বাংলাদেশে ঠিক এই মুহুর্তে যে রাজনীতি চলেছে সেটির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্মীয় মৌলবাদের ব্যাপকতা ও উত্থান। এটা আমার বলতে দ্বিধা নেই যে বাংলাদেশের এই ভ্রষ্ট রাজনীতির একটা বড় গুটি চাল-ই হচ্ছে ব্লগারদের হত্যাকান্ড। আর্মির ড জি এফ আই যে এই ব্লগারদের হত্যাকান্ডে জড়িত, সে ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত না হলেও অনেক কিছু বুঝতে পারি। আন্সারুল্লাহর যে প্রধান মেজর জিয়াউল হক সে কিন্তু আর্মির লোক। আজ পর্যন্ত তাকে কিন্তু ধরা হয়নি। অথচ নানান স্থান থেকে শুনতে পারা যায় যে সে নাকি দেশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে বহাল তবিয়তে।
ইন্তারনেটে খুজতে গিয়ে অপ্রিয় সত্য নামে এক ভদ্রলোকের লেখা দেখে মনে হোলো এগুলো যেন আমারই কথা। যেখানে লেখা রয়েছে-
“গত দুই বছর আগে ১৫ সালটা ছিল ব্লগার হত্যার সাল। এদেশের ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম একে একে সেই বছর স্লিপার সেল দ্বারা মুক্তচিন্তক ব্লগারদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তখন ব্লগার হত্যা নিয়ে এদেশের সরকারও ছিল নিরব। শুধু নিরবই ছিলনা, যখন ১৫ সালে ইসলামিস্ট কিলাররা একটার পর একটা ব্লগারর হত্যা করে যাচ্ছে, তখন শেখ হাসিনা সরকার নাস্তিক হত্যার এই দায় নেবে না বলে ইসলামি জঙ্গীদের পরোক্ষভাবে আরো উস্কে দিয়েছিল ব্লগার হত্যা করার জন্য। এতে সরকারের লাভ আছে। সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯০% মুসলমানকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছে, “-দেখো আমরা নাস্তিক ব্লগারদের পাশে নেই, আমাদের সরকার ইসলামের পাশেই আছে। দেখো আমরা ব্লগার হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনছি না।” একেকটি ব্লগার হত্যার পর আওয়ামিলীগ সরকার তার প্রশাসনকে তৎপর না রেখে ৯০% ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এটাই বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, আমাদের সরকার শুধু ইসলাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। এবং আওয়ামিলীগ সরকার মুসলমানের কাছে এই পরীক্ষায় ভালোই উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই আওয়ামিলীগ সরকারের তৎপরতা দেখি তখনই, যখন গত বছর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরায় ইসলামিস্ট জঙ্গী নির্বাসরা প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে আল্লার নামে বড় আকারে সন্ত্রাসী হামলাটা চালায়। সারা পৃথিবীজুড়ে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে দেখে এরপর আওয়ামিলীগ সরকারের প্রশাসনের তৎপরতা কাকে বলে ও কতো কি কি দেখেছি তখন। তখন জঙ্গীদের পারলে এদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী গোপন সুত্রে খবর পেয়ে ইঁদুরের গর্ত থেকেও তুলে আনছেন। এরপর অনেক জঙ্গীও ধরা পড়েছে। স্পেশাল পুলিশ ফোর্স সোয়াতের অপারেশনে অনেক জঙ্গীরও কুকুরের মতো মৃত্যু হয়েছে। ১৬ সালে গুলশানে হোলি আর্টিজান হামলার পর ইসলামিস্ট জঙ্গীদের হাতে আর কোনো নাস্তিক, মুক্তমনা ব্লগার, মন্দিরের পুরোহিত্য ও যাজক হত্যার শিকার হয়েছে এমন শোনা যায়নি। তার মানে গুলশান হামলার ২০১৬ সালে মে মাসের পর তখন সরকারের প্রশাসন জঙ্গী দমন করার জন্য আন্তরিক হয়ে উঠেছিল।
