মেয়েদের বিপদ বোঝার ক্ষমতা টাইপ ধারনা হল ছোট বেলা থেকে তারা যে জঘন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে তার প্রতিফলন। এই প্রক্রিয়ার ভেতরে বড় হওয়া মেয়েদের মানসিক বিকাশ রুদ্ধ হয়েছে আর এখানে তার মানসিক ক্ষতি দৃশ্যমান তখনই হয়, যখন সে ছেলে দেখলেই এক্সট্রা সতর্ক হয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠতে ভয় পায়, নির্জন রাস্তা দেখলে তার হাত পা ঠাণ্ডা হতে শুরু করে, কোন অপরিচিত পুরুষ তার দিকে তাকালে সে আঁতকে ওঠে। বাসার বাইরে যেতে অস্বস্তি বোধ করে ইত্যাদি মানসিক ট্রমা।
একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ শুধু মেয়েদের অর্থনৈতিক, শারীরিক, সামাজিক বৈষম্যই দেয় না, সেই সাথে তার মানসিক স্বাভাবিক বিকাশ এর পথ বন্ধ করে দেয়। আর এই বিষয়টাই হল মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য।
এখন প্রশ্ন হল এই বৈষম্য দূর করতে চতুর্থ তরঙ্গের ফেমিনিজ কিভাবে কাজ করছে? এর একটা ভাল উদাহরণ আমাদের পাশের দেশ ভারতেই আছে। মুম্বাইয়ে কিছু মেয়ে মিলে #WhyLoiter মুভমেন্টটা শুরু করেছিল। কোন কারন ছাড়াই ছেলেদের মত রাত-বিরাতে বাসার বাইরে আড্ডা দেয়া, চা খাওয়া, কিংবা স্রেফ সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মাধ্যমে তারা চেষ্টা করেছিল যে ‘মেয়েদের রাতে বাইরে যাওয়া যাবে না’ টাইপ ট্যাবু কিংবা ভয় ভাঙাতে, এবং বর্তমানে এটা যথেষ্ট বড় মুভমেন্ট হয়ে গেছে।
মিটু মুভমেন্ট এর কথা পাড়ার অশিক্ষিত লোকটাও জানে, তাই এটা নিয়ে বলার কিছু নাই।
আপনার, আমার, সর্বোপরি এই সমাজের বোঝার সময় এসেছে যে, মেয়েদের সিক্সথ সেন্স ভাল কিংবা তারা অল্প বয়সে ম্যাচিউর হয় ভাবা আসলে প্রশংসা না। তাদের কে খুব অল্প বয়স থেকেই নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য লড়াই করতে হয়, যেটা একটা ছেলের করা লাগে না। আর এই কারনে মেয়েরা সব সময় সতর্ক থাকে, যেমন খাঁচার ভেতরে একটা বাঘ কে রোজ পেটালে সে লাঠি দেখলেই ভয়ে সরে যাবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এটা তার ম্যাচিউরিটি না, তার অভিজ্ঞতা, তার স্বাভাবিক স্বভাব কেড়ে নেবার প্রক্রিয়া।
ঢাকার রাস্তায় রাত ১২টার সময় একটা ছেলে বাইরে যেতে ভয় পাবে কারন, ছিনতাই হতে পারে, একটা গাড়ি তাকে চাপা দিতে পারে,কেউ তাকে খুন করে ফেলতে পারে, কিন্তু একটা মেয়ে রাত ১২টায় একা বাইরে যেতে চাইবে না, তার কারণ সে জানে তার কোন বিপদ হলে প্রথমেই তাকে প্রশ্ন করা হবে, এত রাতে কেন বাইরে গেছিলা? সে সেক্সচুয়ালি অ্যাবিউসড হলে প্রশ্ন করা হবে, সে কোন পোশাক পরেছিলা? একা কেন গেছে? তার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে, তাকে মন্দ মেয়ে বানিয়ে ক্রাইমটাকে জাস্টিফাই করা হবে। অথচ কোন ছেলের সাথে ক্রাইম হলে ছেলেটাকে এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন কিংবা এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। তাই বিপদের ঝুঁকি গুরুত্ব না দিয়ে, ছেলেরা রাত বিরাতে বাইরে যায়। আড্ডাবাজি তথা সোশ্যালাইজ করে। এটা তাদের স্বাভাবিক জীবনের অংশ।
এই যে এতদিন ধরে ভেবে এসেছেন মেয়েরা বিপদ বোঝে,তারা পুরুষের চোখ দেখলে বুঝে ফেলে মনের কথা, এটা তাদের গুণ, অথচ আজকে জানছেন যে মেয়েরা বোঝে কারন তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করে। এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করার কুফল!!!