এই বাংলাদেশটি কার?

এদের দোষটা কি? এরা চাকরি চায়? তা এমন উন্নয়ন করলেন মাননীয়া যে চাকরি চাইলে মসনদ কেঁপে ওঠে!

দেশের শিক্ষিত তরুণদের ৩০ ভাগ বেকার। এই মুহূর্তে বেসরকারি বিনিয়োগ সর্বনিম্নে, ব্যাংকগুলো ভঙ্গুর, ২ শতাংশ হারে কর্মসংস্থান কমছে।

যতটুকু বোঝা যায় আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগের শিকড় গ্রামে। এরা ফিরতে চায়না কেন? গ্রাম বা জেলা শহরগুলোতে কর্মসংস্থান তৈরী হয়েছে? পল্লী অর্থনীতিতে বিনিয়োগ নেই। ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলিয়ে লোকসান দিতে হয়। এর মধ্যে যারা শহরের ডিগ্রি নিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন, সরকারি স্কুল নেই বলে নিজের শ্রমে স্কুল গড়ে তুলেছেন, কেমন আছেন তারা? প্রেসক্লাবে স্যালাইন ঝুলিয়ে তারা অনশন করছেন। দেখে আসুন প্লিজ, আজকে ষষ্ঠ দিন। ১০ বছর ১৫ বছর ধরে গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করেও, ২০১০ সালে এমপিওর স্বীকৃতি পেয়েও সরকারি পে-রোল পায়নি লাখো শিক্ষক। গ্রামে ফিরে গিয়ে কিছু একটা করতে চাইবে কেন তরুণেরা?

জমি বেচে গহনা বেচে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেছিল ১৫ লাখ ডেসপারেট তরুণ। তাদের বিনিয়োগের টাকাগুলো হাওয়া হয়ে গেলো। ভদ্রলোক এখন পিএমের উপদেষ্টা। অথচ বহু আত্বহত্যা, অনশন, আর আন্দোলনের খবর তখন পত্রিকায় এসেছিলো। ফার্মার্স ব্যাংকে ইনভেস্ট করেছিল হাজার তরুণ উদ্যোক্তা । সর্বশান্ত হয়েছে তারা।

নৌকায় করে, জাহাজে করে, তুরস্ক হয়ে লিবিয়া হয়ে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অর্ধেক মরে, অর্ধেক বেঁচে গত দশ বছরে ইউরোপ গেছে এক লাখ চার হাজার তরুণ। ইউরিপিয়ান ইউনিয়ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দ্রুত ফেরত পাঠাবে তাদের। কত সহজে খরচের খাতায় চলে যাবে একেকটা মানবজীবন।

চাকরি নেই, ব্যবসা করেনা কেন? এই দেশে ব্যবসা করার মতো পরিবেশ আছে ? ট্রেড লাইসেন্স থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, কাস্টমস থেকে গ্যাস/বিদ্যুৎ কানেকশন- প্রতিটা স্তরে, প্রতিটা অফিসে, প্রতিটা মিনিস্ট্রিতে হাঙ্গরের মতো হা করে থাকা একেকটা মুখে বস্তা ভরা টাকা না ফেললে কিছু করা যায় এই বাংলাদেশে?

বেকারত্ব একটা ভয়াবহ ন্যাশনাল ইস্যু। এটা কোনো অবহেলার বিষয় না। বিপুল সম্ভাবনাময় একটা জনগোষ্ঠী দীর্ধদিন ধরে কর্মহীন থাকছে। যখন অন্য সব সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে, তখন সরকারি চাকরি তার জন্যে একটা আশা ভরসার জায়গা। এটা ক্রেইজ নয়, বাংলাদেশের ‘জবলেস গ্রোথ’ বাস্তবতায় বেকারের অগত্যার গতি। আর ৫৫ পার্সেন্ট কোটা সংস্কার বিষয়ে সিভিল এডমিনের বিষেশজ্ঞরাই বিভিন্ন সময়ে মতামত দিয়ে বলেছে, এটা ম্যানিপুলেশনের আখড়া। সংস্কার অপরিহার্য (অথচ দুর্নীতিকে এড্রেস করলে হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের অসম্মান!) !

আন্দোলনকে আপনার স্বার্থপর মনে হতে পারে, জামাত-শিবির কানেকশন নিয়ে আপনি শংকিত হতে পারেন, কিন্তু তাতে করে এই দেশের প্রায় এক কোটি সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত তরুণ যে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে, সেই বাস্তবতা পাল্টে যায়না। আর পৃথিবীর সব হাই প্রোফাইল স্বৈরশাসকদের ভীত নড়া শুরু হয় শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি আর বেকারের চাকরির মতো স্বার্থপর ইস্যুতেই। আরব স্প্রিং, অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট, ২০১২ সালের ইউরোপ, আর সত্তরের ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ের প্রতিবাদী তরুণেরা কারা ছিল?

আর এখন, এদের উপর যে নির্যাতন চলছেই, তার প্রতিকার কি? হল থেকে, বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, মারছে, রিমান্ডে নিচ্ছে, চারদিকে ভয়ের, ত্রাসের রাজত্ব, এটা কার দেশ?