বার্তা সংস্থা এএফপি কেন হ্যাপিকে নিয়ে নিউজ করতে গেলো? এএফপি কি মানসিক ভারসাম্যহীনতা নিয়ে নিউজ করতে চেয়েছে নাকি মডেলিং অভিনয় নাচকে ভয়ংকর পাপ মনে করা একটা দেশের কথাই বলতে চেয়েছে?
ক্রিকেটার রুবেলের সঙ্গে কেলেংকারিতে জড়িয়ে দেশব্যাপী পরিচিতি পাওয়া অখ্যাত এক মডেল হ্যাপি তারপর থেকেই মিডিয়ার কভারেজ তার দিকে নিয়মিত টানতে থাকে নানা ঘটনায়। হঠাৎ তার প্রবল মুমিনা হয়ে উঠার গল্প এখন দেশের সবাই জানে। তাকে নিয়ে সম্প্রতি যে বইটি প্রকাশ পেয়েছে ‘হ্যাপি থেকে আমাতুল্লাহ’ সম্ভবত বাংলাদেশের মিডিয়া অটোবায়োগ্রাফির ইতিহাসে একটা ঝড় তুলে ছাড়বে। এই বইতে স্থান পেয়েছে কি করে হ্যাপি তার ‘ভুল জীবন’ থেকে সত্য সুন্দর পথে এসে আমাতুল্লাহ (আল্লার দাসী) হয়ে উঠেছে। এএফপির রিপোর্টে এই বইটি ফোকাস করা হয়েছে। কাশেম বিন আবু বকর আর হ্যাপির আমাতুল্লাহ হয়ে উঠার গল্প বিশ্ব মিডিয়াতে আনার উদ্দেশ্য তো আছেই।
তবে যে উদ্দেশ্যই থাক, নিজেদের দিকে তাকানোটাই জরুরী। এদেশের তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্য কোন অসুস্থতার পর্যায়ে পৌঁচ্ছে গেছে সেটা জানতে ফেইসবুকের নিউজ পেইজের কমেন্ট সেকশনে গেলেই টের পাওয়া যায়। কয়েক হাজার কমেন্টের সবগুলো হ্যাপিকে তার ‘পাপের জীবন’ ছেড়ে আসার জন্য অভিনন্দন নয়ত হ্যাপি তার আগের অভিনয় জগতের জন্য ‘বেশ্যা’ গালি খেয়েছে…। আমার ঠিক জানা নেই, পৃথিবী আর কোন দেশে সিনেমা, টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করাকে চরম ক্ষমাহীন পাপ বলে মনে করে। একটা দেশের তরুণদের মানসিকতা এরকম হলে সে দেশের আধুনিক প্রগতিশীলতার অবস্থা যে কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে সেটা জানতে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না।
এই এক মাসের রোজার সময় আমাদের মেইন গণমাধ্যমগুলোতে কি পরিবেশন হয়েছে তা থেকে আমাদের সামনের দিনগুলো আঁচ করা যাবে। ‘বলিউডের কোন কোন অভিনেতা-অভিনেত্রী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন’ –এই জাতীয় নিউজ পরিবেশন করা হয় রামজান মাসকে কেন্দ্র করে! একটা দেশের ভবিষ্যত কোন দিকে তা নির্ভর করে তরুণরা কোন চিন্তা আর মতবাদের উপর ভর করে আছে। আপনি যদি ফেইসবুকের ‘লাইক সেলিব্রেটিদের’ পোস্টের বিষয়বস্তু দেখেন তো বুঝতে পারবেন তারা পাবলিকের মানসিকতা জেনেই পোস্ট লেখেন। তাতে এক ঘন্টার মধ্যেই ৬ হাজার লাইক। সাড়ে চারশো শেয়ার আর হাজার খানেক কমেন্ট! কি বিষয়বস্তু? “এখন যতই প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে হাউকাউ করি… সেদিন কবরে যে ৩ টা প্রশ্ন করা হবে, সেগুলো বেঁচে থাকা অবস্থায় ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরেও, আমরা অনেকেই ঠিক মতো উত্তর দিতে পারব না…”।
মানুষকে তার বিশ্বাসের জায়গায় সুরসুরি দিয়ে লাইক-শেয়ার কামাই করে যিনি সেলিব্রেটি হচ্ছেন তিনি গুরুত্বপূর্ণ নন। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটা বিপুল জনগোষ্ঠি মানসিকভাবে বৃদ্ধদের মত অবস্থান নিয়ে রেখেছে! এটা অশনি সংকেত। যেখানে এইসব ঘুণে ধরা চিন্তার গোড়ায় কুঠার চালানো দরকার তখন গোটা দেশের সেলিব্রেটি, বুদ্ধিজীবীরা জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সেই গোঁড়াতেই জল দিয়ে যাচ্ছে…। কাশেম বিন আবু বকর কিংবা হ্যাপি থেকে আমাতুল্লাহকে বর্হিবিশ্বে প্রচার করে এএফপি’র গুষ্ঠি উদ্ধার করার আগে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো- এরকম দুইটা অসুস্থ সেলিব্রেটি কি সত্যিই আমাদের বিপুল আমজনতার সমর্থন পায়নি?