দুই দলে মারামারি-বিভক্তি

সুপ্রিমকোর্টের গেইটের ভেতর একদল, বাইরে রাস্তায় আরেকদল। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না কি করে এই বুঝমান মানুষগুলো রাস্তার ইট ভেঙ্গে পরস্পকে ঘায়েল করার জন্য ছুঁড়ে মারছে! এরকম একেকটা ইটের খন্ডের একটা কারুর মাথায় এসে লাগলে স্পর্ট ডেড হতে সময় নিবে না। মানুষ যখন এইরকম পরস্পরকে আঘাত করার জন্য জীবনহরণকারক বস্তু ছুঁড়ে মারে সেটাকে ঠান্ডা মাথায় খুনের চেষ্টা বললে অতিরিক্ত বলা হয় না।

সুপ্রিমকোর্টের মত জায়গায় টানা দুইদিন এরকম যুদ্ধাংদেহি অবস্থা আসলে একটা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি চরম অবজ্ঞা আর ধ্বংসের প্রাথমিক লক্ষণ। আওয়ামী লীগ বারবার সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার কথা বলে আসছে কিন্তু তাদের কর্মীরা যখন এইরকম কান্ডে জড়িয়ে পড়ে সেটা হতাশার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। আওয়ামী লীগের উপরের সারির নেতারা নিশ্চয় এসব দেখেছেন কিন্তু কর্মীদের নিরস্ত্র করতে কোন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে প্রতিয়মান হয় না।
বিএনপির প্রতি আমাদের কোন প্রত্যাশা নেই। এই দলটি একটা আদর্শহীন পরগাছার মত। এই দলের প্রধান গতকাল যে ভাষায় তার বাড়ির সামনে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাতে তাকে একজন দাম্ভীক “বাড়িঅলি” ছাড়া কিছু মনে হয়নি। তার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের ভাষা আমরা আগে শুনেছি। তার পাইকারী হারে “বেয়াদপ” বলা স্বভাবে দাঁড়িয়েছে।

তার নির্লজ্জ জামাত প্রীতি, রাজাকার তোষণ আমাদের কাছে অতি পুরোনো। এ দেশের কোন মুক্তিবুদ্ধির মানুষ, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার মানুষ তাই বিএনপি রাজনীতির সমর্থন করে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন ভাগ্যের ফেরে এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষশক্তি, প্রগতিশীল, মুক্তমনাদের রাজনৈতিক সমর্থন পেয়ে আসছে তখন তাদের যে কোন বিএনপি-জামাতসূলভ কাজকে ব্যথিত ও হতাশ করে তোলে। আজ যে ভাষায় মহিলা আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা গালাগালি করেছেন টিভি ক্যামেরার সামনে তা বাসার সকলের সঙ্গে বসে দেখার মত না। বাংলা সিনেমার ডিপজলও সেন্সর পেরিয়ে এতটা খোলামেলা হতে পারেনি। এই দৃশ্য যখন একটা ছোট ছেলে দেখে দেখে বড় হবে সে তার দেশের রাজনীতি, তার দেশের রাজনৈতিক নেতা সর্বপরি তার দেশ নিয়ে গর্ব করার মত কিছু পাবে না। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” এই বাণী তাকে বিমোহিত, স্পর্শিত, আপ্øুত করতে পারবে না।

ফলে আমরা পাবো একটা এমন প্রজন্ম যাদের কাছে ইস্ট ইন্ডিয়ার বণিকদের মত স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছু আশা করতে পারবো না। যাদের কাছে দেশ হচ্ছে নিজের ভাগটাকে বুঝে নেয়া। একটা অসুস্থ রাজনীতির মধ্যে দিয়ে বড় হওয়া জেনারেশন পরবর্তীতে দেশ বিরোধী হয়েই বড় হয়ে থাকে। ৭৫- পরবর্তী প্রজন্ম তার বড় উদাহরণ। বিকৃত একটা বাংলাদেশের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে বড় হওয়া, সামরিক শাসনের কালে কৌশর কাটানো এই জেনারেশনের বৃহৎ অংশ বিএনপি-জামাত রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল।

বাংলাদেশ যে আজ দুটো অংশে বিভক্ত তাতে তারা একটা বড় ভূমিকা রাখছে। আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। আজো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেটুকু রাষ্ট্রীয়ভাবে অবশিষ্ট আছে তার পুরো কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের। কাজেই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কোন আদর্শ স্থির করতে হবে তাদেরকেই। খালেদা জিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে “গণতন্ত্রের অভিযাত্রা” মত ফ্লপ শোকে আওয়ামী লীগ যেন হিট করে না দেয়। কারণ এখন কোন হিট সর্বনাশ করতে পারে তাদেরকে। আর আওয়ামী লীগ তো একা হারে না! সঙ্গে আছে বাংলাদেশ…।