জেরুজালেম

ইরানের আয়াতুল্লাহ আল-খোমেনি মুসলমানদের প্রতি জেরুজালেম দখলের জন্য লড়াই করে যেতে আহ্বান জানিয়ে আসছেন বহুদিন ধরেই। সারা দুনিয়ার মুসলমানই মনে করে ইহুদীরা সেখানে অবৈধ। তাদের কোন অধিকার নেই সেখানে বসবাস করার। অথচ কুরআনের সুরা মায়দাতে বর্তমান জেরুজালেমেই ইহুদীদের বসতি স্থাপন আল্লার নির্দেশে হয়েছিলো বলা হয়েছে। কুরআনে আছে, হে আমার সম্প্রদায়, পবিত্র ভুমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং পেছন দিকে প্রত্যাবর্তন করো না। অন্যথায় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে (সূরা মায়দা, ৫:২১:)। কুরআনের এতবড় প্রমাণ থাকার পরও মুসলমানরা কোন মুখে ইহুদীদের মধ্যপাচ্যে অবৈধ বলে দাবী করে?

ইহুদীদের জিহোবার কথিত এই পবিত্র ভূমিতে সেসময় যে স্থানীয়রা বসবাস করত তাদেরকে মুসা নবীর দলবল উচ্ছেদ করেই নিজেদের দেশ বানিয়েছিলো। তবে তারা অবশ্যই এই স্থানে মুসলমানদের চেয়ে হাজার বছর আগে থেকে বসবাস করছে। মদিনার মুর্তি পুজারীরা যারা পরে মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেছিলো তারা ক্রিট দ্বীপ থেকে এখানে বহিরাগত হিসেবে এসেছিলো যখন ইহুদীরা এখানে ৩ হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে। তারপর নবী মুহাম্মদের হাতে ইহুদীদের অনেক গোত্র এ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বনু কুরাইজা ইহুদীরা গণহত্যার শিকার হয়েছিলো। ইতিহাসে দেখা যায় এই স্থান থেকে ইহুদীরা বার বার বিতারিত হয়েছিলো। ব্যাবিলনের রাজা, পারস্যের সম্রাট, রোম সম্রাট থেকে হযরত উমারের খিলাফত কালে এখানে হামলা চালিয়ে ইহুদীদের উচ্ছেদ করা হয়েছিলো। কিন্তু বার বার ইহুদীরা তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান জেনে এখানের দাবী ছাড়েনি।

ফিলিস্তিন সমস্যা মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়। কিন্তু এটাকে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সমস্যা দেখিয়ে ধোঁকা দিতে তারা পছন্দ করে। খোমনি জেরুজালেম দখলকে সারা বিশ্বের মুসলমানদের দায়িত্ব বলে দাবী করেছেন মূলত হাদিস থেকে। হাদিসে আছে, ‘যখন কালো পতাকাগুলো পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে বের হবে, তখন কোন বস্তু তাদেরকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। এমনকি এই পতাকাকে ইলিয়ায় (বাইতুল মুকাদ্দাসে) উত্তোলন করা হবে (খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে)।[সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৮৭৬০]। এই হাদিস পরিস্কার রক্তক্ষয়ী এক চিরস্থানীয় সংঘর্ষের মদদ দিয়ে চলেছে। এসব হাদিসের ভিত্তিতেই হামাস তাদের জিহাদী কায়দায় স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র দাবী করছে যার রাজধানী হিসেবে তারা জেরুজালেমকে স্বপ্ন দেখে। সুরা মায়দাতে এ স্থান ইহুদীদের দান করে দেয়ার কথা বলে ফের সেটা দখলের হাদিস মুসলমানদের ধর্মীয়ভাবে অপাঙেতয় করেছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার চেয়েও খারাপ কথা এখানে ধর্মীয়ভাবে চিরস্থায়ী রক্তপাতের পরিস্কার উশকানি বর্তমান…।