জঙ্গী হামলার কথা বলে হিন্দুদের দমন

একটা জিনিস প্রমাণিত হয়েছে। নিরাপত্তার হুমকির কথা বলে এ যাবদ গ্রাম-গঞ্জে বন্ধ করা বৈশাখী মেলা, যাত্রাপালা, বাউল উৎসব, পালা গানের আয়োজন প্রশাসন অনুমতি দেয়নি তার হয়ত ৯৯টি ঘটনাই ছিল ভুয়া। এই সন্দেহ আগেও ছিল। কোন নামাজী ডিসি এসপি এমপি মাতবর কেউই বাউলদের ধর্মীয় দর্শনকে সহ্য করতে পারার কথা না।

নামাজকালাম বাদ দিয়ে গান বাজনা, নাটক অভিনয় দেখতে গ্রাম ভেঙ্গে পড়বে এটা স্থানীয় প্রশাসনে গোল টুপি মাথায় দিয়ে বসা হোমড়াচোমড়াদের সহ্য হবার নয়। শত শত বছর ধরে গ্রামের নদী বা বটতলায় বসা বৈশাখী মেলাগুলো বিগত বছরগুলোতে বসতে দেয়া হয়নি কথিত নিরাপত্তার অজুহাতে। একই জায়গায় সারা বছর ধুমধাম করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হয়েছে। সেসব মাহফিলে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছেন প্রশাসনের বড় কর্মকর্তারা। যুব সমাজকে বেয়াল্লাপণা বাদ দিয়ে নামাজকলাম নিয়ে ঈমান মজবুত করা কথাই তাদের বক্তব্যের প্রধান্য পেয়েছিল। যেখানে লালনের গানের আয়োজনকে নিরাপত্তার কথা বলে বাতিল করা হয়েছে, সেই একই মাঠে ওয়াজ মাহফিল করে ‘ঈমান মজবুত’ করতে বললে- যে রকম যুব সমাজ গড়ে উঠার কথা তেমনটাই গড়ে উঠছে।

উল্টো রথযাত্রার মেলাকে প্রশাসন বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে আয়োজকরা রথযাত্রাই বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণায় প্রশাসন আন্তর্জাতিক নিউজ হবার ভয় পেয়েছে। তাই তড়িঘড়ি আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রথ ও মেলা দুটোই হবে। কোথায় গেলো তাহলে সেই জঙ্গি হামলার আশংকা? রথের মেলাতে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষই আসে। এই মেলা রথের সময় হলেও আবহমানকালের বাংলার মেলাগুলোর যে ধর্মনিরপেক্ষ চেহারা- সম্ভবত প্রশাসনের ঈমানদার কোন ‘বড়সাপের’ ভাল লাগত না এটা দেখে। এখন তো মনে হয় কুষ্টিয়ার লালন উৎসবের বাউলরা এক বছর বন্ধ রাখুক তাদের উৎসব প্রতিবাদ হিসেবে। ছায়ানট বন্ধ রাখুক এক বছর বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে। বইমেলা বন্ধ রাখুক এক বছর মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে।…

গ্রামীণ মেলা, পালা, বাউলদের প্রতিবাদ করার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সব মুখ বুজে মেনে নিলে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে একদিন তারা ইতিহাসের পাতাতেই কেবল শোভাবর্ধন করবে। ঢাকার শহুরে সংস্কৃতির কান্ডারীরা যে প্রতিবাদ করবেন না সেটা অনুমেয়। কারণ তারা একটি দলের কাছে তাদের বিবেক বন্ধক দিয়ে রেখেছেন। এরা অবশ্য বাংলাদেশের সামান্য একটু অংশ মাত্র। গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বাংলার গ্রামগুলোতে আবার ঢোলের শব্দ আর দোতরার শব্দে মুখর হয়ে উঠলে ঢাকার মাথায় কালা পট্টি বাধা হাজিবিবিদের মদিনা সনদ টিকবে না গ্যারান্টি!