.
একটি কথা প্রচলিত আছে, ”সৃষ্টিকর্তা একজনই”। যখন আমি ভাবি, সৃষ্টিকর্তা একজন কিন্তু তার সৃষ্ট মানুষ নানারকম, কেন? খৃস্টান ধর্মে বলে, ” ঈশ্বর তার নিজের স্বরূপে মানুষ সৃষ্টি করলেন”! নিজের স্বরূপে মানুষ সৃষ্টি করলে এক মহাদেশে মানুষ দুধের মতো ফর্সা, আর এক মহাদেশে কালো, কেন? ঈশ্বরের তবে কত রূপ?
প্রত্যেক ধর্মেই কম বেশি বলা আছে যে ধর্মের সঠিক পথ দেখাতে প্রবক্তা বা নবী বা সাধু ব্যক্তিদের পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়! তবে এই যে ধর্ম নিয়ে হাজার বছর ধরে এত টানাটানি, মারামারি, খুনাখুনি, রক্তবন্যা বইছে পৃথিবীতে তার থেকে রেহাই দিতে সৃষ্টিকর্তা কেন নতুন কোনো উদ্ধারকর্তা প্রেরণ করেন না?
কত নির্দোষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে ধর্মের নামে, সৃষ্টিকর্তা তা মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছেন কেন? সৎ মনে চাওয়া প্রার্থনা যিনি ফেলেন না, তিনি তার গুণগ্রাহীদের আর্তনাদ, অত্যাচার থেকে রক্ষাপাওয়ার রোদন কি শোনেন না? তবে সেগুলো কেন তিনি পূরণ করেন না?
যদি সৃষ্টিকর্তা থেকেই থাকেন তবে পৃথিবীতে এত্ত রকম ধর্মের বিচরণ তিনি থামান না কেন? তিনি যদি সকলের মঙ্গলই চান তবে, যারা ভুল ধর্ম পালন করে নিজেদের মূল্যবান জীবন অপচয় করছেন তাদের সঠিক পথে আনেন না কেন?
বিশ্বাস করলাম, সবাইকে সৃষ্টি করেছেন একজনই, তাইতো সবার জন্মের ধরণ এক, মৃত্যু ও এক! তবে বিগ বাং তত্ত্বের সত্ততা তো অশ্বিকার করা যায় না ! পৃথিবীতে উপস্থিত সকল কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে, সেগুলো তো মিথ্যা নয় ? পৃথিবীতে প্রাণী জীবন ধারা চক্রাকারে বিরাজমান থাকলে, সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন কোথায়, বা ভূমিকা কোথায়? মানুষ আমি যেভাবে জন্মেছি, সেভাবেই একদিন মারা যাবো, তবে জীবিত থাকার সময় টা আমাকে ভগবানের নাম জপতে হবে কেন? আমি যদি মানবিক শিষ্টাচার মেনে চলি তবে আমার জীবনে ধর্মের কি প্রয়োজন? মৃত্যুর পর স্বর্গ বা নরক নামক ২টা জায়গা রয়েছে, সেগুলোতে স্থান পাওয়ার জন্য? সেগুলোতে স্থান কে কে পেয়েছে, কি প্রমান আছে? ধরে নিলাম, স্বর্গ বা নরক নামক ২টা স্থান রয়েছে, তাহলে আমি যদি মানবিক ধর্ম মেনে চলি, সারাজীবন সৎ, ন্যায় ও মনুষত্বের পথে চলি তবে কি মৃত্যুর পর আমি আমার কর্মের পুরুষ্কার হিসেবে স্বর্গে যাবো না ? নাকি, সারাজীবন ভগবানের পূজা না করার জন্য তিনি আমাকে স্বর্গে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন? ভগবান কি চান, মানুষ ভালো, সৎ, ন্যায়ের পথে চলুক, নাকি তিনি চান মানুষ ভগবান ভগবান করুক? তার কাছে যদি মানুষের ভালোত্ব টাই অধিক শ্রেয় হয়ে থাকে, তবে কি তিনি তাদের নরকের আগুনে পোড়াবেন যারা ভালোমানুষ কিন্তু ভগবানের নাম জপেনি?
