আজকে সকাল পৌনে ৬ টা বা এই সময়ের দিকে লন্ডন হিথ্রো বিমান বন্দরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে প্রতিরোধ এবং তাকে কালো পতাকা দেখাবার জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ ও তাঁদের নানাবিধ অঙ্গসংগঠনের নানা কর্মী বাহিনী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা (খুব সম্ভবত) টার্মিনাল-৩ এর এরাইভাল গেইটে খুব ভোর থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত নেতা কর্মীদের নিয়ে। উদ্দেশ্য হচ্ছে খালেদা জিয়া পৌঁছুলে তাকে দুয়ো দিবে, তাকে কালো পতাকা দেখাবে। সোজা বাংলায় শত শত নেতা কর্মী গগন বিদারী চিৎকার করে হাউ কাউ করবে। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা সেটি করেছেন।
এই হাউ কাউ করবার জন্য রীতিমত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো আগে থেকেই। কে কে যাবে, কার কি রোল, ব্যানার বানানো, পোস্টার বানানো, কালো পতাকা কর্মসূচী এসব সব কিছু করা হয়েছে একেবারে হল ভাড়া করে সভা করে।
ঠিক, একই ভাবে আজ থেকে দুই মাস আগে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন লন্ডন এলেন তখন লন্ডনের হিথ্রো থেকে শুরু করে তিনি যেখানে যেখানে গেছেন সেখানে গিয়ে যুক্তরাজ্য বি এন পি’র নেতা কর্মীরা এইভাবে প্রতিরোধ করেছে, কালো পতাকা দেখিয়েছে এবং সবচাইতে ভয়াবহ যে কাজটি বি এন পি’র কর্মীরা করেছে সেটি হচ্ছে শেখ হাসিনাকে যারা অভ্যর্থনা জানাতে গিয়েছিলেন তাঁদের দিকে বৃষ্টির মত ডিম ছুঁড়েছিলেন।
যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আমাদের গন জাগরন মঞ্চের কর্মী কামরুল হাসান তুষার ভাই একদিন সমাবেশ থেকে এসেছেন আমাদের সাথে দেখা করবার জন্য দেখি উনার পুরো শরীর ডিমের কুসুম আর পিচ্ছিল আঠালো সাদা অংশ দিয়ে ভরপুর। শেখ হাসিনাকে গার্ড দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের সবাই ওইদিন বি এন পি’র হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন। ভিকটমদের একজনকে আমি নিজের চোখে দেখেছি, সুতরাং অবিশ্বাসের কোনো কারন নেই।
তো, ঘটনা এভাবেই চলছে। শেখ হাসিনা আসলে তিনি বিমানবন্দর কিংবা হোটেলে বা কনফারেন্স যেখানেই যান না কেন তাঁকে এইভাবে অপমান করবে বি এন পি। আবার খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দর, মিটিং, হোটেল সবখানে অপমান করবে আওয়ামীলীগ। যদিও আওয়ামীলীগ এখন পর্যন্ত ডিম ছোঁড়াছুড়িতে যায়নি। প্রতিবাদ পর্যন্ত রয়েছে।
সবই বুঝলাম। বুঝলাম যে আমাদের দেশের রুগ্ন, নোংরা রাজনীতি আমরা ইংল্যান্ডে আমদানী করেছি। বুঝলাম পশ্চিমের এই সভ্য, সুন্দর, নিয়মতান্ত্রিক, গোছানো একটা দেশে থেকেও আমাদের অভ্যাস, চিন্তা, মোনোভাব আমরা পাল্টাতে পারিনি। বুঝলাম আমরা হচ্ছি বাংলার আদি ও অকৃত্রিম ঢেঁকি। স্বর্গে গেলেও আমরা ধান ভানি। সবই বুঝলাম।
কিন্তু, আমরা কি একবার ভাবি এই ইংল্যান্ডের সাধারন মানুষ এইসব দেখে আমাদের নিয়ে কি ভাবে? আমাদের নিয়ে কি ধারনা করে? লন্ডন একটা কসমোপলিটন শহর। বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই, শহর নেই যে দেশ আর শহরের মানুষ লন্ডনে থাকেন না। তাঁরাও তো বিমানবন্দরে যান প্রিয়জনদের রিসিভ করতে, তাঁরাও এই শহরতলীতে যান কাজে, ব্যবসায় কিংবা কর্মে।
তাঁরা আমাদের এই অসভ্যতা, এই নোংরামো দেখে আমাদের সম্পর্কে কি ধারনা করেন? তাঁরা বাংলাদেশকে ঠিক কিভাবে বিবেচনা করেন এসব দেখে? কি ভাবেন তাঁরা আমাদের দেশের মানুষ সম্পর্কে?
আমরা যারা এসব নোংরামো করিনা কিংবা এসব অসভ্যতার আগে বা পিছে নেই, আমরাও মূলত নোংরা এই ইংল্যান্ডের সাধারণ মানুষের কাছে। তাঁরা আমাদের সবাইকে এক পাল্লাতে ভাবেন। আমরা যারা পশ্চিমের এই সভ্যতাকে কিংবা তাঁদের রীতিকে, কালচারকে এডপ্ট করতে চেষ্টা করি, আমরা যারা এসব নোংরামোতে অভ্যস্ত নই তাঁদের জন্য এইসব ঘটনা অত্যন্ত অস্বস্তিকর।
আওয়ামীলীগ আর বি এন পি’র অনেক নেতা কর্মী আমার ফেসবুকে আছেন। আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি –
আপনারা দেশের বাইরে এসব করেন আর আমাদের সাধারণ বাংলাদেশীদের মাথা হেঁট হয়ে যায়। আপনারা এসব করেন আর সবাই ভাবে আমরাও খুব সম্ভবত আপনাদের মত। আপনারা এসব অসভ্যতা করেন, নোংরামো করেন, রুগ্ন রাজনীতি করেন আর সবাই ভাবে আমরা সাধারণ বাংলাদেশীরা আপনাদের-ই মত। দয়া করে এসব নোংরামি করবার আগে পরবর্তী সময়ে আল্লাহর ওয়াস্তে একটা ইংরেজীতে ব্যানার লিখে নিয়ে যাবেন অনেক বড় করে। সেখানে লিখে রাখবেন,
“আমরা আওয়ামীলীগ এবং বি এন পি। আমরা বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে পড়িনা। আমরা একটা আলাদা জাত। আমরা একটা আলাদা গোষ্ঠী। আমাদের নোংরামির সাথে দয়া করে ইংল্যান্ডের আর সাধারণ বাংলাদেশীদের মেলাবেন না”
প্লিজ, আমাদের সাধারণ বাংলাদেশীদের জন্য অন্তত এইটুকু করেন আপনারা।