দূর্গা পূজা ও মহররম

দূর্গাপুজার ভাসান আর মহরম একই দিনে। কোলকাতার মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকার তাই মহরমের দিন ভাসান বন্ধ করেছিলো। এর উদ্দেশ্য ছিলো নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। দু্ই সম্প্রদায়ের মানুষ একই দিনে যার যার ধর্মীয় জোশে রাস্তায় নামলে লাঠালাঠি লেগে যেতে পারে। এই যুক্তিতে মমতা মহরমের দিন ভাসান বন্ধ করেছিলো। যদি মমতা উল্টোটা করত, মানে মহরমের তাজিয়া মিছিলই ভাসানের দিন বাতিল করে দিতো? নিঃসন্দেহে গোটা উপমহাদেশে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ আচরণের জন্য পশ্চিম বাংলার রাজ্য সরকারকে দুষত। এখন যেমন ‘মুসলিম তোষনের’ জন্য মমতাকে দুষছে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

দুটোই কিন্তু সত্যি। এরকম সিদ্ধান্ত নিলে হয় আপনি সাম্প্রদায়িক আচরণ করবেন নয়ত বিশেষ কোন সম্প্রদায়কে অন্যায় তোষণ করবেন। একেই বলে খুঁচিয়ে সাম্প্রদায়িক ঘাকে কাঁচা করা। সত্যিকারের সেক্যুলার রাষ্ট্র এক্ষত্রে সাফ জনগণকে এটাই শিক্ষা দিবে উৎসব করতে গিয়ে নিজেদের সামাল দিতে না পারলে রাষ্ট্রের আইন কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রের কাজ সরকারের। কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের অধিকার কেড়ে নিয়ে সেটা করতে যাওয়াই রাষ্ট্র নিজে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ডেকে আনা।

বাংলাদেশে রমজান মাসে দশমী পড়েছিলো যখন তখন হিন্দুদের দশমী রাত দশটায় পিছিয়ে দিয়েছিলো। তারাবী নামাজ, রমজানের গাম্ভির্য ইত্যাদির রক্ষার্থে রাত দশটায় শব্দটব্দ না করে চোরের মত দশমী করতে প্রশাসনের সেই নির্দেশ এদেশের হিন্দু মন ছোট করে দিয়েছিলো। এবার নাকি পুজার মেলার অনুমতিও নিরাপত্তার অজুহাতে প্রশাসন বাতিল করে দিয়েছে। মমতা যেখানে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের পুরোটা তার পাতে নেয়ার জন্য ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক তোষণ নীতি গ্রহণ করতে পিছ পা হয়নি তেমনি বাংলাদেশ সরকার এসব ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে মুসলিম বান্ধব ইসলাম প্রেমি সাজতে সংখ্যালঘুদের পিষনে রত হয়। আমার নিজের মনে হয় দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যখন একইদিনে মহরম আর ভাসান করতে রাস্তায় নামবে তখন তারা নিজেরাই একটা সহাবস্থান মেনে মিলেমিশে যার যার মত ধর্মীয় উৎসব করতে পারবে- কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু তাদের মধ্যে খুচিয়ে সাম্প্রদায়িক দুষিত ঘা নতুন করে চুলকিয়ে রক্তাক্ত করার লোকের অভাব নেই।

ক্ষমতার লোভে মানুষের মনে এই বিষকে নতুন লেবেলে ঢালা হচ্ছে। ভাসান মহরম একই দিনে চলবে- এটা ঠিক করে দিয়েছে আদালত। কিন্তু এরিমধ্যে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এই ইস্যুতে কি অনেকখানি দূরে সরে যায়নি? এমনিতেই মানুষ যেখানে ধর্মের নামে একে অপরকে ঘৃণা করে সেখানে রাজনীতিবিদরা সেই দুরত্ব আর ঘৃণাকে আরো বাড়িয়ে দিতে সদা তৎপর থাকে।

মহরমে বোমা হামলা হয়। পাকিস্তানে শিয়া মুসলমানদের তাজিয়া মিছিলে সুন্নীরা বোমা মেরে এক-দেড়শো মানুষ মুহূর্তের মধ্যে শেষ করে ফেলে। বাংলাদেশেও মহরমে সুন্নী জিহাদী দলের বোমা হামলায় হতাহতের ঘটা ঘটেছে। এ থেকে প্রমাণ মেলে একটা দেশ থেকে সমন্ত অমুসলিমদের বের করে দিয়েও মুসলমানরা নিজেরা শান্তিতে থাকতে পারবে না।

তারা নিজেরাই একে অপরের উপর হামলা চালিয়ে শেষ করে দিবে। মহরম শিয়াদের অনুষ্ঠান। শিয়া সুন্নী ইসলামের গৃহযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিভেদ যা আজো বর্তমান। মুসলমানদের দুর্ভাগ্য এটাই যে তাদের জন্য ভাসান বন্ধ করে দিলেও মহরমের অনুষ্ঠানে আরেকদল মুসলমানই ওঁত পেতে থাকে বোমা মারতে! তাদের জন্য আমার দুঃখই লাগে…।