ইসলামে জিহাদ

একবার এক জরিপে জানা গেলো আমেরিকার বেশির ভাগ মানুষ ভূতে বিশ্বাস করে। উন্নত পৃথিবীর মানুষ ঢালাওভাবে বিশ্বাস করে নিলেই ভূতপ্রেতের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়ে যায় না। তবে এই জরিপের তথ্য দিয়ে আপনি আরেকজনকে ভূত বিশ্বাস করাতে আমেরিকার প্রসঙ্গ টেনে ঠেস মেরে বলতেই পারেন- আমেরিকার মত দেশের মানুষ যেখানে ভূতে বিশ্বাস করে সেখানে আপনে আসছেন কোনখান থিকা…!

জরিপকে ব্যবহার করা হয় এভাবেই। বেশির ভাগ মানুষ জঙ্গিবাদের জন্য দারিদ্রতা এবং ইসলামের ভুল ব্যাখ্যাকে দায়ী মনে করে- এরকম হিউমার ছড়িয়ে দিতে পারলে পরবর্তীতে এটাকেই তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যাবে। প্রথম আলো সেই কাজটাই করেছে।

বাংলাদেশে গুলশান হামলার পর টেলিভিশনে মনোবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানীদের ধরে এনে জানতে চাওয়া হতো মানুষ কেন জঙ্গি হয়? প্রথমেই তারা জঙ্গির অর্থ ধরে নিয়েছে সাধারণ সন্ত্রাসী। ‘মানুষ কেন সন্ত্রাসী হয়’- তার উপর প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান আছে। অভাব থেকে শুরু করে একাতিত্ব, পারিবারিক অশান্তি, মূল্যবোধের অধঃপতন, সাংস্কৃতিক নিঃসঙ্গতা- সব কিছু থেকেই একজন মানুষ সন্ত্রাসী হয়ে উঠতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি যদি ‘জঙ্গির’ অনুবাদ বা প্রতিশব্দ ‘সন্ত্রাসী’ করে নেন তাহলে তিনি একজন খিলাফতকারীর জন্য সাধারণ সন্ত্রাসীর বেড়ে উঠার কারণগুলিই বলবেন। গুলশান হামলার পর এইসব বিশেষজ্ঞরা টেলিভিশন আর পত্রপত্রিকায় প্রচার করতে লাগলেন জঙ্গিরা সবাই অসুখি পরিবার থেকে এসেছে। তারা ছিল নিঃসঙ্গ…। নয়ত বেকার দরিদ্র ছিল। এসব কারণেই তারা জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে…।

ইসলামে জিহাদের সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। জিহাদ হচ্ছে সশস্ত্রপন্থায় অমুসলিম দেশগুলোকে ইসলামী শাসনে তথা মুসলমানদের দখলে আনতে হবে। ইসলামে জিহাদ নেই এমন দাবী কেউ আজতক করেনি। কাজেই ইসলামে জঙ্গিবাদ নেই বলার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামে জিহাদের বিষয়ে কি বলা হয়েছে সেটাও পরিস্কার করে বলতে হবে। ইসলাম জিহাদের নামে যেটা করে সেটাকে তারা সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ বলবে না। এটা বলবে প্রতিপক্ষরা। তাদের কাছে এটা পরিস্কার সন্ত্রাস। আপনি যদি কোন ইসলামিস্ট বা সাধারণ মুসলমানকে বলেন ইসলামে সন্ত্রাস আছে সেটা তাদের জন্য মেনে নেওয়া সম্ভব না। তারা জানে জিহাদ খুবই ন্যায়সঙ্গত অধিকার। ইসলাম হচ্ছে আল্লার মনোনীত সর্বশেষ ধর্ম যা সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মধ্যে তারা সন্ত্রাস দেখতে পাবে কোথায়?

প্রথম আলো দেশী জঙ্গি উত্থানের জন্য কৌশলে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা ও সরকারের সার্বিক কাজকর্মকে দায়ী করেছে। যেমন দেশে বর্তমানে কাজের সুযোগ কম থাকার কারণে তরুণরা জঙ্গিবাদে ঢুকছে বলে তাদের জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে একটা মজা অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য। সরকার নিজে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসলে প্রত্যেককে দশ লক্ষ করে টাকা প্রদাণ করা হবে ঘোষণা করেছে। অর্থ্যাৎ সরকারও মনে করে টাকা-পয়সার কারণেই পোলাপান জঙ্গি হয়ে পড়ছে। কাজেই প্রথম আলো যদি এখন প্রচার করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং গণতন্ত্র, প্রচুর চাকরির সুযোগ, অর্থনৈতিক চাঙ্গা অবস্থাই জঙ্গিবাদকে নির্মুল করতে পারে- তাহলে সরকার দ্বিমত করবে এখন কিভাবে?

সর্বশেষ একটা লাইভ টিভি শোয়ের আয়োজন করেন। আসেন কে কি জানেন তা নিয়ে মুক্ত আলোচনা হোক। জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী কে সেটার ফয়সালা হয়ে যাক। বড় বড় আলেমদের ডাকেন। ফরিদউদ্দীন মাসউদকে ডাকেন, রাজ্বাক বিন ইউসুফকেও ডাকেন। নাস্তিকরাও থাকুক। বামপন্থি, বামাতীদেরও রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেও রাখুন। মুক্ত আলোচনা হোক। ইসলামে জঙ্গিবাদ নেই জিহাদ আছে। জিহাদকে জিহাদই বলা হোক। তারপর জিহাদ দিয়ে কি করে পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করা হবে তার জবাব দিয়ে যাবেন হে শান্তিবাদীরা…।