আই এস এর মাধ্যমে যুদ্ধবন্দীদের ধর্ষন

সম্প্রতি সিএনএন নিউজ চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলা কয়েকজন নারী যারা ইসলামী খিলাফত কায়েম করতে আইএসে যোগ দিয়ে সিরিয়া গমন করেছিল তারা দাবী করেছেন, আইএস যোদ্ধাদের মুসলমান বলেই তাদের মনে হয়নি! সিরিয়াতে আইএসের খিলাফতে কোন নারীই নিজেকে যৌনবস্তু ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারবে না বলে তারা উল্লেখ করেছে। আইএস যোদ্ধারা তাদের যৌনদাসীতে রূপান্তর করেছিল। তারা ভেবেছিল ইসলামী অনুশাসনে এই সব মুজাহিদরা জীবনযাপন করে। কিন্তু তাদের ভুল ভেঙ্গেছিল আইএস মুজাহাদিদের নিজের চোখে দেখে…।

আসলে ভুলটা কাদের, আইএসের নাকি সেখানে যোগ দেয়া নারীদের? প্রফেট মুহাম্মদের জিহাদই বা কেমন ছিল? সত্যি বলতে কি, টাইম মেশিনে চড়ে যদি ১৪০০ বছর পিছনে জিহাদের ময়দানে আজকের যুগের কোন মুসলমানকে নিয়ে যাওয়া যেতো তাহলে নির্ঘাৎ সে প্রফেট আর তার সাহাবীদেরকেই মুসলমান বলে স্বীকার করত না! তার আজন্ম জেনে আসা ইসলামের বিপরীত যখন সে দেখত মুসলমানরা কাফেরদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের ধনসম্পদ ও তাদের স্ত্রী কন্যাদের দখল করে নিচ্ছে এবং বন্দি পুরুষদের চোখের সামনেই তাদের স্ত্রী কন্যাদের সঙ্গে সঙ্গম করছে- সে বিশ্বাসই করতে পারত না এসব ইসলামে সম্পূর্ণ হালাল এবং আল্লার আইন!

কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো? সুরা নিসার ২৪ নাম্বার আয়াতটা কেন নাযিল হয়েছিল তাহলে সেটা সবার আগে জেনে নিন। আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদে গিয়ে বেশ কিছু নারীদের মুসলমানরা গণিমত হিসেবে লাভ করে। কিছু সাহাবী সেই নারীদের সঙ্গে সহবাস করতে দ্বিধাগ্রস্থ হলেন কারণ সেই নারীদের কাফের স্বামীরা ছিল তখনো জীবিত। এ কথা মুহাম্মদ জানার পর আয়াত নাযিল হয় সুরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত “এবং বিবাহিত নারীগণ তোমাদের জন্যে অবৈধ, তবে যারা তোমাদের দক্ষিণ হস্তের অধিকারে আছে তাদের ছাড়া” (সহি মুসলিম, বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৪৩২)।

একদম পরিস্কার ব্যাপারস্যাপার। অমুসলিম নারীরা মুসলিম যোদ্ধাদের জন্য হালাল। এর জন্য কি মুসলিম পুরুষরা তাদের বিয়ে করে নিয়েছিল? মোটেই না। যুদ্ধে জিতেই গণিমত হাতিয়ে নেয়ার জন্য তারা পাগল হয়ে উঠত। ক্ষুধার্ত্ব পশুর মত ঝাপিয়ে পড়ত বিজিত নারীদের উপর। বিষয়টা এতখানিই ভাইরাল হয়ে উঠেছিল যে স্বয়ং মুহাম্মদ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এদের এখনি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরে সমূহ বিপদ। কিন্তু গণিমত নিষিদ্ধ করলে যে তার দলে কেউ জিহাদে যোগ দিতে আসবে না সেটা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই উভয় কুলই রক্ষা করলেন তিনি। নিয়ম করে দিলেন, শত্রু দলের নারীদের মাসিক নিশ্চিত হবার পরই কেবল তাদেরকে মুসলমান যোদ্ধারা ভোগ করতে পারবে। অর্থ্যাৎ সেই নারীরা তাদের স্বামীদের হাতে গর্ভবতী কিনা সেটা আগে নিশ্চিত হতে হবে। একইভাবে মুহাম্মদ গণিমত তিনি ভাগভাটোয়ারা করার আগে কেউ তাতে হাত দেয়াও নিষিদ্ধ করলেন।

