একটা বাচ্চার নাম রাখতে বলা হলো আপনাকে, আপনি তার নাম রাখলেন একটা নদীর নাম কিংবা ফুলের নামে। এ থেকে আমরা মানুষ হিসেবে আপনার সম্পর্কে একটা ধারণা পাই। যে বাবা-মা তার সন্তানের নাম রাখেন জিহাদ, তাদের চাইতে নিশ্চিত করেই যারা সন্তানের নাম রাখবেন সংশপ্তক- তাদের চিন্তা বিশ্বাস রুচি অভিপ্রায় এই নামকরণের তফাতে কিছুটা হলেও ফুটে বের হবেই…।
আজান, রামাদান- এরকম নাম যিনি রাখতে পারেন- তাকে বোধহয় আমরা এখন আরো কিছু নির্দশন মিলিয়ে নিয়ে ভাল করে বুঝতে পারব…। ব্লগার কিলিং থেকে শুরু করে ভাস্কর্য ইস্যুতে তার ব্যক্তিগত অবস্থান এক্ষেত্রে আজান আর রামাদান নামের রহস্য বুঝতে আমাদের সাহায্য করে বৈকি!
রাজাকারের বাড়িতে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন ক্ষয় হয়নি তার কারণটাও ঐতিহাসিক।
একটা কথা স্পষ্ট করে বুঝতে হবে। পাকিস্তানের পক্ষে যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের নানা পার্টি দল থাকলেও আইডলোজি ছিল এক ও অভিন্ন। জামাত পাকিস্তানের বিরুদ্ধতা করলেও পরে পাকিস্তানকে মেনেই শুধু নেয়নি, গভীরভাবে ধারণও করেছিল। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেছে পাকিস্তানী আদর্শকে বাতিল করে নয়। পাকিস্তান তত্ত্ব আওয়ামী লীগের কাছে ভুল ছিল না। ক্ষমতা, অর্থনৈতিক কারণেই পশ্চিমের সঙ্গে থাকা না থাকার ব্যাপারটা তারা সিরিয়াসভাবে ভেবে দেখছিল। পাকিস্তান তত্ত্বে তাদের কোন আপত্তি ছিল না।
আসলে পুরো ব্যাপারটা জটিল করেছেন তাজউদ্দিন আহমেদ। তাজউদ্দিন পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। শেখ মুজিব ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের একনিষ্ট একজন কর্মী। তিনি বিশ্বাস করতেন মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র করতে হবে। তাজউদ্দিন তেমনটা বিশ্বাস করতেন না। ৭২ পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যতখানি প্রগতিশীলতা তার সবটুকুই তাজউদ্দিনের…।
তাজউদ্দিনের যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সেখানে গোলাম আজমের ব্যক্তিগত সচিবের কোনদিন স্থান হতো না। কারণ তাজউদ্দিনের চেতনা আদর্শগত ভাবেই তেলে জলে মিশ খেতো না। এ কারণেই দেশ স্বাধীন হবার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় রাজনীতি থেকে নির্বাসনে চলে যেতে হয়েছিল ইতিহাসের বিমাতা সূলভ আচরণের শিকার তাজউদ্দিন আহমেদকে।
আওয়ামী লীগের নিউক্লিয়াস হচ্ছে মুসলিম লীগ। তারা জান বাজি দিয়ে পাকিস্তানের জন্য লড়েছিল। তারপর পাকিস্তান আমলে জাতিগত বৈষম্যের শুরু হলে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর সে দায় আর থাকেনি। এখন আওয়ামী লীগ একটি ইসলামী দল। বাংলাদেশকে প্রকৃত ইসলামী দেশে রূপান্তরিত করতে যদি কোন পার্টি পারে সেটা আওয়ামী লীগ। এদেশের জনগণকে একটি ইসলামী চেতনায় বেড়ে উঠতে আওয়ামী লীগ শিক্ষা সংস্কৃতিগত যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে আগামীতে এদেশে প্রগতিশীল মানুষ বেড়ে উঠার কোন সুযোগই পাবে না। একটি ইসলামী ভাবধারার জনগনগোষ্ঠি গড়ে উঠবে যারা দেশটাকে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের দিকে প্রবলভাবে নিয়ে যাবে।