মাদক সম্রাট রনি

অনলাইনের খিস্তি খেউর গ্যাং, সিপি গ্যাং এর গড ফাদার প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের সাথে সিপি গ্যাং সদস্য এবং নরসিংদীর মাদক সম্রাট রনির ঘনিষ্টতার প্রমাণ আমাদের স্টপ সাইবার টেরোরিজম অনুসন্ধানী দলের সামনে এসেছে। এক অনুসন্ধানে জানা যায় যে আশরাফুল আলম খোকন এই মাদক সম্রাট রনিকে নিয়মিত শেল্টার দিতেন।

এইদিকে বালু দস্যু হিসেবে বহুল আলোচিত এবং সন্ত্রাসী জগতে এক ভয়াবহ চরিত্র সিপি গ্যাং এর সদস্য তানজিরুল হক রনি ধরা পরেছে। টানা ৪ বছরাধিককাল ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে সকল আইন কানুন উপেক্ষা করে শীতলক্ষা নদী থেকে বালু বিক্রি করে জিরো থেকে হীরু হবার পর র‌্যাব-১১’র সদস্যরা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এই রনিকে আজ সামবার পলাশ বাসস্ট্যন্ড থেকে ৭ বোতল ফেন্সিডিল ও ২৫০ গ্রাম গাজাসহ গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে পলাশ ও কালীগঞ্জ থানায় বালু দস্যুতা, চাঁদাবাজীসহ বহুসংখ্যক মামলা, জিডি ও অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পলাশে হাজার হাজার শ্রমিক জনতাসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্থি নেমে এসেছে।

জানা গেছে, পলাশ উপজেলার পাইকশা গ্রামের মৃত হাসানুল হক হাসানের পুত্র এই তানজিরুল হক রনি সিপি গ্যাং এর অন্যতম সদস্য এবং ছাত্রলীগের  সদস্য। তার এই রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে বিগত সাড়ে ৪ বছরাধিক কাল ধরে সে শীতলক্ষা নদীতে কমবেশী ৫টি ড্রেজার লাগিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে আসছে।

সে শীতলক্ষার বালু বিক্রি করে কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। শীতলক্ষা থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের কারনে পলাশের ফৌজি চটকল, ঘোড়াশাল রেল সেতু, ঘোড়াশাল বাজার, শহীদ ময়েজ উদ্দিন সেতু, ঘোড়াশাল পাইলট হাইস্কুল, ঘোড়াশাল জুটমিলস, বাংলাদেশ জুটমিলস, পুবালী জুটমিলস, প্রাণ ফুড প্রসেসিং কারখানা, ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর এলাকার আবাদী জমি, বসতবাড়ী ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনাসহ বিশাল জনপদ শীতলক্ষার গর্ভে বিলীন হবার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে মিল মালিকরাসহ এলাকার জনগন বার বার স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, মহিলা এমপি মেহের আফরোজ চুমকিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার ধর্না দিয়েও বালু দস্যু ছাত্রলীগ নেতা তানজিরুল হক রনিকে বালু উত্তোলন থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। জোরপূর্বক বালু উত্তোলনের ফলে ফৌজি চটকলের ২০ একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ফৌজি চটকল কর্তৃপক্ষ  রনির বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপুরন মামলা দায়ের করে। এ অবস্থায়ও রনি বালু উত্তোলন থেকে নিবৃত্তি হয়নি। উপরন্তু সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়োগ করে শীলতলক্ষা নদীতে কমবেশী ৫টি ড্রেজার লাগিয়ে ৬০ থেকে ৭০ ফুট থাই করে বালু উত্তোলন করতে থাকে। এ ব্যাপারে মিলের সিক্রিওরিটি ইনচার্জ জিয়াউল হক জিয়া তাকে বাধা দিতে গেলে রনি ও তার লোকজন তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং তাকে হত্যার হুমকি দেয়।

এ ঘটনা ফৌজি চটকল কর্তৃপক্ষ পলাশ থানা পুলিশকে জানালেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার সাহস পায়নি। পরে চটকল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব, পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পলাশের সহকারী কমিশনার ভূমিকে লিখিতভাবে ঘটনা অবহিত করে। পলাশের সহকারী কমিশনার ভূমি ঊর্মি বড়–য়া, পলাশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মেসার্স হক ট্রেডার্সের মালিক জনৈক তানজিরুল হক রনি, ফৌজি চটকলের দখলীয় ভূমি থেকে দৈর্ঘে ১০০ ফুট, প্রস্তে ৭০ ফুট এবং গভীরতায় ৬০ ফুট একুনে ৪ লাখ ২০ হাজার ঘন ফুট বালু ও মাটি কর্তণ করেছে। যার ফলে মিলের ৪০/৫০ ফুট ভূমি নদী গর্ভে বিলিন হবার আশংকা উপক্রম হয়েছে।

সহকারী কমিশনারের এই রিপোর্ট’র পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাকে বালু উত্তোলনে নিষেধ করা হলেও সিপি গ্যাং সদস্য রনি কোন ক্রমেই বালু উত্তোলন বন্ধ করেনি। সাম্প্রতিককালে আরো অধিক সংখ্যক ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করতে থাকে। এ অবস্থায় পাকিস্থান শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আমলে সম্প্রসারিত খরস্রোতা শীতলক্ষা তীরবর্তী পলাশের বিশাল শিল্পাঞ্চল ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা ও সিপি গ্যাং সদস্য রনির এই অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে পলাশ শিল্পাঞ্চল থেকে ডাঙ্গা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকার হাজার হাজার মানুষ সার্বক্ষণিক আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তারা বলেছেরনির বালু উত্তোলনের কারনে ঘোড়াশাল রেল সেতুর নিচ থেকে মাটি সরে যে কোন সময়ই ধস নামার আশংকা দেখা দিয়েছে। এই রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হলে দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। এতসব ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও রাজনৈতিক কারনে  তানজিরুল হক রনিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সাহস পায়নি। আজ সোমবার র‌্যাব-১১, নরসিংদী ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার মেজর আরিফ তাকে পলাশ বাসস্ট্যান্ড থেকে ৭ বোতল ফেন্সিডিল ও ২৫০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

রনিকে গ্রেফতারের পরপরই তৎপর রয়েছে সিপি গ্যাং ও তাদের গডফাদার আশরাফুল আলম খোকন। সিপি গ্যাং সদস্য হবার কারনে খোকন সংশ্লিষ্ঠ থানায় প্রভাব বিস্তার করবার চেষ্টা করছেন এবং মাদক সম্রাট রনিকে ছাঁড়িয়ে আনবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে ব্যবহার করছেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে থানার একজন কর্মকর্তা জানান যে রনিকে ছেড়ে দিতে এরই মধ্যে কিছু ফোন এসেছে যেখানে প্রধান্মন্ত্রীর অফিসের রেফারেন্স দেয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে তারা বিস্তারিত গণমাধ্যমকে জানাতে অপাগরতা প্রকাশ করেন।