বিরাট কোহলি ও ঈদ মোবারক

বিরাট কোহলি ফেইজবুকে সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়েছেন। সঙ্গে উপমহাদেশের ঈদের পোশাকের ট্রেডিশন হিসেবে একটা কাবলি পাঞ্জাবী পরে ছবি তুলে আপলোড করেছেন। এতেই দেখা গেছে পাকিস্তানের মুসলমানরা বিরাটকে ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিয়েছে। তারা সবাই কমেন্ট করছে, বিরাট পাকিস্তান এবং মুসলমানদের খুব সন্মান করে তাই আমরাও বিরাটকে খুব ভালোবাসি। আল্লাহ বিরাটকে আরো সন্মান দিক। বিরাট তুমি আমাদের ভাই… ইত্যাদি ইত্যাদি। লক্ষণীয় বিষয় মুসলিম নন এমন কোন আইডি থেকেই বিরাটকে এ জন্য কেউ গালাগালি করেনি। কেউ বলেনি, তুমি হিন্দু হয়ে কি করে মুসলমানদের মত পোশাক পরে ঈদের শুভেচ্ছা জানাও! নাহ্, এরকম একটি মন্তব্যও চোখে পড়েনি।

তবে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় ছিল বিরাটের পোস্টে বাংলাদেশী ইসলাম রক্ষাকারী অনলাইন এক্টিভিস্টদের কোন উপস্থিতিই দেখা যায়নি। সম্ভবত তারা কাল কমেডিয়ান মীরের ফেইসবুক পোস্টেই তাদের সবটুকু জিহাদী জোশ নিয়ে লড়াই করতে ব্যস্ত ছিল। মীর তার বাবার সঙ্গে একটি ছবি তুলে ক্যাপশন লিখেছিল- আমার আব্বা আমার আল্লাহ…। এতেই মীরকে শিরক করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাকে বার বার ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। মীর অমুসলিমদের সঙ্গে বেশি মেশামেশি করে ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে তাই তার এই পরিণতি… ইত্যাদি ইত্যাদি। এই কমেন্টগুলোর ৯৯ ভাগই বাংলাদেশীদের করা।

পাকিস্তানের কোন খেলোয়ার যদি হিন্দুদের দিয়ালীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে জাস্ট একটা নমস্কারের ভঙ্গিতে ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট দিতো তাহলে কি পরিণতি হতে পারে? কোন পাকিস্তানী ক্রিকেটার এরকমটা নিজে মন থেকেও করবে না জানা কথা। কোলকাতার জনপ্রিয় কমেডিয়ান মীর খ্রিস্টমাস উপলক্ষ্যে একটা পোস্ট দেয়ার পরই তাকে মুসলমানরা ধুয়ে দিয়েছিল। একজন মুসলমান হয়ে সে কি করে খ্রিস্টমাস উদযাপন করে! বাংলাদেশের কন্ঠশিল্পী তাহসানের স্ত্রী মডেল মিথিলা দূর্গা পুজাতে শুভেচ্ছা জানানোয় একইভাবে তাকে আক্রমন করা হয়েছিল। তাহসানকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল তার স্ত্রী যেন ইসলাম সম্মতভাবে চলাফেলা করে। অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াও দূর্গা পুজায় শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশী ইসলাম প্রেমি অনলাইন এক্টিভিস্টদের ভিজুয়াল রজমের আঘাত সয়েছেন। এই যে পাকিস্তানীরা বিরাটকে ভাল বলছে এটা তাদের উদারতা নয়। যেদিন কোন পাকিস্তানী খেলোয়ার দিয়ালী খিস্টমাসে শুভেচ্ছা জানানোর সাহস দেখাতে পারবে আর সেটা খুব স্বাভাবিকভাবে পাকিস্তানীরা গ্রহণ করতে পারে- সেটাই তাদের উদারতা হবে। সম্প্রীতি কখনই একতালে বাজে না। মুসলিমদেরও এবার এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এখানে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা কুরআন-হাদিস। এই বাধা তারা কি করে অতিক্রম করবে?