মুফতি রাজ্জাক বিন ইউসুফ যখন ওয়াজে মূর্তি ভাঙ্গার জন্য মুসলমানের জন্ম হয়েছে বলে দাবী করেন, তখন আপনি এই আলেমকে ইসলামের অপব্যাখ্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে ফেলেন। আপনার দাবী, প্রকৃত ইসলাম কখনই অন্যের ধর্ম পালনে বাধা দেয় না বরং অন্য ধর্মালম্বীদের নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতার কথা প্রফেট মুহাম্মদ বলে গেছেন। আপনার এই দাবীর সপক্ষে যদিও কোন দলিল আপনি দেখাতে পারেন না।
কিন্তু একজন মুফতি রাজ্জাক বিন ইউসুফ কোত্থকে জন্ম নেয়, প্রকৃত ইসলাম কি বলে সেটা জানারও আগ্রহ আপনার নেই। আপনি সম্ভবত মূর্তি-ভাস্কর্য ভাঙ্গলে খুশিই হোন কিন্তু এর জন্য ইসলামকে দায়ী করলে সেটা আপনার ভদ্র সমাজে মেনে নিতে সমস্যা হয়…। মুসলিম শরীফের হাদিসে আছে নবী বলেছেন, যেখানেই প্রতিমা আর ভাস্কর্য দেখবে তা ভেঙ্গে ফেলবে…। পুরো হাদিসটা এরকম: আবুল হাইয়াজ আল আসাদী থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: আলী বিন আবু তালিব রাদি আল্লাহু আনহু আমাকে বলেন যে, আমি কি তোমাকে সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে দায়িত্ব দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা হলো যেখানেই প্রতিমা ও ভাস্কার্য দেখবে ভেঙ্গে ফেলবে এবং যেখানেই সুউচ্চ কবর দেখবে সমান করে দেবে’ (মুসলিম শরীফ)।
আপনি যখন একটা ধর্মে পুরোপুরি বিশ্বাস করে বসেই আছেন, একজন ঈশ্বর ও তার বার্তাবাহককে দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন তখন আপনি কি করে তার বাণীকে অস্বীকার বা অমান্য করবেন? কুরআনে বলা আছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই; যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।‘ (সুরা আল আহযাব ৩৬)।
এরপর কি রসূলের এই নির্দেশের সঙ্গে কোন বিশ্বাসী মুসলমান দ্বিমত করতে পারবে? একজন রাজ্জাক বিন ইউসুফরা কোত্থেকে তৈরি হয়, কোথায় তাদের আঁতুরঘর এরপরও বুঝতে বাকী থাকবে? তাহলে কেমন করে এই অন্ধ বিশ্বাসের উপর নৈতিকতার প্রশ্ন উত্থাপিত হবে? প্রফেট মুহাম্মদের জীবিকা কি ছিল? এই প্রশ্ন কেন আপনার মাথায় আসে না? তিনি কেবল মাত্র তার ধর্মকে অবিশ্বাস বা মেনে নেয়নি বলেই- কি করে ইহুদীদের সম্পত্তিকে নিজের দখলে নিয়ে নিতে পারেন? সহি হাদিসে আছে, জাবির বিন আব্দুল্লাহ বর্ণিত, আল্লাহর নবী বলেছেন গণিমতের মাল আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে।(বুখারি, বই-৫৩, হাদিস-৩৫১)।
এই গণিমতের মাল জিনিসটা কি? যুদ্ধে শত্রু পক্ষের সয়সম্পত্তি লাভ করা? বলবেন এটা তো পৃথিবীর সব যুদ্ধেরই নিয়ম। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে কি দেখানো যাবে প্রফেট মুহাম্মদের সঙ্গে একটা ইহুদী গোত্রও যুদ্ধ করেছিল ঘোষণা দিয়ে? দেখানো যাবে না। তাছাড়া গণিমতের মাল যুদ্ধ লব্ধ মালকেই কেবল বুঝায় না। বিনা যুদ্ধে ইহুদীদের মালামাল, তাদের নারীদের প্রফেট মুহাম্মদ কব্জা করেছিলেন। বণি নাজির ইহুদীদের পুরো সম্পত্তি থেকে পরে তিনি তার সারা বছরের সংসারের খরচ এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম কেনার খরচ মেটাতেন তার প্রমাণ আছে (দেখুন: ইবনে কাথিরের তাফসির, অনুবাদ: ড: মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান, খন্ড -১৭ম, পৃষ্ঠা- ৩৯৭)।