এটা বিস্ময়কর নবীজি মুহাম্মদ লাউ খেতে খুব পছন্দ করতেন! তিনি খেজুরের সঙ্গে এক ধরণের শসা মিশিয়েও খেতেন। সহি হাদিস থেকে জানা যায় তিনি বার্লি, খেজুর, ডুমুর, আঙ্গুর, মধু, তরমুজ, দুধ, মাশরুম, অলিভ অয়েল, ডালিম-বেদানা অধিক পরিমাণে পছন্দ করতেন। আমার জ্ঞান হবার পর থেকে এসব শুনে আসছি। প্রশ্নটা তখন থেকেই মাথাতে কাজ করত, মরুভূমিতে লাউ, ডুমুর, আঙ্গুর, তরমুজ, ডালিম-বেদানা কি করে উৎপন্ন হতো? নবীজি লাউ কুমড়ার তরকারি খেতে পছন্দ করতেন। এটা কি বিস্ময়কর নয় মরুভূমিতে এসব কি করে মিলত? বলাই বাহুল্য এসব প্রশ্ন করে কারুর কাছেই যৌক্তিক কোন উত্তর পাওয়া যেতো না। মাওলানা সাহেবদের কাছে এই প্রশ্ন করলে তারা বলতেন, তখন নবীজির জমানায় এসব সেখানে হতো। কথাটা হুজুরদের মনগড়া। যে মরুভূতিতে চাল ফেললে মুহূর্তে মুড়ি হয়ে যায় সেখানে বিজের অঙ্গুর হওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। এমনটা সম্ভব হলে সাহারাতে গম চাষ করে বাম্পার ফলন করা যেতো। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই নবীজির জমানায় এসব সেখানে ফলত- তবু একথা ধোপে টেকে না। কারণ নৃতাত্ত্বিক পরীক্ষা বলছে, মক্কা মদিনাতে এরকম কোন প্রাচীন রেকর্ডও নেই। তাহলে নবীজি এসব খাবার খেতেন কি করে? এসব প্রশ্ন ধরে তারপর যে বড় প্রশ্নটি সামনে চলে আসে, নবী মুহাম্মদ আসলে প্রকৃতপক্ষে কোন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন?
কাঁচা পেয়াজ আর রসূন খেতে মুহাম্মদ তার সাহাবীদের নিষেধ করতেন। এ ধরণের সবজি কোন এলাকাতে ফলে এটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আরো মাথায় রাখতে হবে কুরআনে আল্লাহ কোন এলাকার মানুষকে বেহেস্তে ফলফলাদির লোভ দেখাচ্ছেন। এমন কোন ফলের কথা কি কুরআনে বলা হয়েছে যা মুহাম্মদ বা তার অনুসারীরা আগে চিনত না? যেমন, সুরা আল-আনআমে বলা হয়েছে, ‘তিনিই সেই প্রভু যিনি সৃষ্টি করেছেন নানা রকমের বাগান গুল্মলতাবিশিষ্ট ও স্বীয় কাণ্ডে দণ্ডায়মান বৃক্ষসমূহ, আরও বিবিধ স্বাদের খেজুর ও ফসল। সৃষ্টি করেছেন যায়তুন ও আনার, যা পরস্পর সমস্বাদবিশিষ্ট এবং ভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট। তোমরা তার উৎপাদন খাও যখন ফল আসে’। (সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৪১)। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আমি জমিনে উত্পন্ন করেছি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, যায়তুন ও খেজুর বৃক্ষ’, (সূরা আবাসা, আয়াত: ২৭)। লক্ষ্য করুন, এই ফসল, ফল, শাক সবজির কোনটিই মুহাম্মদের সাহাবীদের কাছে অচেনা ছিলো না। কিন্তু তারা যদি সৌদি আরবের মক্কা নগরীর অধিবাসী হতো তাহলে এ ধরণের ফসল তাদের খাদ্য তালিকায় থাকার কোন রকমই সম্ভাবনায় থাকতে পারে না। মরুভূমির অধিবাসীদের পশুর মাংস আর দুধ ছাড়া খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র থাকাটা বিরাট কঠিন বাস্তবতা।
আমরা কি কল্পনা করতে পারি কোন মরুবাসী বৃক্ষ রোপন সম্পর্কে পজেটিভ ধারণা রাখতে পারে। মরুভূমির লোক কি করে তার অনুসারীদের বলবে তোমরা গাছ লাগাও। কিংবা অহেতুক গাছ কেটো না। মুহাম্মদ ফলের গাছ কাটা পছন্দ করতেন না। যদিও তিনি ইহুদীদের বিশাল খেজুর বাগান তার অনুসারীদের দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। ইহুদীরা তখন মুহাম্মদকে স্ববিরোধী বলেছিলো। যাই হোক, হাদিস থেকে জানি, আনাস বিন মালেক (রা) কর্তৃক বর্ণিত, নবী কারীম (সা) বলেছেন, ‘কিয়ামাত কায়েম হয়ে গেলেও তোমাদের কারো হাতে যদি কোন গাছের চারা থাকে এবং সে তা এর আগেই রোপন করতে সক্ষম হয়, তবে যেন তা রোপন করে ফেলে’। (আহমাদ/১২৯৮১, বুখারীর আদাব/৪৭৯, সহীহুল জামে’/১৪২৪)।
বিষয়টা কি আজগুবি লাগে না যে মরুভূতি কে গাছ লাগাতে যাবে? এই উপদেশ দিচ্ছেন মুহাম্মদ তাকে ঘিরে বসা তার অনুসারীদেরকে! তাই প্রশ্নটা আরো বেশি করে জোড়ালো হয়ে উঠে আসছে, মুহাম্মদ আসলে কোথাকার অধিবাসী ছিলেন? আমরা কি তাকে ভুলভাবে জেনে আসছি? সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট হয় হাদিস এবং কুরআনের বর্ণনা অনুসারে মুহাম্মদের সময়কালটা আরবের মক্কা-মদিনা নয়। গবেষকদের দাবী, মুহাম্মদ আসলে জর্ডানের অধিবাসী ছিলেন। জর্ডানের পেট্টা নগরিই হচ্ছে সেই সুফলা সজলা ফসলে ফলে ভরপুর হাদিস-কুরআন নাযিলের স্থান। সেখানেই ছিল কাবাঘর। সেখানেই কোথাও মুহাম্মদের সমাধি। সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা নয়…।