আমরা যারা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষ আমাদেরকে নিয়ে সমাজের নানা স্তরের মানুষ বিভিন্ন ধারনা পোষণ করে থাকে। আমাদের সাধারণ প্রবৃত্তি গুলগে তাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। তারা মনে করেন আমরা এই সমাজের মানুষদের সাথে মিশতে থাকলে সমাজ হয়ে উঠবে বিষাক্ত। আমাদেরকে সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি দিলে ইসলাম ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদেরকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করে নির্বাসনে পাঠানো উচিৎ না হয় হত্যা করা উচিৎ। কারণ মানুষ হিসেবে আমাদের মতো মানুষদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
পুরুষ কিশোরদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে এমন বর্ণনা প্রাচীন সভ্যতাগুলোতেই উপস্থিত। সুতরাং পুরুষ এবং পুরুষের যৌনমিলন তেমন অশ্রুত ঘটনা নয় বিশ্বের ইতিহাসে। নারী এবং নারীর ভেতরে সমকামীতার সম্পর্ক নিয়ে বিশদ কিছু উঠে আসে নি প্রাচীন পুস্তকে- তবে এর কারণ জানা নেই। সম্ভবত যৌনতার ইতিহাসে পুরুষই সবসময়ই সক্রিয় ভুমিকা পালন করতো বলেই নারীকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয় নি, যৌনতার ইতিহাসও পুরুষকতৃক লিখিত, তাই সেখানে নারীর সমকামীতা তেমনভাবে চিত্রিত হয় নি।
সমাকমীতা কোনো মানসিক ব্যধি? তবে বাংলাদেশের সামাজিক নীতি অনুসারে এটা যৌনবিকৃতি, মানসিক বিকৃতির উদাহরণ। এখানে স্বাভাবিক যৌনসম্পর্ক বিবেচিত হয়ে থাকে পুরুষ নারীর মিলন। এর থেকে ব্যতিক্রম কিছুই বিকৃতি চিহ্নিত হয়।
মানুষের যৌনতার বোধের উন্মেষের সাথে সাথে কি তার যৌনআনতি নির্দিষ্ট হয়ে যায়? ঠিক কত বয়েসে মানুষ নিশ্চিত ভাবে ঘোষণা করতে পারে সে সমলিঙ্গের কোনো ব্যক্তির প্রতি প্রবল যৌণাকর্ষণ বোধ করছে।
আই থিঙ্ক আই এম এ গে পর্যায় থেকে ইয়েস আই এম ডেফিনিটলি গে পর্যায়ে যেতে একটা মানুষের কতদিন প্রয়োজন হয়।
তবে অধিকাংশের অভিমত তারুণের শেষ পর্যায়ে অন্তত মানুষ উপলব্ধি করে সে তার লিঙ্গের অন্য সব মানুষের তুলনায় একটু ব্যতিক্রম, তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোনো যৌনাকর্ষণ নেই। এই বয়েসটা টেনে নীচে নামাতে নামাতে ১৬ র কোঠায় আনা হয়েছে।
সাম্প্রতিক হুজুগে অন্তত ১৬ বছর বয়েসী ছেলে-মেয়েরা নিজেদের সমকামী ঘোষণা দিচ্ছে। ব্যতিক্রম হলো লরেন্স কিং বলে এক বালক, যে ১৪ বছর বয়েসে নিজেকে সমকামী চিহ্নিত করে এবং নিজের স্কুলের একটি ছেলেকে এই ভ্যালেন্টাইন’স ডেতে নিজের প্রেমিক হওয়ার অনুরোধ জানানোর পরে সেই ছেলের গুলিতে নিহত হয়।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমার ধারণা যদি মানুষ সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষিত হয় এবং যার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে ব্যক্তি সেই ব্যক্তি যদি এটাকে গ্রহন করে তবে এটাতে সমাজ- জাত- মান-কূল চলে যাওয়ার কিছু নেই। সমকামি বিয়েকে বৈধ ঘোষণা করার ভেতরে তাবত লিঙ্গই যে আক্রান্ত হয়ে যাবে এমনও না, এটা বিপরীত লিঙ্গের পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহের মতোই একটি বিষয়। নিশ্চিত ভাবেই সামাজিক চেতনা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণেই সমকামী ব্যক্তিরা সবাইকে গিয়ে আকৃষ্ট করবার চেষ্টা করবে না।
আপনিও যেরকম মানুষ আমরা ঠিক তেমন মানুষ। আপনি এই মুহূর্তে যে আমার ব্লগ পরছেন আপনার মতোই আমি এক সাধারণ মানুষ। পার্থক্য কিন্তু তেমন বিশেষ নেই। হয়তবা আপনার মণের সাথে আমার মনের মিল হয় না কিন্তু আমারও আপনার মতোই স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করে। আপনি যেমন করে আপনার মা বাবা বয়া পরিবার নিয়ে থাকেন, আমার কিন্তু একতা পরিবার আছে। মা আছে বাবা আছে। আমি যেমন সমাজে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান, আমিও কিন্তু আপনার মতোই বাঁচতে চাই। আপনি যেমন সবার সাথে সম্পর্ক রাখতে চান, বিশ্বাস করুন আমিও চাই। তাহলে আপনার জগত আর আমার জগত ভিন্ন কেন হবে?