এখনো কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না? মানতে পারছেন না কিছুতে? যুদ্ধবন্দিনী নারীকে বিয়ে ছাড়াই সঙ্গম করা ইসলামে এতখানিই স্বাভাবিক যে প্রফেট মুহাম্মদ তার জামাতা হযরত আলীকে নিজে বাছাই করে একজন নারীকে ভোগ করতে দিলেন। এতে ঈর্ষান্বিত হয়েছিল একজন সাহাবী। মুহাম্মদ সেই সাহাবীকে ডেকে বললেন, আলীকে হিংসা করো না, আলীর এরচেয়ে আরো বেশিই প্রাপ্য…। কষ্ট করে হাদিসটি পাঠ করুন-

বুরাইদা কতৃক বর্ণিত, নবী আলীকে ‘খুমুস’ আনতে খালিদের নিকট পাঠালেন (যুদ্ধলব্ধ মালের নাম খুমুস)। আলীর উপর আমার খুব হিংসা হচ্ছিল, সে (খুমুসের ভাগ হিসেবে প্রাপ্ত একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসঙ্গমের পর) গোসল সেরে নিয়েছে। আমি খালিদকে বললাম, “তুমি এসব দেখ না”? নবীর কাছে পৌঁছলে বিষয়টি আমি তাকে জানালাম। তিনি বললেন, “বুরাইদা, আলীর উপর কি তোমার হিংসা হচ্ছে”? আমি বললাম – “হ্যাঁ, হচ্ছে”। তিনি বললেন, “তুমি অহেতুক ঈর্ষা করছ, কারণ খুমুসের যেটুকু ভাগ সে পেয়েছে তার চেয়ে আরও বেশী পাওয়ার যোগ্য সে” (সহি বুখারি, ভলিউম-৫, বুক নং-৫৯, হাদিস নং-৬৩৭)।

এখানেই শেষ নয় হযরত উমার তার ভাগে পড়া কাফের মেয়েটিকে তার প্রিয় পুত্র আবদুল্লাহকে দিয়ে দিয়েছিলেন! নবী জীবনীকার ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, বানু হাওয়াজিন গোত্রকে পরাজিত করে ছয় হাজার নারী ও শিশুকে আটক করেছিল মুসলমানরা। সেই আক্রমণের সময়ই উমারের ভাগ্যে জোটা সুন্দরী নারীটিকে উমার তার পুত্রকে দিয়ে দিয়েছিলেন। এখানে লজ্জাটজ্জার কোন বলাই নেই। আলী ও উসমান- এই দুই জামাতাকে নবী স্বয়ং নারী বাছাই করে দিয়েছিলেন। এসব দেখে শুনে কি মনে হয় উনারা মুসলমান ছিলেন? মানে আমাদের আজন্ম জানা ইসলামের আদলে কি তাদেরকে মনে হয় তারা ইসলাম সম্মত ছিলেন? যেমনটা আজকে আইএসকে দেখে আপনাদের সন্দেহ জাগে!

এখন কি ‘এসব সে যুগের যুদ্ধের নিয়ম ছিল’ বলে পার পাওয়া যাবে? কুরআনের সুরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত তো রহিত করা হয়নি। তাই তাত্ত্বিকভাবে এই আয়াত আজো কার্যকর! আর এ কারণেই তালেবান, আইএসের মত দলগুলো পৃথিবীকে মধ্যযুগের এক বর্বর আইনের আওতায় যুদ্ধবন্দিনীদের অবাধে ধর্ষণ করে যাচ্ছে যা জেনেভা কনভেনশনে অনুযায়ী মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। ভুক্তভোগী নারীদের কাছে যতই আইএস সদস্যরা লম্পট লোভীই হোক- তারা তো নিসার ২৪ নম্বর আয়াত হতেই তৈরি হয়েছে। কেমন করে তাই তাদের অস্বীকার করবেন?