যে মেয়ে মানুষ তাকে এত পড়িয়ে কি হবে?

সমাজের ভেতর বসবাস আপনার আমার সবার, কিন্তু সেখানে আমরা সবাই মুখোশ পড়ে আছি। সন্তানের কথা ভেবে নিজেকে এক প্রকার বিসর্জন দেন নারীরা। তারা ভেবে দেখেন না যে অত্যাচার নির্যাতন চুপচাপ সহ্য করে যাচ্ছেন তা তারা যতই লুকাতে চান না কেন তাদের চেহারাতে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। সন্তানেরা মায়ের কষ্ট-বেদনা সবচাইতে আগে বোঝে এবং এর অত্যন্ত বিরুপ প্রভাব পড়ে তাদের ওপর।

আজকের আধুনিক বিশ্বে দাঁড়িয়ে এখনো নারীদের অবস্থান বেশ শোচনীয়। নারী বলতেই আমাদের কল্পনাতে ভেসে ওঠে দুধে আলতা গায়ের রঙ, মেঘবরণ কেশ, গোলাপি ঠোঁট আর কাজল কালো চোখ। অন্যদিকে পুরুষ বলতে আমরা বুঝি, সুঠাম দেহ, উচ্চশিক্ষিত,ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম। অর্থাৎ নারীরা রূপবতী-গুণবতী হয়ে ঘর-সংসার সামলাবে আর পুরুষরা বাইরের জগত সামলাবে। কিন্তু কেন? এরকমটা তো হওয়ার কথা নয়। কারণ বিগত কয়েক যুগ ধরে মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট, ক্লারা জেটকিন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, সিমোন দ্য বোভোয়ার, সুফিয়া কামাল, সুলতানা কামালসহ অসংখ্য নারীবাদীরা নারী অধিকার অর্জনের জন্য কাজ করে গেছেন। নারীবাদীদের আন্দোলনের সূত্র ধরেই নারীরা রাজনৈতিক মঞ্চে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে, ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছে, নিজের শরীরের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণের অধিকার পেয়েছে, পেয়েছে শিক্ষার অধিকার, পেয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সর্বোপরি নারী নিজেকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শিখেছে। কিন্তু তারপরও কোথায় যেন কি নেই!

আসলে যা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এগুলোর মধ্যে অনেক কিছুই নারী প্রকৃত অর্থে এখনো বোধ হয় পায় নি। যদি সত্যিই নারীর শিক্ষার অধিকার থাকতো তাহলে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই কোন মেয়েকে বাল্যবিবাহের সম্মুখীন হতে হতো না। বাবা মাকে এ কথা শুনতে হতো না যে মেয়ে মানুষ তাকে এত পড়িয়ে কি হবে? সেইতো পরের ঘর সামলাবে‌। নারীর শরীরের উপর যদি তার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ সত্যিই থাকতো তাহলে “বৈবাহিক ধর্ষণ” নামক শব্দ ডিকশনারিতেই থাকতো না।কারণ, “ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ”এর করা সাম্প্রতিক এক জরিপে ভয়াবহ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। সেটি হচ্ছে , এই দেশের শহর ও গ্রামের শতকরা ৬৩ ভাগ পুরুষ এখনো মনে করেন ‘সহবাসে রাজি না হলে বউকে মারাটা জায়েজ’। অন্যদিকে শতকরা ৬২ জন পুরুষ এখনো বিশ্বাস করেন যে ‘এমনও সময় আসে, যখন বউয়ের নিজের কাজের জন্যই তার মার খাওয়াটা উচিৎ হয়ে যায়’। সত্যিই কি হাস্যকর আর নির্মম বাস্তবতার মুখে আমরা দাঁড়িয়ে আছি! মত প্রকাশের স্বাধীনতা যে নারীর নেই সেটা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গুলোতে পুরুষের কথাই হচ্ছে শেষ কথা। সেখানে নারী যাই বলুক না কেন, সেটা যতই যুক্তি সঙ্গত হোক না কেন,দিন শেষে সেই কথাটির কোন মূল্যই দেওয়া হয় না।নারীকে পুরুষের মতামতকেই মেনে নিতে হয়, সেটা যদি অযৌক্তিকও হয় তবুও সেই মতামতকেই নারীরা সর্বদা বেদবাক্য বলে মেনে নিয়ে থাকে। নারীবাদীদের অসংখ্য আন্দোলনের ফলে বর্তমানে নারীদের অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটলেও নারী-পুরুষ সমতা অর্জন‌ এখনো সম্ভব হয়নি। আর হবেই বা কি করে? যেখানে নারীকে প্রতিনিয়ত পুরুষ কর্তৃক নির্যাতন,ধর্ষণ,হত্যার মুখে পড়তে হচ্ছে সেখানে নারী-পুরুষ সমতা অর্জনের কথা ভাবাটাই তো বোকামো।