ইসলাম এই দেশটাকে ছিন্ন-ভিন্ন করেছে

৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছে থেকে স্বাধীনতা লাভের চেয়ে তৎকালীন সময়ে বড় হয়ে উঠেছিল দ্বিজাতি তত্ত্ব। অনেক মুসলমান মানুষরা চায়নি স্বাধীন হয়ে হিন্দুদের সাথে একি দেশে বসবাস করতে। যার জন্য সৃষ্টি হয় দুটি পৃথক দেশের।

সেই দ্বিজাতির তত্ত্বের চাপে ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তুরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন হলো আমাদের বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার অল্প কয়েকদিনের মাঝে অসাম্প্রদায়িক স্বপ্ন ও চেতনাকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে ঘোষণা দেওয়া হলো, সবার আগে আমরা বাঙালি, তারপর আমরা মুসলমান। শুরু হলো ধর্ম ও জাতি তত্ত্বের ভাগাভাগি। সেই ভাগাভাগির বিষে সপরিবারে খুন হলেন জাতির পিতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি।

পরবর্তী সরকারগুলো সেই বিষকে পাকিস্তান থেকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে আমদানি করে নিয়ে আসলো বাংলাদেশ নামক লাল সবুজের দেশটিতে। দেশের মাটিতেই বপিত হলো সাম্প্রদায়িকতার বীজ। সংবিধান থেকে ঝেটিয়ে বিদেয় করা হলো অসাম্প্রদায়িকতাকে। তার জায়গায় স্থান নিলো ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করা হলো ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদ।

এর পরবর্তী সরকার আরো এক ধাপ এগিয়ে, অসাম্প্রদায়িকতাকে মধ্যমা দেখিয়ে রাষ্ট্রের সুন্নতে খৎনা করে রাষ্ট্রের ধর্ম করে দিলো ইসলাম।

তারপর একের পর এক সরকার এসেছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে সাম্প্রদায়িকতার চারাগাছকে পানি দিয়ে, সার দিয়ে, বেড়া দিয়ে রক্ষা করেছে। বিশাল বট বৃক্ষে পরিণত করেছে। যার জন্য মাথাচাড়া দিয়েছে জঙ্গিবাদ, লাগামহীন হয়েছে সংখ্যালঘু নির্যাতন। মুক্তচিন্তার মানুষদের কুপিয়ে ফেলে রাখা হচ্ছে পথে ঘটে, রাস্তায়। শিক্ষক থেকে বাউল এমনকি গির্জার ফাদার, মঠের ভিক্ষু, মন্দিরের পুরোহিতদের জবাই হতে হচ্ছে প্রতি মাসে। বাদ যাচ্ছে না শান্তি প্রিয় অসাম্প্রদায়িকতার বিশ্বাসী ইসলাম ধর্মের হুজুররা।

ধর্মীয় অন্ধত্বের চাপে অন্ধ জাতি আজ বেগম রোকেয়াকে চেনে না। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছত্রীরা বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক নুরজাহান বেগমের সাথে গুলিয়ে ফেলেন বেগম রোকেয়াকে। এখানে নামে নামে জমে টেনেছে, তারা বেগম বেগম মিল দেখেছে।

বীর শ্রেষ্ট্র রুহুল আমিন আর নূর মোহাম্মদকে চেনে না আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। তাদের কাছ থেকে আর কি ধরণের পরিকল্পনা আশা করতে পারি আমরা?

সাতজন বীর শ্রেষ্ট্র আর সাতজন রাজাকারকে পাশাপাশি রেখে জনপ্রিয়তার ভোট করুন। দেখবেন রাজাকাররা বিপুল ভোট জয়ী হবে। এছাড়াও দেখা যাবে বেশিরভাগ মানুষরা বীর শ্রেষ্ট্রদের চেনেই নাই। রাজাকারদের তারা ভালোভাবে চেনে, কারণ তারা ধর্মের লোক, সাম্প্রদায়িকতার বৃক্ষের পাহারাদার, সাম্প্রদায়িকতা শেখানোর শিক্ষক।
সেই সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষায় শিক্ষিত! জনগণ আজ বুক ফুলিয়ে বলে, হাজারটা ১৬ ই ডিসেম্বরের থেকে একটি জুম্মাবার উৎকৃষ্ট!

সাম্প্রদায়িকতার বীজ আজ গভীর থেকে থেকে গভীরে পৌঁছে গেছে। আমরা এখন আবার জাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। তাই পিটিয়ে পুড়িয়ে হিন্দু, সাঁওতাল, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, আদিবাসী, বৌদ্ধদের দেশ ছাড়া করে শতভাগ ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখছি। এই সুযোগে কোন সাম্রাজ্যবাদী বাংলাদেশ দখল করলে তার দ্বায়ভার আমাদের। আমাদের অসাম্প্রদায়িকতা থেকে সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠার বিবর্তনে। সেই সময় ব্রিটিশরা যেমন সুযোগের সৎ ব্যবহার করেছিল। অত্যাচারিত হিন্দুরা তখন ভেবে ছিল বিদেশী ইসলাম প্রচারকারি মুসলমান শোষণ থেকে ফিরিঙ্গি শোষক হয়তো ভালো হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের যেকোন কিছু হলে তার দ্বায়ভার আমাদের। দেশ পুনরায় পাকিস্তান হয়ে গেলে অথবা আজকেই এই পাকিস্তানপন্থার দ্বায়ভারও সেই আমাদেরই।