শিশুদেরকে ধর্মের অ আ ক খ বোঝার আগেই স্ব স্ব ধর্মে দীক্ষিত করে দেন অভিভাবকেরা, যা তাদের ধর্মের ওপর মানসিকভাবে নিভরশীল করে তুলে! ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে ধর্মপালন করানো হয় যার কারণে তারা আর বড় হয়ে সেই ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রশ্ন করতে ভয় পায়।
.
বর্তমান যুগের আধুনিক কিছু মা–বাবা যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাদের সন্তান বড় হয়ে তার মা–বাবার ধর্মকে জেনেবুঝে গ্রহণ করবে, সেসব বাবা–মাকে পড়তে হয় চরম বিপত্তির মুখে । প্রথমত, আত্মীয়দের রোষানলের মুখে পড়তে হয়, পরিচিতদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হতেহয়। দ্বিতীয়ত, ধর্মভীরু লোকেরা একে ধর্মের প্রতি অমর্যাদার তকমা লাগিয়ে, করিজুরি করে ধর্মের কিছু অনুশাননএর ভয় দেখিয়ে চেষ্টা করে সেই সেই বাবা–মায়ের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে। সবশেষ, সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলেতো ধর্ম নিয়ে অনেক কাঠ–খোর পোড়াতে হয়, ‘ধর্মহীন‘ তো বলাই যাবে না !!
.
বাংলাদেশে ‘ধর্মহীন‘ বলে কোনো কোটা নেই, যেকোনো অফিসিয়াল কাজে এই প্রশ্নের উত্তর তো দিতেই হয় আর নাস্তিক বললে তো সাথে জবাবদিহি করার ও গাল–মন্দ শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বাংলাদেশে ধর্ম করা বা না করা কারো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে না, তা নাহলে যারা নিজেদেরকে নাস্তিক বলে প্রকাশ করেছি তাদের পরিবারের, আত্মীয়ের ও সমাজের তোপের মুখে পড়তে হতো না, উপরোন্ত মৌলবাদী দলের অস্রের আঘাতে অনেককেই প্রাণ হারাতে হতো না! বাংলাদেশে তুমি নাস্তিক হলে পরিবারের মতে তোমার বিয়ে হবে না, কারণ কেউ নাস্তিক ছেলে বা মেয়েকে নিজের পরিবারের অংশ করতে চায় না|
.
নাস্তিক বললেই লোকে ভাবে আমি বেয়াদপ, তাই ধর্ম কর্ম করি না। যেহেতু আমি ধর্মে বিশ্বাসী না তাই আমাকে বিশ্বাস করা যায় না, কারণ আমার কোনো মনুষত্ব বোধ নেই, সততা নেই, পাপ–পুণ্যের ভয় নেই । মানুষ আমার পরিবারকে গাল-মন্দ করেছে এই বলে যে আমাকে যথার্থ ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয় নাই, আমার অভিভাবক আমাকে মানুষ করতে পারে নাই । ভবিষতে আমি যে আমার সন্তানদেরকে যথার্থ ভাবে পালন করতে পারবো না সেটা নিয়েও সবাই একমত পোষণ করেছে, কারণ আমিতো আমার সন্তারদের ধর্মীয় শিক্ষা দেব না তাই তারা তো ‘অমানুষ‘ হবে। বাংলাদেশের মতো একটা দেশে আস্তিক বা নাস্তিক হওয়ার আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত শুধু আমাকে একা না বরং আমার পরিবারকেও বহন করতে হয় তাও আবার আমার পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত। আমি নাস্তিক বলায় অনেকেই আমাকে অসংযত প্রস্তাব দিয়েছে এই ভেবে যে আমার তো ধর্ম নেই তাই আমার কোনো মূল্যবোধ নেই, সততা নেই।
আমি নাস্তিক, কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নোই তবে আমি মানবতার ধর্মে বিশ্বাসী, সততায়, উদারতায় বিশ্বাসী। ধর্ম করে নয়, কর্ম করায় বিশ্বাসী । দেখা যাক, ওপরওয়ালা আমার কর্মকে প্রাধান্য দেন নাকি, যারা গরিবের ন্যায্য পাওনা কেড়ে নিয়ে হজে গিয়ে পাপ ধুয়ে আসে, যারা পাদ্রীর কাছে পাপস্বীকার করে এসে পুনরায় সেই একই পাপ করে তাদের প্রাধান্য দেন !!