প্রকৃত অর্থে যতদিন না নারী-পুরুষ সমতা অর্জন নিশ্চিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বোধ হয় নারীকে পুরুষের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।পুরুষ নিজের পুরুষত্বকে জাহির করতে যেয়ে ভুলেই যায় যে, তার পৃথিবীতে আসার পিছনে সবথেকে বড় ভূমিকা কোনো নারীর ছিল।তাই অন্য নারীকে অসম্মান করতে, তাকে দমিয়ে রাখতে, নির্যাতন করতে সে দু’বার ভাবে না। নারীরা যদি গতানুগতিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে না পারে, তাহলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।বরং সমাজের কর্তা স্থানীয় পুরুষরা তাকে আরো বেশি করে মাটিতে মিশিয়ে দেবে। ঠিক যে মুহূর্ত থেকে নারীরা নিজেদের কে নারী মনে না করে মানুষ বলে মনে করবে,নিজেদেরকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের স্থান দেবে ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই নারীর অধিকার অর্জন নিশ্চিত হওয়া শুরু হবে।
কিন্তু পৃথিবীর সব পুরুষকে একই মাপকাঠিতে বিচার করা রীতিমতো অসম্ভব। কারণ, পৃথিবীর সব পুরুষ যদি একই রকম হতো তাহলে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে কখনোই নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে দিতেন না।দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী কাদম্বিনী গাঙ্গুলী কে কখনোই বাংলার প্রথম মহিলা ডাক্তার হতে দিতেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একের পর এক লেখায় নারীকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাতেন না এবং যৌতুক আদান প্রদানের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করতেন না।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কখনোই বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করতেন না কিংবা রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বিলোপ করতেন না। বেল হুকস ,জন স্টুয়ার্ট মিল কখনোই নারীবাদীদের পাশে তাদের সহযোদ্ধা হয়ে দাঁড়াতেন না। আসলে এসব মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল বলেই আজ সভ্যতার এতটা বিকাশ সাধন সম্ভব হয়েছে। ঠিক যেমন অসংখ্য পুরুষ নারীদের পাশে তাদের অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টায় সঙ্গী হয়েছিলেন ঠিক তেমনি অসংখ্য নারী যারা কিনা নারী হওয়া সত্ত্বেও বারংবার এক নারী হয়ে অন্য নারীর অধিকার অর্জনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আমাদের সমাজে এমন হাজারো শাশুড়ি রয়েছেন যারা কিনা পুত্রবধূকে নিজের প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন। পুত্রবধূকে নিজের পায়ের তলায় দমিয়ে রাখতে চান। কোনো বিবাহিত নারী অর্থ উপার্জনকারী হলে তার উপার্জিত সমস্ত অর্থের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় শাশুড়ি কিংবা স্বামী অথবা উভয়েই। এমন ও নারী আছে যারা কিনা এক নারী হয়ে অন্য নারীর উন্নতি হতে দিতে চান না এবং সমাজের শৃংখলার নামে বিভিন্ন নিয়ম-নীতির বোঁঝা অন্য নারীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এই যে সমাজের নারীদের এক নারী হয়ে অন্য নারীর বিপক্ষে দাঁড়ানোটা এটি সমাজের এক নির্মম বাস্তবতা ছাড়া আর কিছুই না। এই বিষয়টি ভারতের অ্যানিমেশনের জনক হিসেবে পরিচিত রাম মোহন “মিনা কার্টুন”এর মাধ্যমে খুব সহজ ও সাবলীল ভাবে তুলে ধরেছেন। এখানে মিনা কোনো প্রশংসনীয় কাজ করলে খুব সহজেই মিনার বাবা তাকে সমর্থন করেন , যিনি একজন পুরুষ। কিন্তু অপরদিকে খুব অযৌক্তিকভাবে মিনার বিপক্ষে এবং তার ভাই রাজুর স্বপক্ষে থাকেন মিনার দাদী, যিনি একজন নারী। আর সমাজের এমন পরিস্থিতি কখনোই কাম্য নয়।