বন্ধু অলক ভট্টাচার্য আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, ভারত বাংলাদেশ ম্যাচে তিনি কাকে সমর্থন করবেন। অলক তার জীবনের অর্ধেকের বেশি কাটিয়েছেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। এই দেশের মাটিতে অলকের সাত পুরুষের বাস। এই মাটিই তার দেশ ছিল। ৯০ দশকে বাবরী মসজিদ ইস্যুতে অলক প্রাণ হাতে নিয়ে স্বপরিবারে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। আজ ২২ বছর হয়ে গেছে অলকের দেশ ‘ইন্ডিয়া’! একজন ‘ইন্ডিয়ান’ হয়ে অলক ভারত বাংলাদেশ ম্যাচে বাংলাদেশকে সমর্থন জানালে নিশ্চিত করেই ভারতীয় ‘দেশপ্রেমিকদের চোখে’ বিশ্বাসঘাতক হবে। কিন্তু অলক আজো তার ফেলে আসা দেশের জন্য গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তা তো মিথ্যে নয়। কিন্তু দেশপ্রেমের কাছে মানুষের এসব সত্য-মিথ্যাতে, চোখের জলে আর দীর্ঘশ্বাসে কিই বা আসে যায়!
অলককে বলেছি, আপনি ভারত করবেন দ্বিধাহীনভাবে। আমি ইংলেন্ড অস্ট্রেলিয়াতে সিটিজেন হওয়া বাংলাদেশীদেরও বলি তারা যেন ইংলেন্ড অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করে। দেশ মানে তো একটা রাজনৈতিক পরিচয়। এর বাইরে দেশ বলতে কিছু নেই। দেশ মানে হচ্ছে আপনি আমি যে স্থানে বাস করি, যে বর্তমান আমাদের আশ্রয় দেয়, নিরাপত্তা দেয়- সেটাই আমাদের দেশ…।
এক দেশপ্রেমী ফেইসবুক বন্ধু ক্রিকেট খেলায় পাগল হয়ে লিখেছে, ইংলেন্ডকে হারিয়ে প্রীতিলতা, সূর্যসেন হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে!… আজকাল কাউকে ক্রিকেট নিয়ে দুটো যৌক্তিক কথাও বলতে পারি না। ক্রিকেট নিয়ে সমালোচনা এখন ইসলাম আর পিএম সমালোচনার মতই ভয়াবহ অপরাধ। নইলে বলতাম, প্রীতিলতা, সূর্যসেনদের হত্যা প্রতিশোধ আপনি বরং খেলার মাঠে গিয়ে ইংলেন্ড খেলোয়ারদের উপর ছুরি-চাপাতী নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে নিন! কিংবা পাকিস্তানী খেলোয়ারকে হত্যা করে আমাদের গণহত্যার প্রতিশোধ নিন। আপনার নামে লোকে জয়ধ্বনি দিবে…। তবে তার আগে আমার বন্ধু অলককে একটা সমাধান দিয়ে যাবেন- সে কাকে সমর্থন করবে? আপনার জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমের কসম- উত্তর না দিয়ে যাবেন না!