উত্তরা ইউনিভার্সিটির সাহসী শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানাই

ঢাকার তুরাগ বাসের চালক ও তার সহকারীদের হাতে উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন। আর এই ছাত্রী যৌন হয়রানির প্রতিবাদে উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা তুরাগ পরিবহনের ৫৫টা বাস আটকে রেখেছে। তাদের দাবি হলো যৌন সন্ত্রাসী বাসচালক ও তার সহকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং ভবিষ্যতে গণপরিবহনে যৌন হয়রানি বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী গত শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে বাড্ডা লিংক রোড থেকে তুরাগ বাসে ওঠেন উত্তরা যাওয়ার জন্য। তিনি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত আসনেই বসেছিলেন। তখন বাসে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। ধীরে ধীরে অন্য যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে নেমে যায়, নেমে যাওয়াদের বদলে কাউকে বাসে নতুন করে না তোলায় সন্দেহ হয় ওই তরুণীর। বাসটি যখন প্রায় খালি হয়ে যায় তখন চালকের সহকারী ওই ছাত্রীকে বাসের পেছনের আসনে গিয়ে বসতে বলে। এ সময় বাসের আরেকজন সহকারী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী যেন না উঠে সেটা নিশ্চিত করছিল। বসুন্ধরা এলাকায় এসে ওই ছাত্রী দরজার কাছে গিয়ে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু চালকের সহকারী ‘কই যান’ বলে তার হাত চেপে ধরে আর আরেকজন গেইট লাগাতে শুরু করে।এ সময় সজোরে দুই সহকারীকে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটি চলন্ত বাস থেকে নেমে পড়ে।

প্রায় প্রতিদিনই বাসে হয়রানির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ায়। আর নগর জীবনের গণ পরিবহনগুলোতে যৌন হয়রানি এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আগে বাসের যাত্রীরা করতো। এখন সরাসরি বাসের ড্রাইভার-হেলপাররা করে। সকালে কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া এবং বিকেলে ফেরার পথে শঙ্কা নিয়েই যাতায়াত করছেন নারীরা। কয়েকদিন আগে একজন গার্মেন্ট শ্রমিক বাসে ধর্ষনের শিকার হলেন। রুপার কথাও আমরা ভুলে গিয়েছি। যাকে বাসচালক ও তার সহকারী ধর্ষণ করার পর নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। আর ভয়াবহ এসব হয়রানির মুখ থেকে ফিরে আসা নারী বা তরুণী ছাড়া বাকীরা হয়তো ভুলে যাচ্ছেন সেসব ঘটনা, অথচ যারা এসব ঘটাচ্ছে, তারা কিন্ত থেমে নেই। যারা এদের থামানোর দায়িত্বে তাদের এইসবে কিচ্ছু যায় আসে না।

এইযে পথেঘাটে এমন হয়রানির ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। কিন্তু রাষ্ট্র আছে শীতঘুমে। এতো এতো ধর্ষণ-যৌন সন্ত্রাসের পরও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে না। গণপরিবহন এখন মাফিয়াদের হাতে, ধর্ষকদের হাতে। যেখানে আমাদের নারীরা কোনভাবেই নিরাপদ না। আর এর সকল দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। পরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেই নিতে হবে।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির সাহসী শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানাই। লড়াই চলুক।