১৫ সালে যে ৫-৬ জন মুক্তচিন্তক ব্লগার ও প্রকাশককে যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, আমি বিশ্বাস করি না এখানে যে সরকারের পরোক্ষভাবে মদদ ছিলনা। একটা ছেলে কোথায় থাকে কি করে, এটা সহজে জঙ্গিদের জানার কথা নয়। আচ্ছা ধরে নিলাম, জঙ্গীরা এদেশের ব্লগারদের লোকেশন জানে, লোকেশন জেনেই জঙ্গীরা ব্লগারদের হত্যা করতে যায়। আর ব্লগাররা হত্যার শিকার হয়। আচ্ছা আমাদের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাজ কি? তারা যদি ইসলামিস্ট জঙ্গীদের একজন ব্লগারকে হত্যার পরিকল্পনা আঁচ করতে না পারেন, তাহলে তাদের রাষ্টের প্রশাসনে পুষে পুষে বড় অংকের বেতন দিয়ে লালন পালন করার দরকার কি? এখানে স্বাভাবিকভাবে আরেকটা প্রশ্ন এসে যায় যে, যখন এদেশে বড় আকারে হামলা করার জন্য ইসলামি জঙ্গীরা পরিকল্পনা করার জন্য কল্যানপুরে আস্তানা গেঁড়েছিল, তখন এদেশের গোয়েন্দারা তো জঙ্গীদের গোপন আস্তানার খবর ঠিকই পেয়েছিল। এবং সেখানে স্পেশাল পুলিশ ফোর্স তাদেরকে কুত্তার মতোও মেরেছিল! এখন এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ব্লগার হত্যায় এই আওয়ামিলীগ সরকার ও প্রশাসনের সরাসরি মদদ আছে। একটা নাস্তিক মুক্তমনা ব্লগার হত্যা মানেই আওয়ামীলীগের দিকে ৯০% ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আরো একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করা। মুসলমানদের আরো একটু আস্থা কুঁড়িয়ে নেয়া।
সামনে আসছে নির্বাচন। এই আওয়ামিলীগ সরকার এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমর্থনের নেশায় আরো ভয়ংকরভাবে ব্লগার হত্যা-ড্রামায় মেতে উঠবে! নিজেরা চক্রান্ত করে ইসলাম অবমাননা করে হিন্দু যুবকদের নামে চালিয়ে দিয়ে, আরো কিছু হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে শন্মান বানাবে। এটা হলো রাজনৈতিক খেলা। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজনে একেকটা দল হায়েনা থেকেও নিষ্ঠুর হয়! এই আর নতুন কথা নয়। আওয়ামিলীগ সরকার নৈপথ্যে থেকে স্লিপার সেলদের নির্দেশে দিয়ে ব্লগার হত্যা করে ধর্মপ্রান মুসলমানদের দৃষ্টি তার দলের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করবে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু নির্যাতনও বাড়িয়ে দেবে মুসলমানদের নজর কাড়ার জন্য। গত দুদিন আগে কলকাতা পুলিশের কাছে বাংলাদেশি জঙ্গী ধরা পড়ায় ইতিমধ্যে আমরা সেই খবর জেনেছি। এবং সেই জঙ্গীর হাতে বাংলাদেশের ব্লগার হত্যা করার নতুন লিস্ট পেয়েছে তারা। এখন এদেশের ব্লগারদের এই সরকারের রাজনীতির বর্বর হত্যা-লীলা থেকে অন্তত বাঁচতে হলে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া আর উপায় নেই। কথাটা এদেশের সব ব্লগারদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত”
এইভাবে দিনের পর দিন ব্লগারদের হত্যা করা হবে আর বাংলাদেশে এর কোনো বিচার হবে না, এটা মেনে নেয়া অত্যন্ত কষ্টের। এই দেশ কি মধ্যযুগে চলে? এটা কি একটা অসভ্য বর্বরদের দেশ? ধর্মে অবিশ্বাস কেন খুনের একটা বড় যুক্তি হবে এমন একবিংশ শতাব্দীতে? আমি আজও এই কথা বুঝতে পারিনা। ধর্ম বিশ্বাস মানুষ করুক। তাদের করে দেয়া হোক কিন্তু একই সাথে ধর্মের অবিশ্বাসীদেরো একোমোডেট করতে হবে। তাদের অধিকার এবং কথা বলবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি মানুষ তার মত প্রকাশ করবে সে ব্যাপারে স্বাধীনতা পাবে এটাই মুক্তিযুদ্ধের বড় ফিলোসফী। কিন্তু এসব বাদ দিয়ে দেশে হচ্ছে উল্টোটা। বরং মত প্রপকাশ করতে গেলে টুঁটি চেপে ধরা, তাতে বাঁধা দেয়া, সেন্সরশীপ আরোপ করা এসব সব মিলিয়ে আমরা কথায় যাচ্ছি আমরা জানিনা।