জুলহাজ-তনয় হত্যা এবং আমাদের অথর্ব প্রশাসন

বাংলাদেশে সমকামীদের অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। হত্যা হয়ে যাবার পরও কেউ বিচার পাচ্ছেন না। ভিকটিম পরিবার দেশের আইনের দ্বারস্থ হলেও বিচার শুরু হয় নী এখন। এ নিয়ে প্রশাসনের মাথা ব্যাথাও নেই। কারণ ধর্মমতে জুলহাজ এবং তনয়কে হত্যা করা জায়েজ। এবং জুলহাজ ও তনয় ছিলেন ইসলামের শত্রু। এদেরকে হত্যা করা হয়েছে মনে মনে এই সমাজ অনেক খুশি হয়েছে। বিচার শুরু হবে কি না এই নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। কারণ অদের সবচেয়ে বড় অপরাধ ওরা ছিলেন সমকামী।

বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন জুলহাজ মান্নান৷ ২০১৪ সাল থেকে তাঁর সম্পাদনায় বের হতে শুরু করে এলজিবিটিদের নিয়ে প্রথম পত্রিকা ‘রূপবান’৷ ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের এক বাসায় ঢুকে এই ইউএসএইড কর্মকর্তা  ও তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে হত্যা করা হয়৷ তিন বছর পর এসে সম্প্রতি অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোজিম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)৷ দায়ী করা হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কথিত নেতা সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আটজনকে৷ ৩৬ বার পেছানোর পর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২০ জুন দিন ধার্য করেছে আদালত৷

কিন্তু এই তিন বছরে পরিস্থিতি কতটা বদলেছে? রাষ্ট্রের অসহযোগিতামূলক আচরণে সমকামীদের নিরাপত্তা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে বলে জানান এই কমিউনিটির সদস্য ও তাঁদের নিয়ে কর্মরত মানবাধিকার কর্মীরা৷

সমাজের মধ্যে থাকা অনেক এলজিবিটি সংগঠনের মানুষেরা মনে করেন পরিচয় ফাঁশ হলেই মহা বিপদ। তাঁদের একজন আসিফ (ছদ্মনাম), যিনি একজন নবীন আইনজীবী৷ কৈশোর থেকেই তিনি সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি আকর্ষণ বোধের বিষয়টি টের পান, যা তাঁকে ক্রমান্বয়ে হতাশায় ফেলে৷ তার সাথে কথা হবার সময় বলেছিলেন,  ‘‘এখন দশজন বন্ধুর সাথে থাকলেও আমার নিজেকে মনে হয় একা৷”

 ‘সামাজিক, পারিবারিক সবক্ষেত্রেই তাঁরা নিগ্রহের শিকার হন’ কলেজে-জীবন শুরুর পর ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়৷ এর বাইরে অন্য কাউকে তিনি বিষয়টি জানানোর কথা ভাবতে পারেন না সামাজিক নিগ্রহের ভয়ে৷ দীর্ঘদিনের পরিচিত একজনকে জানিয়েছিলেন৷ পরে সেই ব্যক্তি তাঁকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন৷ তাঁর কাছে দশ হাজার টাকা দাবি করে বলেন, টাকা না দিলে বিষয়টা সবাইকে জানিয়ে দেবেন৷ ‘‘আমার একটি ট্যাব ছিল, টাকা দিতে না পারায় সেটি দিয়ে আসতে হয়েছে,” বলেন আসিফ৷

অনলাইনভিত্তিক কমিউনিটি ‘বয়েজ অব বাংলাদেশ’ ২০১৫ সালে ৫৭১ জন সমকামীর ওপর একটি জরিপ চালিয়েছিল৷ তাঁদের মধ্যে ৫৪ দশমিক তিন ভাগই সব সময় এই ভয়ে থাকেন যে, কেউ হয়তো তাঁদের পরিচয় জেনে ফেলতে পারে৷ ঐ জরিপে ৬৬ দশমিক ছয় ভাগ জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ পাঁচ জনের কাছে তাঁরা বিষয়টি প্রকাশ করেছেন৷ আসিফ  একই কথা জানান৷ তাঁর আশেপাশের, কিংবা পরিবারের তেমন কেউ বিষয়টি জানেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রচুর সমকামী আছে, সেটা সবাই জানে, তারপরও তাঁদেরকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়৷ সামাজিক, পারিবারিক সবক্ষেত্রেই তাঁরা নিগ্রহের শিকার হন৷”

আরেকজন সমকামী আশরাফ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘‘কৈশোরে সমবয়সীরা যখন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়, আমরা তখন সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হই, বিষয়টি এক ধরনের হীনন্মন্যতা তৈরি করে৷ এরপর শুরু হয় পারিবারিক চাপ৷” এই কারণে তিনি বছর দুয়েক আগে পরিবার ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ বলেন, ‘‘যখন মনে হলো আর সহ্য করতে পারছি না, তখন আলাদা হয়ে যাই৷”

তিনি নিজে সমকামীদের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, যার নাম নবপ্রভাত৷ এর যাত্রা শুরু হয়েছে এক বছর হলো৷ দায়িত্বশীল সদস্য আছেন ১১০ জন, এর বাইরে সাতশ’ থেকে আটশ’ জন বিভিন্ন সময়ে তাঁদের সেমিনারগুলোতে অংশ নিয়েছেন বলে জানান আশরাফ৷ ‘‘যাঁরা নিজেদেরকে অপরাধী ভাবে, পাপী মনে করে, তাঁদের আমরা যাই, বোঝানোর চেষ্টা করি যে, আমরা স্বাভাবিক মানুষ৷” কিন্তু বিষয়টি হয় সম্পূর্ণ গোপনে।

 ‘সমকামীদের পারিবারিকভাবে নির্যাতনের শিকারই বেশি হতে হয়’ আমারই একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেছিলেন, গত বছর খুলনায় তাঁদের এক বন্ধুকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়৷ সেই রাতেই সে আত্মহত্যা করে৷ ‘‘এরকম অনেক ঘটনাই আছে, যার মধ্যে পারিবারিকভাবে নির্যাতনের ঘটনাই বেশি৷”

আমরা আপনাদের মতোই সুস্থ মানুষ। আমাদের কোন মানসিক রোগ নেই।জুলহাজ এবং তনয় কে অবানবিক ভাবে গলা কেটে হত্যা করে ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন। তাদের পরিবার এখনো বিচার পাননি। সরকার আমাদের প্রোটেকশন দিতে চান না। উলটা যারা এই এলজিবিটির সাথে যুক্ত তাদেরকে সকলকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে চান সরকার। আপনাদের যৌন মিলন যদি স্বাভাবিক হয় তবে আমাদের মতো উভয়কামি মানুষদের যৌন মিলন স্বাভাবিক নয় কেন? আমাদেরকে বিচারের আওতায় নেয়া হবে কেন?