জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কি তার নিজের দেশের আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগার পরও নিস্পৃহ থেকেছেন? তার কোন মন্ত্রী ‘মালাউনরা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করেছে’ এরকম কিছু বলেও বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় থেকে গেছে? ম্যার্কেলের পারিবারিক সদস্যরা সংখ্যালঘু সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় পরিচয়ের জোরে? জার্মানিতে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় গত ৪৬ বছরে ২৮ শতাংশ থেকে ৭-৮ শতাংশে নেমে এসেছে? ম্যার্কেল কখনো বলেছে সেক্যুলার আর মোল্লারা লাঠালাঠি করে মাথা ফাটাক হাসপাতালের খরচ আমরা দিবো? ম্যার্কেল কি তার দেশের ধর্মীয় নেতাদের দাবীর মুখে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িক করে তুলেছেন? দেশের প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তা, ভিন্নমতালম্বি, নাস্তিকদের জীবনের নিরাপত্তার দায় অস্বীকার করেছেন? আমার জানা মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উত্তর জার্মানিতে এসবের কোন কিছুই ঘটেনি। বরং এর বিপরীত পেক্ষাপটেই ম্যার্কেল তার দেশে দশ লক্ষের উপরে মধ্যপাচ্যের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। এইসব শরণার্থীরা নানা দেশের ও জাতির হলেও ধর্মীয় পরিচয়ে সকলেই মুসলমান। কাজেই ম্যার্কেলের ব্যক্তিগত কোন ধর্মীয় টান, সম্প্রদায়প্রীতির কোন প্রশ্নই এখানে আসে না। জার্মানিরা বার্ডার বা নদীর পাড়ে এসে ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরণার্থীদের খাবার হাতে, ‘জার্মানিতে স্বাগতম’ লেখা প্লেকার্ড হাতে এই ভিনদেশী শরণার্থীদের অভ্যর্থনা জানিয়েছে। কাজেই পৃথিবীর কোন শান্তির পদক এখন পর্যন্ত ম্যার্কেল এবং তার দেশের জনগণই ডিজার্ভ করে। নিজের দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব বিপন্ন করে এই পদক লাভের আশা করা লজ্জ্বার, হীনতার…।
২.
একটা লেখা পড়লাম। শিরোনাম ‘বুদ্ধ বেঁচে থাকলে লজ্জায়-ঘৃণায় আত্মহত্যা করতেন’! কলাম লেখকের নাম চিররঞ্জন সরকার। প্রকাশ করেছে অনলাইনের জনপ্রিয় পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন। চিররঞ্জন সরকার লিখেছে, ‘সেই কবে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীকে শান্তির বাণী শুনিয়েছিলেন! অথচ মিয়ানমারের বৌদ্ধরা তাকে লজ্জা ছাড়া আর কিছু দিতে পারল না! ধ্যানস্থ এই মানুষটি বেঁচে থাকলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর সংঘটিত মিয়ানমারের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বর্বরতা দেখলে লজ্জায়-ঘৃণায় নিশ্চিত আত্মহত্যা করতেন’!
শুধু মডারেট মুসলমানই নয়, মডারেট মুসলমানদের ভাষায় ‘ভাল হিন্দুরাও’ সব সময় বলে ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। আইএস তালেবান ইসলামের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে জঙ্গি বানাচ্ছে। ধরা যাক আমাদের আলোচ্য এই কলামিস্ট চিররঞ্জন সরকার আইএস তালেবান আনসারুল্লাহ কিংবা সৌদি আরবের ইয়েমেন আক্রমনের দুঃখে শোকে মুহ্যমান হয়ে শিনোনাম লিখত- হযরত মুহাম্মদ বেঁচে থাকলে লজ্জ্বায়-ঘৃণায় আত্মহত্যা করতেন’- তারপর সবচেয়ে শান্তশিষ্ট নবীপ্রেমি মুসলমান তার নবী অবমাননার দায়ে তার কল্লা চাইত নাকি ইন্ডিয়ার বর্ডার দেখিয়ে দিতো কমবেশি আমরা সবাই তা ভাল করে জানি।
যারা দিনরাত ‘সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই’ বলেন তারা আজ কেন বার্মিজদের ধর্মীয় পরিচয় সামনে টেনে আনছেন? আমেরিকা জাপানের উপর আনবিক বোমা ফেলেছিলো- এটাকে কি খ্রিস্টানরা বৌদ্ধদের উপর আননিক বোমা ফেলেছিলো বলা সম্ভব? এক পকেটমারের নাম আবদুল গণি। এখন যদি কেউ বলে ছিঃ তোরা না মুসলমান, তোদের নবী কি তোদের এসব করতে শিখিয়েছে- তাহলে যেরকম উদ্ভট হবে একইভাবে আবদুল গণি নামের কোন লোক যদি ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য কোন খুন সন্ত্রাস চালায় তাহলে অতি অবশ্যই আবদুল গণির ধর্মটি আলোচনায় চলে আসবে। দেখতে হবে গণির ধর্ম কি আসলেই এইসব অপকর্ম করতে বলেছে কিনা। যদি দেখা যায় গণির ধর্ম এইসব অপকর্ম করতে অনুমতি দিয়েছে তাহলে তাকে এবং তার ধর্মকে দোষী বলাই যুক্তিযুক্ত। যদি দেখা যায় গণির ধর্ম বা ধর্মগুরু এরকম কিছু করতে নির্দেশ দেননি- তাহলে যে কেউ বলতেই পারে- গণির অবতার বা নবী বেঁচে থাকলে আজকে তার অনুসারীদের কর্মে লজ্জ্বায় আত্মহত্যা করতেন। বার্মিজরা একটি জাতি। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠই বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। মিয়ানমার কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ছাড়া অন্যান্য জাতির মুসলিম ধর্মালম্বীরা মিয়ানমারে নাগরিক এবং তারা কখনই রাষ্ট্রের দ্বারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার নয়। এসব জানার পরও কেন দায়িত্ব-জ্ঞান সম্পন্ন লোকজন ‘বৌদ্ধ-মুসলমান’ দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছেন? টিভিতে দেখেছি মুন্নি সাহা কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন করছেন না বরং তাদের দিয়ে নিজের মত উত্তর বলিয়ে নিচ্ছেন। মু্ন্নি সাহা প্রশ্ন করেন- আপনারা মুসলমান বলেই অত্যাচার করে তাই না?
৩.
প্রধান বিচারপতিকে আওয়ামী লীগ নেতারা শ্মরণ করিয়ে দিয়েছিলো তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে এত বড় পদ পেয়েছেন অথচ তার কোন কৃতজ্ঞতা বোধ নেই। হিন্দু নেতারাও বিচারপতিকে নিকমহামারী বলতে দ্বিধা করেনি। এদেশের মাইনরিটিদের সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠদের খুশি করে চলতে হবে। সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমানও তা না হলে চটে যেতে পারে। তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা আহত হতে পারে। ভুলেও বলা যাবে না এদেশে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় পীড়নে আছে। বরং বলতে হবে এদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য হচ্ছে হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই হয়ে বসবাস করা। দেশের গুটিকয় স্বাধীনতা বিরোধীরাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে।… এসব বলে গত ৪৬ বছরের ইতিহাস ঢেকে রাখাই একজন ‘ভাল হিন্দুর’ দায়িত্ব। একজন গৃহপালিত মাইনরিটির কর্তব্য…।