প্রিয় দেশ। তোমার উঠোনে কি গৃহযুদ্ধ আসন্ন? তোমার গর্ভের সন্তানরা এক তরফা মার খাবে আর কতদিন? অস্তিত্ব সংকট দেখা দিলে, বেঁচে থাকার তাগিদে তারাও যদি ঘুরে দাঁড়ায়, তখন? যদি তাই হয়, তবে সব থেকে বিপদ আমাদের। আমরা সহাবস্থানবাদী মানুষগুলো কোন্ পন্থায় আমাদের মতকে এগিয়ে যাব সেখানেই বড় প্রশ্নচিহ্ন। আজ যে সব নিরপরাধীকে শুধু সন্দেহের বসে পিটিয়ে মারা হচ্ছে তাঁরা যে কাল ঘুরে দাঁড়াবেন না, এমন নিশ্চয়তা আমরা সহাবস্থানবাদীরাও দিতে পারছি না। মনে হয় না সরকারের হাতেও বিষয়টি আছে। অথচ, আগুনের এই খেলায় আক্রমনকারীর হাতে মশাল ধরিয়েছেন তাঁরাই।
আসলে মুসলমান নাম শুনলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে তিনি গোমাংস প্রিয় ব্যক্তি। এমন ভাবনা খ্রস্টিানদের জন্য নয়। যদিও তা কাম্য নয়। খ্রস্টিান প্রধান রাজ্যগুলোতে গো-হত্যা নিষিদ্ধ হয়নি। গোমাংস খাওয়া বা বিক্রির অপবাদে এখনো কোনো খ্রস্টিানের মৃত্যু হয়নি। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, রাগ শুধু মুসলিমদের ওপর। ভয় হয়, আমার প্রতিবেশি হিন্দু ভাইরা যে কোনো দিন আমাকেও পিটিয়ে মারার অধিকার রাখে শুধুমাত্র আমি মুসলমান বলে। যদিও আমি নিরামিষ। তাতে কী। আমার নামের সঙ্গে জুড়ে আছে আরবি শব্দ। অতএব ধরে নেওয়া হবে, আমি গোমাংস খাই। এটা চলতে দাওয়া যায় না। রুখে দাঁড়াতে হবে আমাদের মত সহাবস্থানকামী মানুষদের। এমনটা দীর্ঘায়িত হতে দিলে আমার দেশের চিরাচরিত সমন্বয় ও সহাবস্থান সংস্কৃতি জোর ধাক্কা খাবে।
মনে পড়ে, একবার আরজুমান ও আমি গেছি বহরমপুরে এক চিকিৎসকের কাছে। প্রেসক্রিপশন লেখার সময় ডাক্তার সাহেব বুঝেছেন আমরা দুজনেই মুসলিম। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলেন আমরা দুজনেই নিরামিষ। শুনেই উনি আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, ‘এমা! আপনারা গোমাংস খান না?’ যেন, আমরা গোমাংস না খেয়ে বড় অপরাধ করেছি। গোমাংস ছাড়াও বহু আমিষ মুসলিম রয়েছেন। তিনি তাও বিশ্বাস করতে পারছেন না। যেন তাঁর শৈশবের বিশ্বাসকে আমরা মিথ্যে প্রমাণ করতে এসেছি। যেন, মুসলিম মানে তাঁকে গোমাংস খেতেই হবে। গোমাংস ছাড়া কোনো মুসলিম হতেই পারেন না। তিনি মত দিলেন, তার তিরিশ বছরের চিকিৎসা ব্যবসায় কোনও নিরামিষ মুসলিমকে দেখেননি। অতএব তিনি তাঁর বিশ্বাস থেকে নড়বেন না।
দেখলাম বউয়ের সাদা গাল কেমন রাগের রক্তে লাল হয়ে উঠেছে। ওর হাত ধরে বললাম, চল, প্রেসক্রিপশন হয়ে গেছে। বেরিয়ে এলাম। আরজুমান তখনও রাগে ফুঁসছে। এই অপমান ও মেনে নিতে পারছে না। ওর ভুমি তো এমন সংস্কৃতির জন্ম দেয়নি।
সত্তর শতাংশ মুসলিম বসবাসের জেলা মুর্শিদাবাদ। তার সদর বহরমপুরে কোথাও গোমাংস বিক্রয়কেন্দ্র নেই।কারন, শহরের ৯১ শতাংশ বসবাসকারী হিন্দু ভাইদের সম্মান জানানো। এমন কী কুরবানীর সময়টাতেও হিন্দু প্রতিবেশির সম্মানে গরু কুরবানী হয় না। যদিও একশ শতাংশ মুসলিম বসবাসের গ্রামগুলোয় গরু কুরবানী হয়। আমি দেখেছি, মুসলিমদের এই সহাবস্থান প্রেম কখনো কোনো সংবাদপত্র প্রচার করেনি। দরকার ছিল এই প্রচারের। সমন্বয় ও সহাবস্থানের স্বার্থে। কথাগুলো একদিন বললাম কবীর সুমনকে। কবীর ভাই এক প্রেস মিটে কথাগুলো বললেন। শুনেই সাংবাদিকরা কবীর ভাইকে পিঁপড়ের মত ছেঁকে ধরলেন। খবর নিলেন। পরের দিন কোনো সংবাদপত্র সহাবস্থানের জন্য একটা শব্দও ব্যয় করেনি।