বাংলাদেশের সমাজ এলজিবিটি সম্প্রদায়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পালটাচ্ছে কি?

পশ্চিমা দেশগুলো এলজিবিটি সম্প্রদায় নিয়ে অনেক বেশী ওপেন মাইন্ডেড/ এখানে প্রত্যেকটা সম্পর্ককে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। কারণ এখানে সকলে মানবতাকে আগে প্রাধান্য দেয়। আমি এই দেশ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। পেয়েছি  একজন উভয়কামি মানুষ হিসেবে আমার প্রাপ্য মর্যাদা। আমি আমার মতো করেই আমার দিন শুরু করি। আমার বন্ধু বান্ধবদের সাথে আন্তরিকতার সাথে মিশতে পারি। আমাকে সকলে স্বাভাবিক ভহাবেই গ্রহণ করে। আমাকে উভয়কামি হিসেবে গালাগালি বয়া নোংরা দৃষ্টিতে তাকায় না। আমি বেশ ভালোই আছি।

পশ্চিমী দেশ গুলি হল free sex country মানে হল যে যার মনের মত জীবন সঙ্গিনী খুঁজে নিতে পারে এবং ইচ্ছে মত যেটা পরিবর্তন করতে পারে। যেটা আমাদের দেশ এ এখনও খারাপ ভাবে দেখে বেশিরভাগ লোক এ। ভালোবাসা যে শুধু ছেলে আর মেয়ের মধ্যে হয় তাই না। কোনো ছেলে তার মনের মত একজন অন্য একটা ছেলের মধ্যে পেতে পরে বা একটা মেয়ে আর একটা মেয়ের মধ্য। এতে সমস্যা র কিছুই নেই। বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশ এর অন্তর্গত। তাই আমরা এখনো খোলা মনের অধিকারী না। আমরা এইগুলো সহজে নিতে পারিনা। ধীরে ধীরে আমরা এইগুলি মেনে নিচ্ছি। তাই তো ৩৭৭ ধরা চালু করা হল। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে এইগুলো মেনে নেয়া দরকার।

অনেকেই এগুলো মানতে পারেননা কারণ তারা ভাবেন এটা কিরম একটা ছেলে আর একটা ছেলের সাথে সারা টা জীবন কাটাবেন?  বা একটা মেয়ে আর একটা মেয়ের সাথে। এদের ভবিষ্যত কি হবে। সংসার কি করে হবে? এইসব ভাবার কারনেই অনেকে মানতে পারেন না। এখন সবাই নিজে নিজে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চায়। তাই সংসার এর বাধা থাকেনা। তাই এখন অনেকেই বোঝেন ব্যাপার টা। সুতরাং আধুনিক কালের মানুষেরা মেনে নিচ্ছেন বলে আমার মনে হয়।

আমাদের সমাজ দুই হাজার বছর ধরে তিলে তিলে গঠন হয়েছে। আর সেই শুরু থেকে আজ অবদি কখনোই সমকামীদের সমাজ মেনে নেয়নি। ভালোকরে ভেবে দেখুন, সমাজ কোন জিনিস গুলিকে মেনেনিতে পারে আর কোন গুলোকে মানতে পারেনা ?

যা সমাজে সকলে মিলে ঠিক করেছে সেটাই মানতে হবে তা আপনারা মেনেনিতে পারি। যা সরকার ঠিক বলে বিবেচনা করে তা ইচ্ছা না থাকলেও মেনে নিতে বাধ্য আপনারা। কিন্তু কেন?

কিন্তু যা কেউ ঠিক করে দেয়নি, যা আপনাদের সামনে অসেনা, তা একদিন আচমকা আপনার সামনে আসলে আপনারো মেনেনিতে একটু অসুবিধা হবে সেটা মানছি। কিন্তু আমাদের দিকটাও একটু ভাবুন। কারণ জীবনটা তো আমার, আপনার নয়। আপনি শুধু মেনে নেবেন এতোটুকুই কাম্য।

তাই দরকার সমকামিতা নিয়ে একটু জানার, বোঝার। যদি দুটি সমলিঙ্গের মানুষ ভালবেসে সারাটা জীবন কাটাতে পারে তাহলে আপনাদের অসুবিধা কোথায়। তাদের যৌনজীবন নিয়ে চিন্তা না করে তাদের ভালোবাসার দাম দিন দেখবেন সমাজ বদলের দিকে হাটতে শুরু করেছে।

মোটামুটি যত সমীক্ষা করা হয়েছে, সবগুলোতেই দেখা দেখা গেছে সমকামী যুগল(কাপল) দের সন্তানরা দিব্যি মানুষ হচ্ছে। বিষমকামী বাবা-মায়েদের সন্তানরা যেমন মানুষ হয় তেমনই।

ঘটনাচক্রে, অনেক সমীক্ষাতে এটাও দেখা গেছে, সমকামী যুগলদের বাচ্চা-কাচ্চাদের মানসিক বিকাশ বিষমকামী বাবা-মায়েদের সন্তানদের থেকেও ভালো হচ্ছে। কিছু সমীক্ষা এটাও বলেছে যে, সমকামী যুগলদের সন্তানরা স্কুলেও গড়ে বেশী ভালো রেজাল্ট করে,  কারণ সমকামী বাবা-মা রা গড়ে সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে বেশী মনোযোগী। বাচ্চার বিকাশের জন্য দায়িত্ব এবং ভালবাসা এই দুই জিনিষ প্রয়োজন। তার জন্য দরকার একটা সুন্দর পরিবার। সেই পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য-সদস্যারা নিজেদের মধ্যে, নিজেদের ভালবাসাটুকুকে শারীরিক ভাবে কি করে ব্যক্ত করছেন— তার সাথে শিশুর বড় হবার কোন সম্পর্ক নেই।

সময় বদলাচ্ছে। এখন মানুষ অধুনিকতার আদলে জীবনকে যাপন করছে। প্রাচীন ধর্ম দিয়ে তো আর বর্তমান চলে না। সকলে ভালোভাবেই বাঁচতে ছায়। ধর্মের দোহাই দিয়ে মানবতাকে খুন করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? আপনারা সকলে পড়াশোনা জানা ভালো মানুষ। দুনিয়া অনেক এগিয়ে গেছে। এখনো কি সেই সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে পরে থাকবেন? যারা ইতিমধ্যে আপনাদের ধ্যানধারণা পালটেছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আর যারা এখনো পালটানই আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আপনাদের মঙ্গল হোক।