মানুষ অতি ধার্মীক হতে গিয়ে জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে- এরচেয়ে দুঃখের আর কি হতে পারে? প্রবাসী বাবা-মা নিজ সংস্কৃতি ধর্ম যাতে সন্তানরা ভুলে না যায় তার চেষ্টা করেন। বছর বছর আমেরিকা-ইউরোপে বাংলাদেশ-পশ্চিম বাংলা থেকে শিল্পী নিয়ে গিয়ে বাংলা গান, নাচ, কবিতা, নাটক করানোর পিছনে উদ্যোক্তাদের এটাই মূল কারণ। একইভাবে ইউরোপ-আমেরিকাতে মন্দির-আশ্রম, মসজিদ বানিয়ে সেকেন্ড জেনেরেশনকে নিজ ধর্মে রাখার একটা চেষ্টা করা হয়। ছেলে আমেরিকাতে থেকেও বারে যায় না, গার্ল ফেন্ড নাই, মদ-বিয়ার খায় না উল্টো প্রচন্ড ঠাকুর ভক্ত, মন্দিরে গিয়ে পুজা দেয়, পাঠ শুনে কিংবা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, ইসলামী শরীয়ত মেনে দাড়ি রাখছে, হালাল দোকান থেকে জিনিস কিনছে- বাবা-মা তো দারুণ খুশি। আকায়েদের বাবা-মা নিশ্চয় খুশি ছিলো ছেলে ধার্মীক বলে। এমন বহু প্রবাসীর ছেলে গোফ ছাড়া দাড়ি রেখে হালাল খায় আর মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে। তাদের কতজন মনে মনে জনাকীর্ণ কোন সড়কে মানব বোমা হবার স্বপ্ন দেখে, শহীদ হয়ে বিনা হিসেবে জান্নাত লাভের ইচ্ছা পোষণ করে তা আমাদের জানা নেই।
কাউকে আঘাত দেবার ইচ্ছা নেই। আপনারা যেটা মনে করেন সেটাই মনে নিলাম। বলছেন কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে তরুণদের মগজ ধোলাই করা হয়? ইসলামে জঙ্গিবাদ বলতে কিছু নেই।… ঠিক আছে আপনার কথাই সই, এবার একটু ভেবে দেখেন তো, এইরকম কথা তো তাওরাত, বাইবেল, গীতা, ত্রিপিটকের বেলায় উঠছে না? বলছি না ওগুলো খুবই উচ্চমার্গের কোন বই। ঘৃণা, কুসংস্কার, গাধামীতে ওগুলোও কোনটাই পিছিয়ে নেই। তবে তারা কেউ ‘জিহাদ’ করছে না। তার মানে বলছি না ঐ ধর্মের মৌলবাদ নেই। অবশ্যই আছে। হিন্দু মৌলবাদ, বৌদ্ধ মৌলবাদ, খ্রিস্টান মৌলবাদ, ইহুদী মৌলবাদ সবই ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। কিন্তু ‘জিহাদ’ একান্তই ইসলামী বিষয়আশয়। এটা এসেছেই কুরআন-হাদিস থেকে।… বলছেন, জিহাদের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে? আচ্ছা ঠিক আছে আপনার কথাই মানলাম, তো জিহাদের কথিত অপব্যাখ্যা তো আরেকজনের কাছে সহি ইসলাম নাকি? আপনার কাছে না হোক আপনার পাশের জনের কাছে তো বিধর্মী কেটে জিহাদের মাধ্যমে আল্লার শাসন কায়েম করাকে বলে ইসলাম।… এবার হয়ত বলবেন, কে কি করল তাতে আমার কি আসে যায়? আচ্ছা ঠিক আছে অন্যের কথা বাদ। নিজের সন্তানের কথা ভাবুন। সে যে ঠিক কোন ইসলামের অনুসারী হয়ে উঠেছে অতি ইসলামমনস্কতায় তা তো আপনি জানেন না। তাই সন্তান অতি ইসলামমনস্ক হয়ে উঠলে তাকে এখনি ফেরান! তাকে সংস্কৃতি চর্চায় নিয়ে আসুন। গান বাজনা সাহিত্য সিনেমা দিয়ে ভরিয়ে ফেলুন। ইউরোপ-আমেরিকা হলে বহু সংস্কৃতির কোন গ্রুপ সংঘে সন্তানকে ঘেষান। প্রয়োজনে ইউরোপ-আমেরিকার মূল সংস্কৃতিতে তাদের আত্মিকরণ করুন। আপনার ‘অহিংস ইসলাম’ যেমন আছে তেমনি ‘হিস্র ইসলাম’ও আছে। কাজেই অতি ইসলামমনস্কতার বিপদটা মাথায় রাখেন।