পুরুষ আর নারী

সুস্থ-সবল পুরুষেরা নারীদের কাছে সেএণ্ডক্স আর খাবার ছাড়া আর কী চায়! মানে রান্নাবান্না করে দেবে, আর যখন দরকার হবে, তখন লাগালাগি– দিতে বাধ্য, মানে সেই দাসী আর যৌনদাসীই তো। পুরুষেরা মা’কেও অনেকটা দাসীর ভূমিকায় চায়। মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকলে স্ট্যাটাস দেয়–আহা, কতদিন মায়ের হাতের রান্না খাই না। অনেকে মেয়েও এমন আছে অবশ্য। অর্থাৎ খাদ্যের জন্য এরা নারীদের উপর নির্ভরশীল। উপায় থাকলে এক গ্লাস পানিও নিজেরা ঢেলে খেতে রাজি না। আর পুরুষেরা অসুস্থ-দুর্বল হলে বউকেও মায়ের ভূমিকায় চায়। তখন বউ যেন মায়ের মত সেবা-যত্ন করে… আবার মাঝে মাঝে বউকে বোনের মত স্নেহশীল ভূমিকায়ও দেখতে চায়।

মানুষে-মানুষের সাম্য ও সমান অধিকারে যিনি বিশ্বাস করেন, তাকে কী বলে? এখানে মানুষ বলতে নারী, পুরুষ, শিশু–সবাইকে বোঝানো হয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি প্রশ্ন তোলা হয়–হুয়ায়ুন আজাদ নারীবাদী ছিলেন কি না–তাহলে অনেকেই মতামত দিবেন যে–তিনি নারী ও দ্বিতীয় লিঙ্গের মতো নারীবাদী বই লিখেছেন, অতএব তিনি নারীবাদী। নারীবাদ বিষয়ে প্রথমেই হুমায়ুন আজাদকে টানতে বাধ্য হই, কারণ নারীবাদের এত সহজ-সরল সংজ্ঞা এর আগে আর কোথাও পাই নাই, পাইলেও মনে ধরে নাই। নারী বইতে তিনি বলেছেন (অথবা অনুবাদ করেছেন)–নারী-পুরুষের সাম্য ও সমান অধিকারে যিনি বিশ্বাস করেন, তিনিই নারীবাদী।–এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য–মানুষকে নারী আর পুরুষে–দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।

ধর্মের বেলায় অনেক নাস্তিক বলে থাকেন যে–যেহেতু ধর্ম মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে, তাই তারা ধর্মের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ ঈশ্বরে অবিশ্বাস–এই হিসাবে শুধু নাস্তিক না হয়ে অনেকে তাদের নাস্তিক হওয়ার পেছনে ‘মানবতা’ বা ‘মানববাদ’-এর কথা উল্লেখ করেন। ইসলাম ধর্মে নারী পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পায়, আর হিন্দু ধর্মে একেবারেই পায় না। নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে ধর্ম থেকে আর বেশি উদাহরণ দিয়ে শুধু শুধু পোস্ট বড় করার মানে নেই, কারণ ধর্মের একটা ফুটাই যথেষ্ঠ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, নারীবাদ নারী-পুরুষের যে সাম্য ও সমান অধিকারের কথা বলে সেটা প্রথাগত ধর্ম সমর্থন করে না। এবার বোরখা-হিজাব, শাঁখা-সিঁদুর প্রসঙ্গে ফিরে যাই। অনেকের মতে পোশাক-পরিচ্ছদ একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কে কতটুকু কাপড় পরবে, কে কতটুকু খুলবে–এগুলা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই হিসাবে বোরখা-হিজাব, শাঁখা-সিঁদুর ইত্যাদিকেও ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে ধরতে চান। কিন্তু বোরখা-হিজাব, শাঁখা-সিঁদুর কি আসলেই ব্যক্তিগত, না কি এগুলা ধর্মীয় প্রথা? ধর্ম যদি না বলত তাহলে কি কেউ এগুলা পরত? ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী কোনো নারী কি শাঁখা-সিঁদুর পরবে? হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী কোনো নারী কি বোরখা-হিজাব পরবে? বা কোনো অবিবাহিত হিন্দু নারী কি সবসময় শাঁখা-সিঁদুর পরে ঘুরে বেড়ায়? হ্যাঁ, কেউ কেউ মজা করে, বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে, বা অভিনয়ের সময় মাঝে মাঝে পরতে পারে–কিন্তু এগুলা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।

যা হোক, মানুষের লোভ-স্বার্থ শুধু ধর্ম আর পরকাল দিয়াই হয় না, আরো নানান ভাবে এইসব থাকতে পারে। আর এইসবে আঘাত লাগলে সাপের মতো ফণা তুলতে বিন্দুমাত্র সময় নেয় না–এসব আর নতুন করে বলার কিছু নাই। তাই এই ভার্চুয়াল লাইফে কী করছেন, কেন করছেন, কীভাবে করছেন–সব সময় বুঝে করাই ভালো।