মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ সেজে কৌশলে ইসলামী রাষ্ট্রর গান গাওয়া অনেক সুবিধাজনক। আওয়ামী লীগের প্রশংসা করে দু-চার কথা বলে শেখ হাসিনাকে হযরত ওমরের মত দেশ চালানোর আহবান যে রাজনীতির মধ্যে ইসলামী ফ্লেভার কৌশলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে সেটা খুব সচেতন না হলে বুঝা কিন্তু খুব মুশকিল। নির্লজ্জ পাকিস্তানী প্রেমিক সেজে যে হালে পানি পাবে না এটা তারা বুঝে গেছে। কাজেই পাকিস্তানের মায়া ছেড়ে “বাংলাদেশকে” মেনে নিয়ে যা করার করতে হবে।
হেফাজত মতিঝিলে এসেছিল জাতীয় পতাকা উড়িয়ে উড়িয়ে। হুজুরদের মাথায় জাতীয় পতাকা পট্টির মত বেঁধে ইসলামী রাষ্ট্রর দাবী দশ বছর আগেও দেখা যেতো না। লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে খেলাফতের ডাক আগামীতে যখন রাজপথে দেখবেন তখন তাকে পাকিস্তান-আফগানিস্তানী ভূত বলার মত মানুষ খুব একটা থাকবে না। “আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান” এই শ্লোগান যে পাবলিক গ্রহণ করবে না সেটা প্রমাণ হয়ে যাবার পর থিঙ্কট্যাঙ্ক বুঝে নিয়েছে অহেতুক “বাংলাদেশকে” বাদ দিয়ে কাজটাকে কঠিন করার দরকার কি?
যেভাবেই হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে যে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কনসেপ্ট ছিল সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে জনগণকে ব্যাপকভাবে ভারত বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে তুলে দিতে হবে। হিন্দুদের এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে হবে যাতে তারা এখানে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের চিন্তা না করে। সবার যেন একটা পরিকল্পনা থাকে সুবিধামত সময়ে দেশ ছাড়ার। আদিবাসীদেরও বেলাও একই পন্থার বিকল্প নেই। বাকী জনগণকে বুঝাতে হবে ভারত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিয়েছে। অলরেডি তারা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ঢুকে সাতক্ষিরায় অভিযান চালিয়েছে। এই ধরনের একটা নিউজ তৈরি করে দ্রুত প্রচার করতে পারলে হালে পানি পাওয়া যাবে। কারণ সর্বদা ভারত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিতে প্রস্তুত।
আমরা সব কিছু হতে পারি কিন্তু অসাম্প্রদায়িক হতে পারি না। কারণ ঐ ভারত। ভারত অসাম্প্রদায়িক না হলে আমরা কেন শুধু শুধু অসাম্প্রদায়িক হতে যাবো? কাস্মিরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে মুসলমান নিধন আর সাতক্ষিরায় হিন্দুদের উপর হামলা-আক্রমন শোধবোধ হয়ে গেছে। বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার সময়ও আমরা শোধবোধ করে দিয়েছিলাম।
আমাদের আছে একটা বিশাল ভারত বিরোধী জনগণ। যারা ক্রিকেটে শচীনের বেশি রান করাটাকেও মিডিয়ার একটা ষড়যন্ত্র বলে সন্দেহ করে। প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ভারত তিন দিক দিয়ে চেপে ধরে গলা টিপে মেরে ফেলতে চায়। এরজন্য চাই নিজেদের সান্ত্রততা। জয় বাংলা লেখো আর বাংলাদেশ জিন্দাবাদ লেখো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখতে হবে সবার উপরে। এটা আমাদের সংখ্যাগরিষ্টের জোড় প্রমাণ করে। আশেপাশের সবাইকে বুঝাতে হবে আমরা ইসলামী দেশ। আমরা অনেক আগেই হালাল সাবান ব্যবহার করা শুরু করেছিলাম। আমরা রমজান মাসে আমাদের টিভি মিডিয়াতে মহিলাদের ঘোমটা পড়ানোর বাধ্যতামূলক করেছি। মুসলিম দেশগুলো (তার মধ্যে পাকিস্তান আছে) আমাদের ভ্রাত্রিপ্রতিম দেশ।
একাত্তরে যে দুটি দেশ অস্ত্রসস্ত্রসহ কুটনৈতিক ও অন্যান্য দিক দিয়ে আমাদের স্বাধীন হতে সহায়ত করেছে দুটাই কাফের রাষ্ট্র। কাজেই তারা কিছুতেই আমাদের ভ্রাত্রিপ্রতিম রাষ্ট্রর লিস্টে নাম লেখাতে পারে না। ভারত আমাদের প্রতিবেশী ভৌগলিক অর্থে। কিন্তু কোন মুসলমান যত যা-ই কারণ থাক কিছুতে একটা কাফের রাষ্ট্রকে নিছক খেলার জন্যও সমর্থন করতে পারে না। যে জন্য ঢাকার মাঠে আমরা ভারত-পাকিস্তানের খেলার সময় সবচেয়ে বড় পাকি পতাকা নিয়ে সারা গ্যালারী দৌড়ে বেড়িয়েছি তাদের সমর্থন জুগাতে। আসন্ন এশিয়া কাপ ও টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টেও এই দুই মুসলমান ও কাফের দলের ক্রিকেট ম্যাচে আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন করে যাবো। কাদের মোল্লাকে সমর্থন জানোনোর বিষয়টাকে খেলার মধ্যে আমরা বিবেচণায় রাখবো না।
কারণ আমার সব সময় এসব ক্ষেত্রে ”খেলার মধ্যে রাজনীতির না আনার” নীতি অবলম্বণ করি। যদিও ফালানীকে হত্যার জন্য ভারতকে আমাদের অসমর্থনের ঈমানী জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। ফালানী মারা যাওয়াতে আমরা ভীষণভাবে মর্মাহত। কারণ ফালানী শেষ পর্যন্ত পেটের দায়ে ঢাকায় এসে আমাদের বাসা-বাড়িতে কাজে লাগতো। তাতে আমাদের বুয়া সমস্যার একটা সমাধান হতো। নতুবা পাচার হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আমীরদের মনোরঞ্জন বাবদ যে অর্থ পেতো তা দেশে পাঠিয়ে বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে দিতো। একান্তই তা না হলে গামেন্টেস ছিল, সেখানে কপাল গুণে রানা প্লাজা ট্রেজিডি বরণ না করলে মজুরীতে যতই বৈষম্যই থাক বস্তিতে ঘর ভাড়া করে বাঁচতে পারতো। আমরা অবশ্য তখন তাকে ”আমাদের বোন” জাতীয় নাগরিক রোমান্টিক দেশপ্রেমের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতাম…।
আমরা আসলের সঠিক পথেই আছি। আমাদের রোজগার যে পথেই আসুক না কেন, মোছ ছেঁটে ফেলে দিয়ে সেটা হালাল করে খাই। দোকানে গিয়ে বিদেশী প্রোডাক্টস কিনতে গেলে “হালাল” লেখাটা না দেখা পর্যন্ত আমাদের মনের স্বস্তি আসে না। আমরা কোনদিনই সেক্যুলারিজমের বিশ্বাস রাখবো না কারণ আমাদের ইসলাম কাফের-মুশরিকদের যতটুকু অধিকার দিয়েছে ততটুকুই যথেষ্ট। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারি না কারণ ইসলামকে আমরা অন্য ধর্মের উপরে রাখতে বাধ্য। এসব ঠিক রেখে বাকী সব মেনে নিতে আমাদের কোন অসুবিধা নাই। বঙ্গবন্ধু, ৭ই মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, রাজাকার-আল বদরদের প্রতি ঘৃণা, লাল সবুজ পতাকাকে ভালবাসা- মন্দ কি? “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” কনসেপ্টটাই পাল্টে দিতে হবে কালে কালে…।