হিটলার যার আদর্শ

হিটলার যার আদর্শ তিনি কবিতা লিখলে সেই কবিতা কি মানবতার জয়গান গাইবে? ব্যক্তিগত জীবনে লেখক-কবি-শিল্পীরা মদ্যপ্য, লম্পট, হিংসুটে, লোভী, অসৎ হতে পারেন। দস্তয়ভস্কি জুয়াড়ী না হলে কি আমরা “জুয়াড়ী”র মত অমন উপন্যাস পেতাম? তয়স্তলের কামুকতার কথা আমরা সবাই জানি। শিল্পী-সাহিত্যিকদের নেতিবাচক ব্যক্তিগত জীবনাচরণের অজস্র উদাহরণ দেয়া যাবে। কিন্তু এ্ই নেতিবাচকতা একান্তই ব্যক্তির নিজেকে নি:শেষ করে দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু তাদের কারুর জেনোসাইডে বিশ্বাস ছিল না। কোন খুনিকে তারা নিজেদের আদর্শ মানেননি।

মানবতার বাইরে গিয়ে শিল্পচর্চা হয় না। শিল্প কোনদিন নেতিবাচককে অবলম্বণ করে সৃষ্টি হয় না। শিল্পের সমাজের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা থাকতেই হবে- সেটা আমিও মানি না। সাহিত্য নীতিকথা নয়। সাহিত্যের কাজ শিক্ষকতা নয়। কিন্তু সবলের পক্ষ হয়ে দুর্বলের বিপক্ষে সাহিত্য-শিল্প কখনো কথা বলে না। ন্যাৎসিদের ইহুদী নিধন, হিরোশিমায় জাপানীদের উপর বোমাবর্ষণ, একাত্তরে পাক বাহিনী ও রাজাকার, আল বদরদের হত্যা-ধর্ষণ- এসবকে পক্ষ নিয়ে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিককে দিয়ে, দুনিয়ার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কবিকে দিয়ে- তাদের জীবনের সমস্ত সাহিত্য প্রতিভাকে বিলিয়ে দিয়েও রচনা করা যাবে না কোন “সাহিত্য”।

আবার দুর্বলের পক্ষ নিয়ে সবলকে তিরস্কার করাই শিল্পের লক্ষ নয়- শিল্পের কেবল নিজেকে “শিল্প” হয়ে উঠাই একমাত্র লক্ষ। এই স্বার্থপরতাই শিল্প-সাহিত্যের গৌরব! কিন্তু সাহিত্যের সমস্ত শর্তকে অটুট রেখেও আনা ফাঙ্ককে দোষী করে একটিও কবিতার জন্ম হবে না। আবার অ্যালেন গিন্সবার্গ যশোর রোডের বোমারু বিমানের তাড়া খেয়ে পালানো অসহায় মানুষের কথা লিখেছেন বলেই সেটা উৎকৃষ্ট কবিতা হয়ে উঠেনি। ওটা কবিতা হয়ে উঠেছে কাব্যগুণেই। মানে হচ্ছে মানুষের পক্ষে থাকাই শিল্প-সাহিত্যের প্রথম ও শেষ কথা কিন্তু মানদন্ড নয়! এখানেই সাহিত্যের নিষ্ঠুরতা।…

তাই পৃথিবীর ঘাতকরা কোনদিন শিল্পকে জন্ম দিতে পারে না। যারা অতীতে সুসাহিত্য সৃষ্টি করেছেন কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিক্রিয়াশীলদের দলে নাম লিখিয়েছেন-তাদের সাহিত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটেছিল। তারা কেবলই শিল্পের নামে যাবর কেটে গেছেন…। রাজাকার কি কখনো মহৎ কবি হতে পারে? গোলাম আযম, কাদের মোল্লাদের ভক্তরা কবিতা সৃষ্টি করতে পারে- এটা বিশ্বাস করতে হলে জগতের এযাবৎকালের সমস্ত সাহিত্যকে আগে মাটি চাপা দিয়ে নতুন করে সাহিত্য সৃষ্টি করতে হবে।