১। দারিদ্রতার দুষ্ট চক্রের মতো বাংলাদেশ অসততার একটা দুষ্ট চক্রে পড়ে গেছে।
যেমন- মানুষ অসৎ বলে তারা অসৎ রাজনীতিবিদদের নেতা বানায়। আবার অসৎ রাজনীতিবিদ সমাজকে অসৎ বানায়। এই চক্র ভাঙ্গার কাজটি জনগণের নাকি রাজনীতিবিদদের?
পৃথিবীর এমন কোন উদাহরণ নাই আগে জনগণ ভাল হয়েছে, পরে তারা রাজনীতিবিদদের ঠিক করেছে। বরং উল্টোটা দেখা যায়।
জাপানীরা তাদের প্রতিবেশী দেশে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ থেকে ১কোটি ৪০ লাখ লোক পৃথিবীর নিকৃষ্টতম উপায়ে হত্যা করেছে। সাধারন মানুষ এমন নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল যে – টুকিওর প্রধান পত্রিকা “টুকিও নিচি নিচি সিমবান” এ ১৯৩৭ সালের ১৩ই ডিসেম্বরের একটা নিউজ থেকে অনুমান করা যায়। গুলি না করে তলোয়ার দিয়ে কে কত মানুষ মারতে পারে এমন প্রতিযোগিতার প্রতি বাহাদুরি দেখিয়ে বোল্ড হেডলাইনে ছাপা হয়- “ ইনক্রেডিবল রেকর্ড- মোখাই ১০৬( ১০৬ মানুষ হত্যা করেছে) ও নোডা ১০৫ (১০৫ জন মানুষ হত্যা করেছে)। উভয়েই সেকেন্ড লেফটেটেন্ট। গো ইন্টু নেক্স ইনিংস।” এ রকম আরো বহু নিষ্ঠুরতার উদাহরণ দেয়া যায় যা থেকে সাধারন মানুষের ( কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে) তখনকার মন মানসিকতা বুঝা যায়।
সেই জাপানী ও জার্মানীর একই মানুষ এখন কি করে অল্প সময়ের ভেতর ঘুরে দাড়িয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উদার, ভাল ও দয়ালু মানুষে পরিনত হল?
কোন সন্দেহ নাই- সমাজ, ধর্ম, মানুষের আচার, ব্যবহার, মানবিকতা সবই রাজনীতি থেকে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।
সাহিত্যের ভাষায় ও রাজনীতিবিদদের মুখে হয়তো বলা হয়- জনগণের ইচ্ছাই সব। শুনতে খারাপ লাগলেও আসলে রাজনীতিবিদেরা জনগণকে গরুর পাল ভাবে আর তারা নিজেদেরকে রাখাল ভাবে।
২। দেশের সকল দুর্ঘটনার পরপরই আওয়াজ উঠে – আইন আরো কঠোর হোক, আইনের প্রয়োগ আরো কঠিন হোক, শাস্তি আরো বেশী হোক ইত্যাদি। কিন্তু সমাজ যদি রাজনীতিবিদেরা নষ্ট করে দেয়, বা নষ্ট রাজনীতিবিদ যদি খাঁচা ধরে ঝাকাতে থাকে, আর জনগণকে যদি সেই ঝাকানো খাঁচার ভেতর শান্ত হবার কথা বলে, তবে সমাজ কতটুকু শান্ত হবে?
৩। একটা মানবিক সমাজে রাজনীতিবিদেরা থাকতে হয় বাড়ির কেয়ার টেকারের মতো। একজন কেয়ারটেকারের মুখে ও তার চিন্তা-চেতনায় আমি দিয়েছি, আমি করেছি, ইচ্ছা হলে দেব- ইচ্ছা না হলে দেবনা ইত্যাদি আমি আমি ভাব জঘন্য কুৎসিত শুনায়।
সকল সভ্য মানবিক উন্নত সমাজেই রাজনীতিবিদদের ভুল হলে কেয়ারটেকারের মতোই সাবান দিয়ে ঘষা দিয়ে ধুয়ে দেয়া যায়, বদলানো যায়। কেয়ারটেকারের চাকরির মতোই না পোষালে বিদায় হও। তাদের নিয়ে নির্লজ্জ বাঙ্গালীদের মতো কেউ পুজা করেনা।
আগুন ধিকিধিকি আরো ছড়িয়ে পড়বে। এত বিপুল জনসংখ্যার দেশে কঠোর আইন করে ও কঠোর আইন প্রয়োগ করে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ছড়িয়ে পড়া ধিকিধিকি আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
যারা মনে করছেন মানবিক সমাজ গঠন কাজটা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ, তাদের আবার স্মরণ করিয়ে দেয়- জাপান ও জার্মানির মতো এক সময়ের নিষ্ঠুর অথচ অল্প সময়ে ঘুরে দাড়ানো মানবিক গনতান্ত্রীক সমাজগুলোর কথা!