নারী শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে এখনো অব্দি স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। পুরুষ শাসিত সমাজ যেন কখনোই চায় না নারীকোনোভাবে তার থেকে উপরে বা তার সমপর্যায় চলে যাক। আজ পর্যন্ত যে কয়জন নারী আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে আমার মনে হয়না তাদের কারো চলার পথ একজন পুরুষ মানুষের চলার পথের মতো মসৃণ ছিল। নারী শিক্ষার প্রতি অবহেলা সেই বহুযুগ ধরেই চলে এসেছে।
আর এর পেছনের কারণগুলো হলো পারিবারিক ভাবে মেয়ে শিশুদের প্রতি অবহেলা, দারিদ্র্যত,কুসংস্কার, ধর্মীয় গোড়ামি ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমান এইআধুনিক যুগে নারী শিক্ষা এবং নারী উচ্চ শিক্ষার অন্যতম প্রধান অন্তরায় হচ্ছে নারী শিক্ষার প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষ শাসিত সমাজ নানাঅজুহাত ও ধর্মীয় দোহাই দিয়ে নারী শিক্ষাকে অবদমিত করে রাখতে চায়, কেননা একজন উচ্চ শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত কখনও কোন মানুষের দাসত্বস্বীকার করে নিবে না।
একজন শিক্ষিত নারী তার আত্মসম্মানের বিষয়ে খুবই সচেতন আর বিপওিটা এখানেই। কারণ পুরুষ শাসিত সমাজসবসময়ই নারীকে ব্যাবহার করে এসেছে দাসরুপে। তাই আজকের এ যুগে নারী যখন সমাজের সব বাঁধা পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাকরছে সেটি এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেনে নিতে পারছে না।অনেকে আবার ধর্মীয় দোহাই দিয়ে বলে থাকে, নারী উচ্চ শিক্ষা সমাজের যত ফেতনারকারন।তাদের মতে মেয়েদের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াই যথেষ্ট। অথচ তারাই আবার ফতোয়া দিয়ে থাকে যে নারীর জন্য পুরুষ ডাক্তার দেখানোজায়েজ না।
তাহলে তারা কি চায়? নারী বিনা চিকিৎসায় মারা যাক না কি নারী শিক্ষিত হয়ে চিকিৎসক সহ অন্যান্য পেশায় যুক্ত হয়ে দেশ তথাসমাজের কল্যাণে অংশগ্রহণ করুক? আমাদের ইসলাম ধর্মে কোথাও নারী শিক্ষাকে অনুৎসাহিত বা নিষেধ করা হয়নি বরং ইসলাম ধর্মে বলাহয়েছে “প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ”।
সুতরাং ধর্মীয় দোহাই দিয়ে নারী শিক্ষাকে অবদমনের এই চেষ্টা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? এছাড়াও বর্তমানে ডিভোর্স এবং ডিভোর্সের হার বৃদ্ধির জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই নারী শিক্ষা বা নারী উচ্চ শিক্ষাকে।বিভিন্ন জরিপে দেখানো হচ্ছে উচ্চ শিক্ষিত সাবলম্বী নারীরাই ডিভোর্সের ক্ষেত্রে এগিয়ে। কিন্তু এর পেছনের অন্তর্নিহিত কারণগুলো নিয়ে আসলেকারো কোনো মাথাব্যাথা নেই আর এসব নিয়ে কোনো জরিপ ও হয় না। আগে যখন নারীরা শিক্ষিত ও সাবলম্বী ছিলো না তখন তারা পুরুষদেরশত অন্যায় অত্যাচার মেনে নিয়ে হলেও সংসার করতো, কারণ একটিই; তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা ছিলো না।
এখন নারী শিক্ষিত ও সাবলম্বীহচ্ছে তাই তারা নিজেদের আত্নসম্মান ও ভ্যালু সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন। এখন আমার প্রশ্ন, একজন শিক্ষিত সাবলম্বী নারী কেনো একজনপুরুষের অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে নিবে? যেখানে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হওয়া উচিত বন্ধুর মত; মনিব-দাসের মতো নয় সেখানে পুরুষতান্ত্রিকসমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর ব্যাপারে বলা না হয়ে নারী শিক্ষাকে দোষারোপ করা হয়।
এটি কখোনই কাম্য নয়। একটি শিক্ষিত সভ্য জাতি গঠনেনারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।কোনো জাতি তার অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার অন্তরালে রেখে উন্নত হতে পারবে না।তাই দেশ ও জাতির উন্নয়নেরস্বার্থে নারীকেও অবশ্যই শিক্ষিত ও সাবলম্বী করে তুলতে হবে।এই আধুনিক অগ্রগতির যুগে এখনো বহু নারী শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত।তাইনারী শিক্ষা ও নারী উচ্চ শিক্ষার অগ্রগতির জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। এবং নারীর শিক্ষার প্রতি সমাজের নেতিবাচকদৃষ্টিভঙ্গি বদলানো বান্চনীয়।আর এ পরিবর্তন শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকে।