মৌলবাদ কন্যা খালেদার বিচার নিয়ে কিছু কথা

গত ৮ টা বছর তিনি আমাদের একটিভিস্টদের প্রানগুলো কয়লা করে দিয়েছেন খালেদা। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই দেশে অনেক মসৃণ ভাবে হতে পারতো, অনেক আগেই হতে পারতো। কিন্তু এই রাজাকারের জননী, রক্ষাকারিণী খালেদা জিয়া দিনের পর দিন সেই নরপশু রাজাকারদের এই দেশে পেলে পুষে বড় করেছে, তাদের সকল ধরনের সুবিধা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রমোট করেছে এবং জাতীয় সংসদে পর্যন্ত তাদের নিয়েছে।

খালেদার কারনে একই কক্ষে দাঁড়াতে হয়েছে শেখ হাসিনা আর তাঁর পিতার খুনীদের, মুখোমুখি। এটি ভাবলেই আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। চিন্তা করা যায় কতটা ভিন্ডিকটিভ হলে একজন মানুষ পিতার খুনী আর কন্যাকে মুখোমুখি দাঁড় করাবার চিন্তা করতে পারেন!! সে হিসেবে শেখ হাসিনা অনেক বেশী ধৈর্য্য দেখিয়েছেন। পরিমিত আচরন করেছেন। সকলের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।

খালেদা নামের এই ব্যক্তিটি চাইলেই হতে পারতেন তরুনদের মধ্যে জনপ্রিয়। চাইলেই তিনি রাজাকার-আলবদরদের নিঃশেষ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। ভোটের কথা বলে, ভোটের রাজনীতিতে তিনি এই দেশের বিষাক্ত প্রাণীগুলোর জন্য ওদের শেষ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছেন। এমনকি কয়েকদিন আগেও রাজাকার সাকা চৌধুরীর জন্য শোক প্রস্তাবও তিনি এনেছেন। যার মানে দাঁড়ায়, এই দেশটিকে সুযোগ পেলেই পাকিস্তান বানাবে খালেদা জিয়া।

খুব সহজেই আমি কিছু কিছু যায়গায় নিরপেক্ষ হতে পারিনা কিংবা পারিনা যৌক্তিক চিন্তা করতে অথবা নির্মোহ আলোচনা করতে। মানুষ হিসেবে এটা আমার অক্ষমতা।যদি এটিকে আমার ডিস্ক্রেডিট বলে বিবেচনা করা হয়, আমি মাথা পেতে নেব।

আমি খালেদা জিয়ার শাস্তি চাই। আমি চাই তিনি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হন। আমি চাই তিনি আর রাজনীতিতে ফিরে না আসুন।

বি এন পি তে কি একটা সুস্থ চিন্তার ব্যক্তি নেই যারা একটিবারের জন্য তাদের নেতা-নেত্রীদের জিজ্ঞেস করতে পারে যে ২৬ বছর আগে কুয়েতের প্রেসিডেন্টের দেয়া টাকা দিয়ে কেন এতটা বছর এতিমখানা হয়নি, কেন টাকাটা এত হাত ঘুরে, এত এফ ডি আর, এত ব্যাংক একাউন্ট ঘুরে আজ নানাবিধ ব্যক্তির নামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে? শুধু বাংলাদেশ জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ না করে ব্রেন খাটিয়ে এই সামান্য প্রশ্নটি করবার মত লোকও কি বি এন পি তে নেই? গত ২৬ বছরেও কি একটা এতিম খুঁজে পেলোনা এরা টাকাটার পরিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য?

টাকাটা এসেছে খালেদার আমলে ২৬ বছর আগে তার ত্রাণ তহবিলে, এই টাকা ব্যবহার না করে তারা একবার অমুক একাউন্টে তমুকের নামে, আরেকবার তমুক একাউন্টে অমুকের নামে গুটি চালাচালি করেছে। মামলা করেছে ২০০৮ সালের তৎকালীন কেয়ারটেকার সরকার। বিচার করেছে আদালত কিন্তু দোষ হচ্ছে শেখ হাসিনার?

কারন কি? টাকাটা কি হাসিনার একাউন্টে এসেছিলো? এই টাকা কি তিনি সরিয়েছেন? তারেক রহমান, শরফুল হক ইত্যাদি ব্যাক্তির নামে এফ ডি আর কি হাসিনা করেছেন?

তাহলে খালেদার ৫ বছরের জেল হলে কেনরে বাবা শেখ হাসিনার দোষটা দিচ্ছেন? ঠিক কোন যুক্তিতে?

খালেদার বিচারের সঙ্গে যারা হাজার কোটি টাকার বিচার না হওয়ার তুলনা করছেন তারা খুবই নন-পলিটিক্যাল। হাজার কোটি টাকার বিচার না করার সঙ্গে দু্ই কোটি টাকার বিচার করার কোনো বিরোধ নাই। এই তুলনা দিয়ে তারা বস্তুত খালেদার দুর্নীতিকে স্বীকার করে নিচ্ছেন। অর্থাৎ তাদের দুঃখ, মাত্র দুইকোটি টাকার টাকার বিচার হচ্ছে বলে। এমন বোকা অরাজনৈতিক দৃষ্টির কারণে তারা এটা পলিটিক্যাল বিচার হিসেবে না দেখে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন।

পলিটিশিয়ানদের আচার-বিচার এরকমই হয়। উপমহাদেশের এক ডজনেরও উপরে নেতা আছেন যারা নিয়মিত জেল-আদালতে যাওয়া আসা করেন। বিহারের লালু জেলে, মালদ্বীপের নাশিদ নির্বাসনে, পাকিস্তানের ভুট্টো ফাঁসিতে। খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার ঘটনা আমার কাছে তাই রুটিন ওয়ার্কের মতো স্বাভাবিক লেগেছে। বরং আমাদের দেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল একই রকম শক্তিশালী হওয়ায় কেউ কাউকে জেলে নিতে পারতো না। ফলে এইসব জেল-নির্বাসনকে প্রতিহিংসা হিসেবে না দেখে পলিটিক্যালি দেখতে পারা উচিৎ।

কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধানের এমন মামলায় জেলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, পরাজয়ও নয়। বরং মুক্ত নেতার চেয়ে বন্দী নেতার অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ার কথা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিব আরো অবিসংবাদী হয়েছিলেন। বিএনপি যদি আওয়ামী বিরোধী ক্ষমতার সিন্ডিকেট না হয়ে রাজনৈতিক দল হয়, তাহলে এই অভিঘাত তাদের জন্য রেজারেকশনের হওয়ার কথা। ১৯৯০ সালের পর থেকে বিএনপির সামনে আসলে কোনো রাজনীতি নাই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলনে ব্যর্থতায় তারা প্রকৃতই ব্যাকফুটে। তাই এই ঘটনা তাদের রাজনৈতিক হয়ে ওঠার সুযোগ। কান্না না করে তাদের উচিত এই সুযোগ নেওয়া, নিজেদের রাজনীতি প্রমাণ করা।