একটি মহামূল্যবান রাত ও আমার বিশ্বাসের চ্যালেঞ্জ

 

একজন জনৈক আস্তিক আমার সাথে পরাজিত হয়ে চ্যালেঞ্জ করলো লন্ডনের একটি মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টারে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহন করতে। সেখানে অনেক বড় মাওলানা এবং মুফতিরা প্রতি সপ্তাহের সোমবার প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং তাফসিরুল কুরআন নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। তার মধ্যে একজন ইজিপ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৪ বছর পড়াশুনা করে এসেছেন।

তো দুরু দুরু বুকে মনে সাহস সঞ্চয় করে গেলাম সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিতে। আমার সেই পরিচিত আস্তিক ভদ্রলোক আগে থেকেই কিছু লোকজনকে বলে রেখেছিলেন যে আমি যাচ্ছি।

তো যাওয়ার পর দুই তিনজন আমাকে নিয়ে বসলেন, বসা মাত্রই বাকি মুসল্লিরা আমাদের ঘিরে বসে পড়লেন কৌতূহল বশত। তো একজন বললেন আপনার কি কি প্রশ্ন আছে আমাদের করতে পারেন, বড় মাওলানার আসতে দেরি হবে।

প্রথম প্রশ্নটা করলামঃ

কুরানে ৩ ওয়াক্ত নামাজের কথা বলা হলেও মুসলিমরা ৫ ওয়াক্ত নামায কেন পড়ে? রেফারেন্স দিলামঃ

১) জোহরের নামাজঃ কুরআন ২ঃ২৩৮
২) ফজরের নামাযঃ কুরআন ২৪ঃ৫৮
৩) এশার নামাযঃ কুরআন ২৪ঃ৫৮

এছাড়াও তিন ওয়াক্ত নামাজের কথা বলা আছে কুরআন ১১ঃ১১৪ নাম্বার আয়াতে।

হালকা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। তিন চারজন বিভিন্ন বই, অমুক তমুক তাফসিরুল কুরআন নামানো শুরু করলেন। তারপর নিজেরাই নিজেদের মধ্যে কুরানের আয়াত বিড়বিড় করা শুরু করলেন। একজন বলে বসলেন, আসলেই তো তিন ওয়াক্তের কথা বলা আছে। তারপর আবার বিড়বিড়ানি শুরু। একজন কুরানের ১১ঃ১১৪ নাম্বার আয়াত কে ব্যবচ্ছেদ করে চার ওয়াক্ত পর্যন্ত বানালেন কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত আর হয়না। তারপর অমুক তমুক তাফসির বের করে আমাকে বুঝানোর আবারো চেষ্টা চলল কিছুক্ষন। আমি আবারো প্রশ্নটা করলাম, কুরানে স্পষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্তের কথা বলা আছে, নাকি নাই। একজন বলল, কুরানে তো কিভাবে নামায পড়তে হবে এই কথাও তো বলা নাই। বুঝলাম এদের দিয়ে এই প্রশ্নের কিছু হবেনা।

গেলাম দ্বিতীয় প্রশ্নেঃ

আল্লাহ কুরানে বলেছেন আমি সকল জীবকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আমি তো জানি এমন অনেক জীব আছে যাদের জোড়া হয়না। যেমন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ওয়ার্ম, কেঁচো এছাড়াও অনেক সামুদ্রিক প্রাণী যাদের কোন নির্দিষ্ট লিঙ্গ নেই।

উত্তর আসলোঃ বিনা শর্তে কুরআনকে বিশ্বাস করতে হবে। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে, আল্লাহর সীমাবদ্ধতা নাই। বিশ্বাস করলে করেন, না করলে নাই। একদিন বিজ্ঞান হেরে যাবে, আল্লাহর জয় হবে। সবাই বলেন, সুবহানাল্লাহ। সবাই চিৎকার দিয়ে উঠলো , ” সুবহানাল্লাহ ”। কি আর বলব, চুপচাপ চলে গেলাম তৃতীয় প্রশ্নেঃ

জিব্রাইল মুহম্মদের বুক চিরে হৃৎপিণ্ড বের করে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দেন এবং তাকে নিস্পাপ বানিয়ে দেন, কিন্তু আমরা জানি মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা, জ্ঞান, ভাল মন্দ বাছাই করার ক্ষমতা সব কিছু মস্তিস্কে থাকে। জিব্রাইল মস্তিস্ক রেখে কেন হৃৎপিণ্ড ধুইতে গেলেন?

উত্তর আসলোঃ যে সমস্ত ঘটনা আপনার ঈমানের কাজে আসেনা, আপনার জান্নাতে যাওয়ার কাজে লাগেনা সেই সমস্ত ব্যাপার এড়িয়ে যাওয়া ভাল, সেইসব নিয়ে এত চিন্তা না করলেও চলবে। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম।

এরই মধ্যে বড় মাওলানা চলে আসলেন, কিছু লোক গিয়ে বড় মাওলানার কানে গুজুর গুজুর করতে লাগলেন। মসজিদে উপস্থিত সবাই একত্রিত হলেন। বড় মাওলানা বললেন, কার কি প্রশ্ন আছে করতে পারেন। একজন আমাকে ইঙ্গিত করে বলে উঠলো, উনি আজকে নতুন এসেছেন, তাই ওনাকে সুযোগ দেয়া হোক।

তো আমি একটু কাশি দিয়ে শুরু করলাম,

কুরানে বলা আছে, সূর্য পঙ্কিল জলাশয় থেকে উদিত হয়, এবং সারাদিন শেষে আল্লাহর আরশের নিচে আশ্রয় নেয় এবং পরের দিন উদয়ের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। এছাড়াও বর্ণিত আছে, জুল্কারনাইন সূর্যোদয়ের প্রান্ত এবং সূর্যাস্তের প্রান্তে গিয়েছিলেন। যদি তাই হয়, তাহলে হিসাবমতে পৃথিবী সমান্তরাল, এমনকি কুরানের অনেক আয়াতে পৃথিবীকে কার্পেটের মতো বিস্তৃত বলা হয়েছে।

কিন্তু সৌরজগতের মডেল অনুযায়ী সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, এবং এটা প্রমানিত যে, পৃথিবী গোলাকার, সমান্তরাল নয়।

বড় মাওলানা উত্তর দিলেনঃ

এই সৌরজগতে অনেক সূর্য আছে, যেগুলি প্রতিদিন ব্ল্যাকহোলের ভিতর হারিয়ে যায়, আল্লাহ সেই সূর্যের কথা এখানে বলেছেন।

আমি প্রায় হেসেই দিয়েছিলাম কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করলাম। তারপর শুরু হল ওনার আল্লাহর গুণকীর্তন। ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা…

ওনার গুণকীর্তন শেষ হলে নামাজের সময় না হলেও তাড়াতাড়ি করে সবাইকে নামাজের জন্য দাড়াতে বললেন।

আমিও সময় নষ্ট না করে বাইরে গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে মনে মনে বললামঃ

”সত্যি হুমায়ুন আজাদ স্যার, বড় বিচিত্র এই ইসলাম ধর্ম”।