকয়েক দেশের অন্যতম যেখানে রাষ্ট্র শুধু সমলিঙ্গের মানুষদের মধ্যেকার যৌন সম্পর্কেরঅস্তিত্ব অস্বীকারই করে না, বরং একে শাস্তিযোগ্য বিষয় বলে মনে করে।বাংলাদেশে বহুসমকামী নিজেদের পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে তাদের যৌণ প্রবণতা লুকিয়ে রেখেছে।“একজন সমকামীর পক্ষে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখে মোটামুটি একটি জীবন যাপন করাসহজতর।
কিন্তু নিজেকে লুকিইয়ে রেখে একটা মানুষ কত ক্ষণ বাঁচতে পারে, তাই একতা সময়তাকে নিজেকে প্রকাশ করতেই হয়।মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোতে সমকামীতা সবসময় পাপহিসেবে গণ্য।এবং হাদিসে বলা হয়েছে সমকামীদের মেরে ফেলার জন্য। ফলে এই চর্চ্চাটিপ্রকাশ্য হলে তার পরিণতি খুবই কঠোর।তাই সমকামীরা সবসময়ই একটা ভয়ে থাকে। কিছুসমকামী পুরুষ তাদের যৌণ ঝোঁক বা প্রবণতা পরিবারের কাছে প্রকাশ করায় তাদের বিষমকামীবিয়েতে বাধ্য করা হয়। অনেক অভিভাবক সমকামীতাকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবেবিবেচনা করেন এবং তাদের সমকামী পুত্রদের ধর্মপোদেশ দেন বা মনোচিকিৎসকের শরনাপন্নহন। স্যাম বাংলাদেশে এমন অনেক ঘটনাও শুনেছে যেখানে সমকামী পুরুষদের তথাকথিতমানসিক রোগ উপশমের জন্য তাদের বৈদ্যুতিক শক্-ও দেয়া হয়। সে নিশ্চিত যে, “যতক্ষন নাসরকার, বাবা-মা এবং বন্ধুরা না বুঝবে যে একজন নারী অথবা পুরুষ সমকামী হয়েও একজনধর্মনিষ্ঠ মুসলমান, হিন্দু বা খ্রীষ্ঠান হতে পারে, ততক্ষন পর্যন্ত বাংলাদেশ এক জন সমকামী বাউভয়কামীর জন্য নিরাপদ নয়।এবং যারা এইসকল সমকামী বা উভয়কামীদের আধিকার নিয়েকাজ করছে তাদের পরতে হচ্ছে ভীষণ বিপদে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে সকল সমকামী বাউভকামী ব্যক্তি প্রকাশ্যে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে, তারা অনেকই সংস্কারজনিত ঘৃণা, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে।
অনেকেই তাদের স্কুলে, বিশ্ববিদ্যালযেএবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয় এবংপরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে তেমন সমর্থন পায় না।বাংলাদেশে অন্ততঃ ১৫লক্ষ সমকামী বা উভকামী রয়েছে।২০০২ সনে বাংলাদেশের সমকামী পুরুষদের (Men sex who have sex with men বা MSM) সবচেয়ে বৃহত্তর সংগঠন বন্ধু স্যোসাল ওয়েলফেয়ারসোসাইটি (Bandhu Social Welfare Society বা BSWS) ১২৪ টি স্বচিহ্নিত নারী সমকামীএবং উভকামী পুরুষদের উপর জরিপ চালায় যা তর্ক সাপেক্ষে স্থানীয় LGB গোষ্ঠীর সবচেয়েউল্লেখযোগ্য অংশ। প্রতি দুই জনের মধ্যে একজন সাক্ষাৎদানকারী বলেছে যে, সে স্কুল বাকলেজে হয়রানির শিকার হয়েছে। প্রতি চার জনের মধ্যে তিন জন, যারা তাদের আত্মীয়পরিজনকে নিজের যৌন প্রবণতা সম্পর্কে জানিয়েছে। তারা বলেছে যে তারা তাদের পরিবারেরকাছ থেকে খুব নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছে; যেমন মারধর, বিয়েতে বাধ্য করা, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত, বাড়ি থেকে বের করে দেয়া অথবা তাদের সমকামীতা থেকে আরোগ্যেরজন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সদস্য, স্থানীয় মস্তান, বন্ধুস্থানীয় কেউ অথবা পরিবারের কোন সদস্য দ্বারাও নিগৃহিত হয়েছে।
জরিপে ৮০ জনের মধ্যে২৯ জন BSWS কে এই মর্মে রিপোর্ট করেছে যে, তারা আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের দ্বারাহয়রানীর শিকার হয়েছে অথবা পুলিশ অফিসাররা তাদের ধর্ষন সহ বিভিন্ন যৌন নিপীড়নচালিয়েছ। অন্যান্যরা তাদের উপর মারধর, বলপ্রয়োগে অর্থ আদায়, গতিবিধি বাধাগ্রস্ত করা, হুমকি এবং ব্ল্যাকমেইল করার কথা জানিয়েছে। ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং সিলেটের সমকামীরারিপোর্ট করেছে যে, তাদের পুলিশ ব্যারাক বা পুলিশ চৌকিতে ধরে নিয়ে গিয়ে দলগত ধর্ষণ করাহয়েছে।
বাংলাদেশ পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, সমলিঙ্গের মধ্যে যৌণ মিথস্ক্রিয়াএকটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড।