আমরা গরমের দেশের মানুষেরা সহজেই উত্তেজিত। রাজনীতি, মেয়েঘটিত, আর ধর্ম হলো চরম তরম উত্তেজিত হওয়ার মতো প্রিয় বিষয় আমাদের। আগাপাশ তলা না ভেবে হুঙ্কার ছেড়ে ঝাপিয়ে পড়ি যুদ্ধে। কোথায় কে একখান কার্টুন আঁকলো তাই নিয়ে মার মার কাট কাট, সালমান রুশদী কিংবা তাসলিমা কিছু লিখেছে, কল্লা কাটো। এরমধ্যে অনন্তকাল থেকে পাশাপাশি থাকার জন্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যতার কারনে এ উপমহাদেশে হিন্দু – মুসলিম বৈরীতা চার্টের টপ লিষ্টেড আইটেম যাকে বলে। কিন্তু আদতে ধর্মগুলোর মধ্যে অমিলের থেকে মিলই বেশি। হিন্দু মুসলমান গুতাগুতি কেনো করে সেই নিয়ে আজ একটু ধর্ম রংগ।
দুই দলের ধর্মান্ধরাই একে অন্যের বাড়িতে অন্ন গ্রহন করেন না। দু’দলের একই সমস্যা, জাত যাবে। একদল হালাল ছাড়া খাবেন না আবার অন্যদল মুসলমানের ছোঁয়া বলে খাবেন না।
শুদ্ধ হওয়ার জন্য দু’দলের লোকেরাই উপবাস করে থাকেন।
দু’দলেরই পাপ মোচন করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ও সময় আছে।
বিশুদ্ধ পানিও আছে। একদলের আছে জমজমের পানিতো অন্যদলের আছে গঙ্গাজল।
দু’দলই তাদের পবিত্র কাজের সময় সেলাই করা বস্ত্র পরিধান করেন না। মুসলমানরা হজ্বের সময় আর হিন্দুরা পূজার সময়।
পশু উৎসর্গে ধর্মের ভূমিকা এ উপমহাদেশের দু’দলের কাছেই অপরিসীম। স্বর্গে যাওয়ার জন্য দু’দলই নিরীহ পশুদের উৎসর্গ করে থাকেন কিন্তু ভিন্ন পদ্ধতিতে। পদ্ধতি ভিন্ন হলেও বস্তু একই।
যদিও মুহম্মদ, রাম, কৃষ্ণ সবাই শান্তির বানী প্রচার করার দাবী করেছেন কিন্তু তারা শান্তির চেয়ে অশান্তি থুক্কু যুদ্ধই করেছেন বেশি।
এই তিনজনের জীবনেই নারীদের অপরিসীম ভূমিকা ছিল, বৈধ এবং অবৈধ পন্থায়।
দুই ধর্মেই পুরুষের নীচে মেয়েদের স্থান, স্বামী পরম গুরু।
দু’দলই পাপমোচনের আশায় হুজুর কিংবা পূজারীকে অজস্র দান ধ্যান করে থাকেন। তার বাইরে কেউ মসজিদ বানানতো কেউ মন্দির।
মৃত্যুর পর অন্তত সুখ, সাথে ঊর্বশী, হুর, আঙ্গুর বেদানার প্রতিশ্রুতি উভয়েই দেন আমাদেরকে।
দু’দলেরই ধর্মানুভূতি অত্যন্ত প্রখর। ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা আর শ্লীলতাহানি করা একই পর্যায়ের অপরাধের স্তরে পরে। কথার আগে তাদের ছুরি চলে। ভন্ড নাস্তিক আর আঁতেলে দল ভর্তি। সবারই রক্ত লাল আর মরে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক কম জানা সত্বেও তাদের ধর্মের নামে এই অপরিসীম যুদ্ধ চলছে এবং চলতেই থাকবে।